২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৫:৩৮ অপরাহ্ন


জানাচ্ছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
২০ মেগা প্রকপ্লের বৈদেশিক ঋণের ভার সইতে পারবে কি বাংলাদেশ?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৭-২০২২
২০ মেগা প্রকপ্লের  বৈদেশিক ঋণের ভার সইতে পারবে কি বাংলাদেশ?


২০০৯ সনে ক্ষমতাগ্রহলের পর থেকেই বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেয়ার বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার এ পর্যন্ত অন্তত ২০টি বড় বা মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নিন্দুকেরা এর বিরুদ্ধে কথা বলছে। বিরোধী পক্ষ বলে বেড়াচ্ছে- মেগা প্রকল্প-মেগা দুর্নীতি। সরকারও এর উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে বিরোধীপক্ষ ইর্ষান্বিত হয়েই আবোলতাবোল বলছে। সরকারের উন্নতি দেখে তারা সহ্য করতে পারছে না। তবে ২০ মেগা প্রকল্প কিভাবে হচ্ছে, কোথা থেকে অর্থ এলো, কবে নাগাদ শেষ হবে, ঋণের পরিমাণ কতো, সে ঋণের সুদ কতো। কত বছরে শোধ দিতে হবে, ঋণের  কিস্তি শুরু হবে কবে, সে কিস্তির পরিমাণ কতো ইত্যাদি- এগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বরাবরই ধোঁয়াশা কাজ করছিল। বিরোধী পক্ষ গলা ফাটিয়ে কিছু কিছু বললেও সেটাতে কান দিতেন না অনেকেই। 

বিরোধীদের কাজই বিরোধিতার জন্য বিরোধীতা করা ভেবেছিলেন। বিরোধীদের কথা এমনই কিছু হবে হয়তো। কিন্তু বিষয়গুলো গুছিয়ে যখন বললেন দেশের অন্যতম সেরা অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তখন অনেকেই নড়েচড়ে বসেছেন। বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন। কেননা বাংলাদেশের সামনে শ্রীলঙ্কা একটা ভয়ার্ত উদহরণ। তারাও ডুবেছে বিদেশী অর্থায়নে মেগা কিছু প্রকল্প হাতে নিয়ে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেদের ভুল কিছু সিদ্ধান্তও আছে এর সঙ্গে। 

বিদেশী ঋণে বাংলাদেশের ২০ মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি দেশের বিদ্যুৎ খাত নির্ভর আমদানীকৃত পণ্য যেমনটা তেল,গ্যাস,কয়লার উপর। অথচ কয়লা ও গ্যাস বাংলাদেশের মাটির নিচে। সেটা উঠানো নিয়ে কিছু আমলাদের সঠিক পরামর্শ না থাকায় সরকার নিশ্চুপ থাকে। যার ফলশ্রুতিতে এখন বিদ্যুৎতে ক্রাইসিস। অথচ কয়লা ও গ্যাস তুললে এ ক্রাইসিসটা হয়তো নাও হতে পারতো।      

সে যা হোক, গত ২২ জুলাই দেশের ২০টি বড় প্রকল্প নিয়ে ভার্চুয়ালি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ‘বাংলাদেশের বৃহৎ ২০টি মেগা প্রকল্প: প্রবণতা ও পরিস্থিতি’ শীর্ষক আলাপচারিতায় তিনি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করেন। সেখানে তিনি বড় ধরনের এক শঙ্কার কথা জানান দিয়ে বলেন, দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্য নেয়া বিদেশী ঋণ পরিশোধ শুরু হলে ২০২৪ সালের পর অর্থনীতিতে বড় একটি ধাক্কা আসতে পারে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে সরকারকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেন তিনি। এজন্য এখন থেকে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কথাও বলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জেগেছে, আসলেই কী এ মেগা প্রকল্প ও বৈদেশিক ঋণের ভার সইতে পারবে তো বাংলাদেশের জনগণ? 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের ২০টি মেগা প্রকল্পে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার খরচ হচ্ছে। যার মধ্যে বিদেশী ঋণের পরিমাণ ৬২ দশমিক ১৭ শতাংশ বা ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এসব ঋণের বড় অংশই নেয়া হয়েছে রাশিয়া, জাপান ও চীনের কাছ থেকে। ২০২৮ সালের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের যে হার, তাতে অনেকগুলো ২০৩০ সালেও শেষ হবে না। কিন্তু ২০২৪ সাল থেকেই এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে। ফলে ২০২৪-২৬ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে। প্রথম চাপটা আসবে চীন থেকে; এরপর রাশিয়া ও জাপান। ফলে এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।দেশের ২০টি বড় প্রকল্প বিশ্লেষণ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘মেগা প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে, যা অর্থনীতির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।এসব প্রকল্পের তালিকার অন্যতম হলো পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ ইত্যাদি। 

এসব প্রকল্পের ঋণের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে বেশি ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপর জাপানের ৩৫ শতাংশ ও চীনের ২১ শতাংশ। ২০টি প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৭ হাজার কোটি ডলার। স্থানীয়ভাবে আছে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ও বিদেশী অর্থায়ন ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া বিপুল ঋণ পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলো সংকটের মধ্যে পড়বে। যার প্রভাব মোটা দাগে পড়বে অর্থনীতির ওপর।’ এ প্রকল্পগুলোর ১৫টিই ভৌত অবকাঠামো উল্লেখ করে সিপিডির এই ফেলো বলেন, ‘এর মধ্যে ৫০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে রাস্তাঘাটে, ৩৫- ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে। বাকি অর্থ স্বাস্থ্যসহ অন্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়ার প্রবণতা আছে।’

আইএমএফের ঋণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সিপিডির ফেলো বলেন, ‘সরকার আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, এটা শুভ নিদর্শন। শুধু যে টাকার জন্য আইএমএফকে দরকার তা নয়, এমন সংস্থা কোনো দেশের পাশে থাকলে বিশ্ববাজারে সে দেশের আস্থার জায়গা তৈরি হয়। ২০০ কোটি ডলার হোক আর ৪৫০ কোটি ডলার, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন আছে। এর মাধ্যমে মধ্য মেয়াদে অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে এবং মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তাছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন সহযোগীরা মনে করে বাংলাদেশকে আইএমএফ এক ধরনের নজরদারির মধ্যে রেখেছে। ফলে তারাও বিনিয়োগ করতে আস্থা পায়।’

দেশে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো খাতে বড় বরাদ্দ খুবই কম উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এর একটি কারণ হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দৃশ্যমান নয়। তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কম দেয়া হয়। আবার দেখা গিয়েছে, বড় প্রকল্পগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক সময়ে বেশি গ্রহণ করা হয়। কারণ এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সহজে খুশি করা যায়। কিন্তু শিক্ষা বা স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ালে দীর্ঘমেয়াদে জাতি উপকৃত হয়। সেই বিবেচনাটি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্পগুলো যতই যৌক্তিক হোক না কেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে অবহেলার সুযোগ নেই।

ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, ‘একের পর এক প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে। এগুলো সঠিক সময়ে শেষ করা নিয়ে কোনো চিন্তা দেখা যাচ্ছে না। এখন সারা দেশে লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্তু এ লোডশেডিং কতদিন চলবে বা কতদিনের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। তেমনি প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও ঋণের বিষয়েও তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে এসব বিষয়ে পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি।’ 

তিনি জানান দেন, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১১টি প্রকল্পের বাস্তবায়নের হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের পর নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের হার দুর্বল। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ১০ এর নিচে।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান আলোচনায় অংশ নেন। এ ছাড়া ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী কথা বলেন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সংকট স্বল্পমেয়াদী প্রকৃতির নয়। সহজে এ সংকট থেকে মুক্তি মিলবে না। বাংলাদেশ মাঝারি মেয়াদী সংকটে রয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থা অপ্রতুল। তাই স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী উভয় ধরনের ব্যবস্থা হওয়া উচিত। বাস্তবে মুদ্রাস্ফীতির হার অনেক বেশি। বিশেষ করে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার প্রকাশিত সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি হারের তুলনায় অনেক বেশি।

অতিরিক্ত আমদানি দেখিয়ে টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন ড. ফাহমিদা খাতুন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা না দিয়ে তা অন্য কাজে লাগাতে পরামর্শ দেন। বিদ্যুৎখাতে শুধু আমদানি করা এলএনজির ওপর নির্ভর করা কঠিন হবে বলেও মনে করেন তিনি। রিজার্ভের ঘাটতি পূরণে আএমএফসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ নেয়ার কথা বলেন তিনি। প্রয়োজন নয় এমন প্রকল্পে ব্যয় না করার পরামর্শ এ অর্থনীতিবিদের।

বেসরকারি সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দৃষ্টিভঙ্গিও একটা সমস্যা সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি লৌহ ত্রিভূজ গেড়ে বসেছে। এ ত্রিভূজের প্রথম বাহু হলো একটি এককেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শন। যা অবিচারের মাধ্যমে নতুন দারিদ্র সৃষ্টি করছে। কোভিডের পরেও ২১ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্রসীমার নিচে গেছে বলে জানান তিনি।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে স্বার্থের দ্বন্দ্বভিত্তিক অর্থিক ব্যবস্থাপনা। যার মাধ্যমে আইন করে অনিয়ম তৈরি করা হচ্ছে। আর স্বার্থের জন্য এত প্রকল্প। এ কারণেই জ্বালানি, পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনা। এ কারণেই নিরাপদ সড়ক পাওয়া যাচ্ছে না কোনোভাবেই, এই কারণেই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনো চলছে। বিআরটিসিকে এ কারণেই অচল করে রাখা হয়েছে। এর জন্যই ব্যাংকিংখাতের এ দশা। এসবই হচ্ছে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে। তৃতীয়ত এ সব কিছুর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে জনগণের কাঁধে। ফলে অবিচারের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে তিনটি অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, নতুন নতুন দারিদ্র্য; দ্বিতীয়ত, পুষ্টি ও মাধ্যমিক শিক্ষাসহ কিছু সূচকে নিম্নমুখিতা এবং তৃতীয়ত, যুব বেকারত্ব বৃদ্ধি।

তাই অর্থনীতির সামষ্টিক ভারসাম্যহীনতার মধ্যে লৈাহ ত্রিভূজ ভাঙার আলোচনাও করতে হবে বলে মন্তব্য করেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। এটা ঠিক করতে হলে বড় ধাক্কা দরকার বলেও জানান তিনি। কর্মসংস্থানের অভাব আরো বাড়ছে। তবে এটা বর্তমান পরিস্থিতির জন্য নয়, বরং অর্থনৈতিক নীতির কারণে হচ্ছে বলেও মনে করেন করেন এ গবেষক।

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে। ব্যাকিংখাতের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক বলেও মন্তব্য করেন। আমদানির কথা বলে টাকা প্রচার হচ্ছে কিনা তা এনবিআর বা সরকার খেয়াল করছে না বলেও অভিযোগ করেন। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়লেও তার তথ্য নেই। আয় বৈষম্য বিপদসীমায় চলে যাচ্ছে বলেও সতর্ক করেন এ অর্থনীতিবিদ।

দেশের ব্যাংকিংখাত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন গর্ভনর এসেই গণছাড় দিয়েছেন। এ খাতের সমস্যা চিহ্নিত, তবে সমাধানের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দেখছি- দেখবো- আমরা নজর রাখছি- বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হোটেলে গিয়ে ব্যাংকের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- বিশ্বে কোথাও এমন নজির আছে নাকি সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। আমদানি বাড়ার কথা বলা হলেও ব্যবসায় তার আলমত দেখা যাচ্ছে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষের অংশগ্রহণ নেই বলেও অভিযোগ সাবেক এ গর্ভনরের। সরকারি অপচয় ও অর্থ পাচার রোধের আহ্বান জানান তিনি।

দেশের আমদারি-রপ্তানির অবস্থা তুলে ধরে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রপ্তানির বড় অংশ আমদানিতে হারিয়ে যাচ্ছে। ৫২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির মধ্যে পোশাকখাতের অবদান ৪২ বিলিয়ন ডলার। তবে তাদের প্রকৃত রপ্তানি ২৮ বিলিয়ন ডলার বাকিটা আমদানিতে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে, গত ১০ বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ৮০ শতাংশ প্রচার আমদানির নামে হয়ে থাকে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পেনিক সৃষ্টি না হয় এমন পদক্ষেপের কথা বলেন এ অর্থনীতিবিদ।

বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানি জোগান না বাড়িয়ে পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়ার কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম। তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানির জোগান দিতে না পারায় এ সমস্যা হয়েছে। দ্রুতগতিতে বিদ্যুৎ আনার জন্য এক সময় তেলভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন ছিল। তবে সেটাকে তিন বা পাঁচ বছর পর্যন্ত রাখার পরামর্শ ছিল। কিন্তু সেটা না করে এখন পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে তেলের ওপর নির্ভরতা অনেক বেড়েছে। আর তেলের ওপর এই নির্ভরতার কারণেই বর্তমান সমস্যা তৈরি হয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে গ্যাস অনুসন্ধানের রাজনৈতিক সাহস কোনো সরকারই নিতে পারেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দেশের ব্যবসা পরিস্থিতি নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী জানান, ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। ঢাকার চেয়েও গ্রামে ৩ গুণ লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে ডিজেল কিনে জেনারেটর চালিয়ে বেশি খরচে শিল্পে উৎপাদন কাজ করতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বাড়বে এবং সময়মতো ডেলিভারি না দিতে পারলে অর্ডার বাতিল হবে বলেও জানান তিনি। তাই রপ্তানি শিল্প সবসময় সচল রাখার আহ্বান জানান তিনি। শুধু বড় খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের সুবিধা দিলে হবে না বলে মনে করেন তিনি।


শেয়ার করুন