রমজানে মুসলিম বন্দিকে সঠিকভাবে খাবার সরবরাহ না করায় মামলা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 03-04-2024

রমজানে মুসলিম বন্দিকে সঠিকভাবে খাবার সরবরাহ না করায় মামলা

মিশিগান স্টেটের জ্যাকসন কাউন্টি জেলে মুসলিম কয়েদিকে রমজানের খাবার সঠিকভাবে সময়মতো সরবরাহ না করার অভিযোগে মুসলিম কয়েদি মারভিন ওয়েন্স কাউন্টি শেরিফের কার্যালয়ের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। মুসলিম নাগরিক অধিকার এবং অ্যাডভোকেসি সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস মিশিগান চ্যাপ্টার বাদী মারভিন ওয়েন্সের পক্ষ থেকে ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার মিশিগানের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা দায়ের করেন। মামলায় জ্যাকসন কাউন্টি শেরিফ গ্যারি শুয়েট, ক্যাপ্টেন অ্যান্টনি স্টুয়ার্ট, লেফটেন্যান্ট মাইক কোবার্ন এবং টিগস ক্যান্টিন সার্ভিসেস ইনকরপোরেটেডকে বিবাদী করা হয়।

কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস মিশিগান চ্যাপ্টার অভিযোগ করেছে যে, কাউন্টি রমজানের রোজা রাখার সময় এবং কাউন্টি জেলে হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারভিন ওয়েন্সকে সময়মতো পুষ্টিকর এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরিযুক্ত খাবার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পবিত্র রমজান মাস ১০ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। রমজানে মুসলমানরা প্রতিদিন ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত না খেয়ে থাকেন। জ্যাকসন কাউন্টি জেলের রোজাদার মুসলমানদের থাকার জন্য একটি নীতি রয়েছে, তবে, তাদের নীতির প্রয়োগে ত্রুটি রয়েছে যার ফলশ্রুতিতে ওয়েন্স তার রোজার দিনগুলোতে খাবার পাননি বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। জ্যাকসন কাউন্টি জেলের প্রদত্ত খাদ্য ছিল ওয়েন্সের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি ক্ষুধার্ত সময়ের খাদ্য। এটি তার ওপর আরোপ করা হয়েছে। কারণ তিনি তার ধর্মকে গুরুত্ব সহকারে নেন এবং রমজান সম্পর্কে মূলধারার ইসলামি শিক্ষাগুলো মেনে চলেন, যা তাকে এবং অন্যান্য মুসলমানদের খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। রমজান মাসে ভোর বা সাহরি থেকে সূর্যাস্ত বা ইফতার অবধি কিছু না খাওয়ার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মামলার অভিযোগ অনুসারে, ৩৪ বছর বয়সী মারভিন ওয়েনসকে জ্যাকসন কাউন্টি জেলে রমজানের প্রথম তিন দিন সাহরির খাবার বা ইফতারি দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে তিনি নিজেকে বাঁচাতে কমিশনারির কাছ থেকে কেনা খাবারের নিজস্ব সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হন। কমিশনারির কাছ থেকে কেনা খাবার পেলেও তিনি তার সাহরি এবং ইফতারি সূর্যাস্তের দুই ঘণ্টারও বেশি পরে সেগুলো পেয়েছে। সাহরি এবং ইফতারি দেরিতে গ্রহণ করেছিলেন। সেই খাবারও পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি বা ক্যালোরিসমৃদ্ধ খাবার ছিল না। তিনি বিশ্বাস করেন যে, তাকে দিনের জন্য প্রায় ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ ক্যালোরি সরবরাহ করা হয়েছিল, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রস্তাবিত ২ হাজার ৫০০ ক্যালোরির চেয়ে কম। কাউন্টি খাবারের সময় বা তাকে দেওয়া ক্যালোরির পরিমাণ সম্পর্কে তার উদ্বেগের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

১৪ মার্চ প্রথম দিন ওয়েন্স সাহরি এবং ইফতার উভয় বেলার খাবার গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ৭টা ৪৩ মিনিটে তার রোজা ভাঙতে সক্ষম হন। কিন্তু মামলার নথি অনুসারে পরবর্তীতে তিনি ‘রাত ৯টা ৩০ মিনিটের পর পর্যন্ত তিনি তার খাবার পাননি। এর অর্থ হলো তিনি তার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ধরে রোজা রেখেছিলেন। একজন মুসলমানকে সূর্যাস্তের মুহূর্তেই রোজা ভাঙতে হয়। ইসলাম ধর্মের অধীনে অনুমোদিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় রোজা ছিলেন। ওয়েনসকেও অখাদ্য এবং অনুপযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হয়েছে, যার মধ্যে থাকা খাবার কিছু সময়ের জন্য মোড়ানো এবং অরক্ষিত খাবার, আপেলের রস বা আপেল সসের সঙ্গে মিশ্রিত খাবার ছিল। একটি ক্ষেত্রে খাবারটি এতোটাই খারাপ ছিল যে, একজন ডেপুটি ওয়েন্সকে বলেছিলেন যে তার এটি খাওয়া উচিত নয় এবং এটি অন্যকিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তিনি তা করতে অক্ষম ছিলেন। 

কাউন্টি কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, ওয়েনসকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত উপযুক্ত আবাসন ও খাবার সঠিকভাবে সাহরির ও ইফতারির খাবার দেওয়া হয়নি। কেন তাকে সময়মতো ইফতারের খাবার দেওয়া হয়নি তার জন্য অজুহাত তৈরি করেছেন। তারা খাবারের মান ও পরিমাণের জন্য টিগের ক্যান্টিন সার্ভিসকে দায়ী করেছে। মামলা দায়েরের পর টিগস ক্যান্টিন সার্ভিস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। 

মিশিগান সিএআইআর (কেয়ার) গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক দাউদ ওয়ালিদ বলেছেন, শেরিফের অফিস এবং মুসলমানদের ধর্মীয় আবাসন প্রদানের জন্য তারা যে প্রাইভেট ক্যান্টিন পরিষেবার সঙ্গে চুক্তি করেছে, তারা আইন অনুসরণ করছে না এবং রোজাদার মুসলমানদের পর্যাপ্ত আবাসন প্রদান করছে না। ওয়ালিদ এক বিবৃতিতে বলেন, তাদের দাবি সত্ত্বেও তারা রোজা রাখা মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। তাদের সঙ্গে দেখা করতে চায়নি। ফলে তাদের কাজ অন্যকিছু প্রমাণ করছে বলে ওয়ালিদ এক বিবৃতিতে জানান। ‘জ্যাকসন কাউন্টি শেরিফের অফিসকে অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে যে, ওয়েন্স এবং তাদের হেফাজতে থাকা অন্যান্য মুসলমানরা তাদের রোজা রাখার শুরুতে এবং শেষে স্বাস্থ্যকর এবং পর্যাপ্ত খাবার পাবে।’


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)