২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৮:০৩:১১ পূর্বাহ্ন


প্রেমের টানে গাজীপুরে আমেরিকান তরুণী
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
প্রেমের টানে গাজীপুরে আমেরিকান তরুণী প্রেমের টানে সুদূর আমেরিকা থেকে লায়ডা এ লোজা নামে এক তরুণী ছুটে গিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুরে


প্রেমের টানে সুদূর আমেরিকা থেকে লায়ডা এ লোজা নামে এক তরুণী ছুটে গিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুরে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনার বাসিন্দা। গত ৩ জুলাই রাতে ঢাকার শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বরণ করা হয়েছে। বিয়ের পরে নাম রাখা হয়েছে লায়ডা এ লোজা খান।

জানা গেছে, উপজেলার বরমী ইউনিয়নের কেন্দুয়া কুমারপাড়া এলাকার ইমরান হোসেন খানের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের পরিচয় হয় লায়ডার। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ঘটনায় শ্রীপুরের সাধারণ মানুষের মাঝে অন্যরকম আনন্দ দেখা গেছে। আশপাশের প্রতিবেশীরা বাংলাদেশি যুবকের আমেরিকান বউ দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন।স্বজনরা জানান, তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যোগাযোগের একপর্যায়ে একবার দেশে আসতে গিয়ে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন জটিলতায় যেতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্রের ওই তরুণী।

কোভিড জটিলতায় ইমিগ্রেশন বিভাগ তাকে আটকে দেয়। পরে সব সমস্যা ও আইনি জটিলতার সমাধান হলে রোববার রাতে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। সোমবার ভোরে ইমরানের বাড়িতে নেয়া হয় তাকে।

ইমরানের প্রতিবেশী সবুজ মিয়া জানান, আমাদের গ্রামে হাজার মাইল দূরের আমেরিকা থেকে এক তরুণী প্রেমের টানে ছুটে এসেছেন। ভাবতেই ভালো লাগছে। সকাল থেকেই আমরা বিদেশি নতুন বউকে দেখতে ওই বাড়িতে গিয়েছি। ভাষার কারণে সব বোঝানো যাচ্ছে না। কোনো কিছু জানতে চাইলে ছেলে (বর) বউকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। এতে সে বেশ আনন্দ প্রকাশ করে। আমরাও আনন্দ পাচ্ছি।

স্বামী ইমরান খান (২৮) বরমী ইউনিয়নের বরমী গ্রামের আহসান উল্লাহ খানের ছেলে। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শেষ সেমিস্টারের ছাত্র। মা-বাবার পাঁচ সন্তানের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। ইমরান খান বলেন, পরিচয় হওয়ার পর লিডিয়া লোজা নিজেই তাঁকে প্রেমও পরে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এ বছরের জানুয়ারির শেষদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁকে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠান লিডিয়া। তিনি অনুরোধ গ্রহণ করার পর বেশ কিছুদিন তাঁর সঙ্গে সাধারণ বন্ধু হিসেবে বার্তা বিনিময় হয়।

গত মার্চ মাসে লিডিয়া বাংলাদেশে ইমরানের বাড়িতে এসে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। সে উদ্দেশ্যে লিডিয়া টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। সেখানে তাঁকে গ্রহণ করতে উপস্থিত ছিলেন ইমরান। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ বিভিন্ন কারণে তাঁকে আবারো টার্কিশ এয়ারলাইনসে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। লিডিয়া বাড়ি ফিরে যাননি। তিনি অন্য একটি ফ্লাইটে নেপাল পৌঁছেন।

এদিকে ইমরান বাংলাদেশ থেকে নেপালের উদ্দেশ্যে উড়াল দেন। সেখানে পৌঁছে তাঁরা দু’জন দেখা করেন। সেখানে এক মসজিদের ইমামের কাছে লিডিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সেখানেই তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর নেপাল থেকে লিডিয়া ফিরে যান অ্যারিজোনা আর ইমরান ফিরে আসেন বাংলাদেশে। এর চার মাস পর লিডিয়া ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত রোববার দিবাগত রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান ইমরান। পরে লিডিয়াকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের বরমী গ্রামে নিজবাড়িতে ওঠেন তিনি।

ইমরান খান বলেন, তাঁর বাবা নেই। মা ও বড় চার বোন আছেন। তাঁরা সবাই লিডিয়াকে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছেন। সবার সঙ্গে লিডিয়া ভালো আচরণ করছেন। ইতিমধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে সব সদস্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, আপাতত কিছুদিন লিডিয়া তাঁর বাড়িতে থাকবেন। এরপর নিজ দেশে ফিরে যাবেন। ইমরান বলেন, লিডিয়াতাঁকে অ্যারিজোনা নিয়ে যেতে চান। সব ঠিক থাকলে তিনিও লিডিয়ার সঙ্গে পাড়ি জমাতে চান। তিনি সবার কাছে তাঁদের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়েছি। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে ওই বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’


শেয়ার করুন