হিলারি-শেরিসহ যাদের বিরুদ্ধে স্যাংশনের দাবি নিক্সন চৌধুরীর


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 07-07-2022

হিলারি-শেরিসহ যাদের বিরুদ্ধে  স্যাংশনের দাবি নিক্সন চৌধুরীর

তার কথাবর্তা এমনই। রাজনৈতিক ফ্যামিলির ছেলে। ফলে কথাবার্তাতে রাখঢাক কম। এখনও বয়সে তুলনামূলক তরুণ। সম্ভবত সংসদে তিনিই সর্বকনিষ্ট (জন্ম ৩ মার্চ ১৯৭৮)। মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। ফরিদপুর-৪ আসনের সতন্ত্র সংসদ সদস্য। তিনি এলাকাতে বলেন অনেক কথা। বিশেষ করে তার প্রতিদ্বন্দ্বি যারা, তাদের নিয়ে। কিন্তু তাই বলে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশীদের নিয়েও তিনি যেভাবে দাবি দাওয়া তুলেছেন এটা সম্ভবত কেউ ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করেনি। পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারের ওপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।একই অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা পরিচালনার দাবি তোলেন তিনি। 

গত ৫ জুলাই মঙ্গলবার প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি এই দাবি জানান। নিক্সন বলেন, ইতোমধ্যে কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়নি। পদ্মা সেতু যাতে বাস্তবায়ন না হয় এজন্য দেশি-বিদেশি যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দাবি জানাই ড. ইউনূস, হিলারি ক্লিনটন, টনি ব্লেয়ারের স্ত্রীর ওপর স্যাংশন দেওয়া হোক। যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এসে নতুন করে কোনো ষড়যন্ত্র করতে না পারে। এছাড়া বাংলাদেশের যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ড. ইউনূস, এতিম টাকা আত্মসাৎকারী খালেদা জিয়া এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন তার সরকারের আমলে কেউ অপরাধ করে রেহাই পাবে না। আমি বিশ্বাস করি যারা গরিবের হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে যারা বিদেশের ব্যাংকে টাকা রেখেছেন যাদের নাম পানামা পেপারস এবং পেরাডাইস পেপারসে এসেছে তাদের প্রতি শিগগিরই দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।

তার দাবিগুলোর শেষেরটা যৌক্তিকও। কারন দেশের গরীবের টাকা আত্মসাৎ করে যারা বিদেশে জমিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু অন্য যে দাবিগুলো তার, সেটা দিয়ে তিনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বা প্রফেসর ইউনুস। এরা বাংলাদেশী এদের নিয়েও বলতে পারেন। সত্য মিথ্যা যা-ই হোক না কেন। রাজনীতিটা এমনই। কিন্তু হিলারী ক্লিনটন, ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারের প্রসঙ্গটা এনে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন, স্যাংশন মানে কী। কী সেই স্যাংশন?  সেই স্যাংশন দিয়ে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে, তাদেরই বা কতটা ক্ষতি হবে? নিক্সন সাধারণ রাজনীবিদ হলে কথা উঠতো না। তিনি সংসদ সদস্য, দেশের আইনপ্রণয়নকারী। এবং যা বলেছেন তাও কিন্তু জাতীয় সংসদে। তার কথার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। এবং এটা গুরুত্ব দেয়ার মতই। 

যে কথা তিনি বলেছেন, সেটা যদি আবেগেও বলেন, সেটাও কাউন্ট হবার মত। আর আবেগেই বা তিনি কেন বলবেন। হয়তো তিনি এটা প্লান করেই বলছেন। কারো মুখপাত্র হয়ে দাবিটা তুলেছেন। এ দাবিতে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে ভবিষ্যতে সেটাও প্রশ্ন উঠছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন কার পারপাস সার্ভ করার জন্য এমন কথাগুলো বলছেন। তিনি তো একজন স্বতন্ত্র সাংসদ। আসলে কিন্তু সেটা নয়। তিনি স্বতন্ত্র হলেও নিক্সন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই জাড়িয়ে। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি প্রধানমন্ত্রী বা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে জড়িত। তার বাবাও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী।

যিনি পরিচিত দাদা ভাই নামে। তিনি ছিলেন, আওয়ামী লীগের প্রবীন রাজনীতিবিদ। গণপরিষদের প্রাক্তন সদস্য। ১৯৭০ সনের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার দাদী অর্থাৎ ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন ফাতেমা বেগম। নিক্সনের ভাই নূরে আলম চৌধুরী লিটনও সংসদ সদস্য। সব মিলিয়ে নিক্সন রাজনৈতিক পরিবারেরই। তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্চুর মেয়ে তারিন হোসেনকে।   

সব মিলিয়ে দু’দুবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীকে খাট করে দেখার সুযোগ নেই। বর্তমানে তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও। 

তার এ পরিচয় বলার একটাই কারণ, তাকে ও তার কথাবার্তাকে অনেকেই খাট করে দেখেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা নয়। তার বক্তব্য সাধারণ মানুষও বেশ মন দিয়ে শোনেন। এলাকার উন্নয়নেও তিনি অনেক কাজ করে জনপ্রিয়তায় রয়েছেন। ফলে তিনি যা বলেছেন, সেটা বুঝে শুনেই। 



প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)