কী বোঝাতে চাইলেন পিটার হাস


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 20-03-2024

কী বোঝাতে চাইলেন পিটার হাস

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের লেখা একটি কলাম নিয়ে তোলপাড় বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে তার এই লেখা প্রকাশের পর থেকে রাজনৈতিক মহলে বিএনপিসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের মন্তব্য ও বক্তব্য-বিবৃতি জনমনে নানান ধরনের সন্দেহের পাশাপাশি উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। 

কি বললেন পিটার হাস

সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক প্রকাশিত কলামে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার অভিমত প্রকাশ করেছেন। দেখা যাক তিনি সে-ই কলামে কি লিখেছেন? তিনি তার কলামের এক জায়গায় লিখেছেন ‘২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছিল, যা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করবে। কিন্তু তা ঘটেনি।’

আবার এক জায়গায় লিখেছেন ‘যুক্তরাষ্ট্র এখনো বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্বত্র গণতন্ত্রের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে। সহজ করে বলতে গেলে, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষের কল্যাণে গণতন্ত্র হলো স্থায়ী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম উপায়। 

বললেন সংলাপের কথা

পিটার হাস তার কলামে অপর জায়গায় বলেছেন, ‘আমরা সাহসী নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকারকর্মীদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব। যেসব গণমাধ্যমকর্মী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক দমন ও হয়রানির শিকার হন, তা অবসানের আহ্বান আমরা অব্যাহত রাখব। বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতা যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারে আমরা চাপ অব্যাহত রাখব। আমরা আরও উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের পথকে সুগম করতে অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানানো অব্যাহত রাখব।’

কী বোঝাতে চাইলেন পিটার হাস?

রাজনৈতিক অঙ্গনে নিরব নিথর অবস্থায় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এই কলাম বিশ্লেষকরা ভিন্নভাবে দেখছেন। কারণ তিনি তার কলামের শুরুতে একটি ভবিষ্যতের ইঙ্গিত করেছেন। দেখা যাক কি সে-ই ইঙ্গিতটি। তিনি কলামটি শুরুই করেছেন এভাবে, ‘আমার দেশের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একবার বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এটা এক দিন এক দিন করে আসে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তৃতীয় বছর শুরুর সময়ে এ কথাকে আমার সত্যি বলে মনে হয়। প্রতিদিন এই দেশের সম্ভাবনা, জনগণের শক্তি ও সহনশীলতা এবং এর প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ আমাকে মুগ্ধ করে। যেমনটা আমি গত বছর বলেছিলাম, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে..।’ প্রশ্ন হচ্ছে ‘ভবিষ্যতের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এটা এক দিন এক দিন করে আসে।’ এতে তিনি কি বোঝাতে চাইলেন? কলামের এদিকটি নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বিশ্লেষকদের। পিটার হাস কি বোঝাতে চাইলেন তারা যেভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন সে-টি ভবিষ্যতে আসছে? আবার আরেক জায়গায় বলেছেন, ‘আমরা সাহসী নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকারকর্মীদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব। যেসব গণমাধ্যমকর্মী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক দমন ও হয়রানির শিকার হন, তা অবসানের আহ্বান আমরা অব্যাহত রাখব। বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতা যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারে আমরা চাপ অব্যাহত রাখব..।’ এতে করে কি বোঝাতে চাইলেন পিটার হাস? কারো কারো মতে, পিটার হাসের এমন কলামে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেনো একটি সুষ্ঠু অবাধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় যে ব্যাপারে তাদের নেতৃত্বে পশ্চিমাদের যে চাপ দেয়া হয়েছিল ভব্যিতেও তা অব্যাহত থাকবে? সেটা কি মধ্যবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে? এমন কলামের আড়লে কি এই ধরনের অভিপ্রায়ই কি লুকিয়ে আছে?

অন্যরা কে কী বললো?

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের লেখা কলাম নিয়ে সরাসরি তেমন কেউ কিছু বলেনি বা বলতে দেখা যাচ্ছেও না। তবে এমন ধরনের কলাম প্রকাশের পর ভারতের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সহযোগিতায় আমরা এ দেশ অল্প সময়ের মধ্যে স্বাধীন করতে পেরেছি। আজ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেও আমরা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করছি। বিষয়টি নিয়ে এখন নানান ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের লেখা প্রকাশের পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এক বক্তব্যে বলা হয় ’সরকারের পতন ঘটানো এবং দেশকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া সম্ভব নয়।’ প্রশ্ন হচ্ছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল ও তার সমমনাদের দু-একটা ইফতার পার্টিতেই কি এখন সরকারের ভিত নড়ে যাবে? উৎখাত হয়ে যাবে? তা না হলে কেমন করে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন মন্তব্য করা হয়- এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কিন্ত এমনই পরিস্থিতির মধ্যে জনগণের সমর্থন নিয়ে অল্পসময়ের মধ্যে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ- যা বেশ গুরুত্ব বহন করে। 

যে কারণে পিটার হাস গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমাদের মন্তব্য মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’সহ সমমনারা যেমন গুরুত্ব দেয়, তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মনে করে। একারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পিটার হাসের লেখা সাম্প্রতিক কলামটি সকলকে নাড়া দিয়েছে। তিনিই যে শুধু আন্দোলনের মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র কাছেই গুরুত্বপূর্ণই তা কিন্তু না। সরকারের শীর্ষমহলেও তার প্রতি রযেছে তীক্ষè নজর। দেখা গেছে, সাত জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনটির পর পিটার হাসের একটি সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানকে অনেক বড়ো গলায় প্রচার করতে গিয়ে বলা হয়েছি ঠিক এভাবে। বলা হয়েছিল রাজনৈতিক মাঠে প্রধান বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে যে, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন’ এখন কাকে নিয়ে বিএনপি খেলবে, সেই প্রশ্ন করেছেন তিনি। আবার অন্যদিকে শুধু দেশেই না আমেরিকার জন্যও যে এই অঞ্চলে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ তা ওই দেশটির শীর্ষ থেকেও জানানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে যখন বাংলাদেশে আলোচনা তুঙ্গে তখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে আসে এই রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গুরুত্বটি। এক প্রশ্নের জবাবে উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের প্রশংসা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র সাফ জানিয়ে দেন একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে ঢাকায় দূতাবাসে আমাদের দারুণ একটি দল রয়েছে। এই রাষ্ট্রদূত শুধু ঢাকায় নয়, আরও বৃহত্তর অঞ্চলে তিনি কাজ করে থাকেন।

শেষ কথা

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারো সরব হয়ে উঠেছে। তবে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র আন্দোলন বা বড়ো ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই। একজন কূটনীতিক আর আরেকজন রাজনীতিকের মন্তব্যে তোলপাড় বয়ে যাচ্ছে পুরো বাজনৈতিক অঙ্গন। রাজনৈতিক পিটার হাসের কলাম নিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। কেউ কেউ পিটার হাসের লেখায় দুরভিসন্ধি হিসাবে দেখে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, নিজ দেশের স্বার্থই এসব কথা বলছেন পিটার হাস। তবে তা এই কলাম লেখা নিয়ে জল্পনা কল্পনার যেমন শেষ নেই তেমনি আবারো দেখা দিয়ে কি হতে যাচ্ছে বা কি হবে? রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুমোট না ভ্যাপসা। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন পরিস্থিতি কারো কারো মতে ’ছাই চাপা আগুনের মতো’।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)