২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:৩১:৩৪ অপরাহ্ন


জ্বালানি সেক্টরে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা
বাংলাদেশ গভীর ব্ল্যাক হোল থেকে বেরোতে পারবে কী
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৭-২০২২
বাংলাদেশ গভীর ব্ল্যাক হোল থেকে বেরোতে পারবে কী


প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ১৯৯৭ থেকে ২০০২ (২০০১-২০০৮ বাদে) দীর্ঘদিন বাংলাদেশের জ্বালানি বিদ্যুৎ বিষয়ে সম্পৃক্ত ডক্টও তৌফিক -ই-এলাহী চৌধুরীর সভাপত্বিতে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ২০১৪-২০২২, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ডক্টর আহমেদ কায়কাউস যৌথভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টরে কিছু কৃচ্ছ্রতাসাধনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। বিদ্যমান বিশ্বপরিস্থিতে বাংলাদেশের কৃচ্ছ্রতা ছাড়া বিকল্প নেই। কিন্তু এতো বুদ্ধিমান মানুষগুলোর তো এপ্রিল-মে মাস থেকেই অনুধাবন করা উচিত ছিল। ওনাদের প্রণোদনায় আমলা নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি সেক্টর খাতটির কারিগরি বুনিয়াদ ভেঙে ফেলছে। যেই কৃচ্ছ্রতাসাধনের পথে বাংলাদেশ এখন হাঁটছে, সেটি মে মাস থেকে শুরু হলে এখন বাংলাদেশ আরো ভালো অবস্থায় থাকতো।

এই মুহূর্তে প্রশ্ন তুলবো না, নিজেদের কয়লা মাটির নিচে রেখে এবং গ্যাস তেল অনুসন্ধানে অনাগ্রহী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ আমদানি থেকে কোনো কোনো মহল দারুণভাবে আর্থিক লাভবান হয়েছে? ২৫ হাজার মেগাওয়াট প্লাস বিদ্যুৎ সক্ষমতা নিয়ে বড়াই অথবা ঘটা করে শতকরা শতভাগ গ্রিড বিদ্যুৎ কাভারেজ উৎসবের আড়ালে নিজেদের প্রাথমিক জ্বালানি আহরণে সক্ষমতার অভাব বা ব্যর্থতা ঢেকে রাখা যায়নি। পেট্রোবাংলা বা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতায় নেই ৫ বছরে ঘুরে দাঁড়ানোর। আর ২০৩০ নাগাদ নিজের কয়লা তোলা না হলে এবং জলে-স্থলে ব্যাপক গ্যাস অনুসন্ধান না করতে পারলে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ জ্বালানি সেক্টর গভীর ব্ল্যাক হোল থেকে বেরোতে পারবে না। বর্তমান পলিসি মেকার্সরা সেই কাজটি করতে পারবে বলে মনে হয় না।

এখন কিছু কৃচ্ছ্রতা নিয়ে আলোচনা করি। দেশে এখন গ্রিড বিদ্যুৎ চাহিদা  ১৫ হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি সরবরাহের বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ১১৫০০-১২০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। দেশের মূল চাহিদা এখনো আলো জ্বালানোয়। তাই সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ। এই সময়ে অন্তত ২৫০০-৩০০০ মেগাওয়াট চাহিদা ম্যানেজ করার সবচেয়ে ভালো উপায় কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবধরনের বাণিজ্য বিপণিবিতানের কাজ সীমিত রাখা। সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার বিপণিবিতানসমূহ রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যেতে পারে। বাংলাদেশে সন্ধ্যা ৬টার পর কোনো বিয়েশাদি, সামাজিক অনুষ্ঠান করা আইন করে বন্ধ করা উচিত। 

এখন প্রচণ্ড গরম। এ সময় মসজিদে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বন্ধ করা হঠকারী সিদ্ধান্ত হবে। বরং কঠোর মনিটরিং করে প্রতি নামাজের সময় ৩০ মিনিট করে এবং জুমার নামাজের সময় ৬০ মিনিট চালু রাখা যেতে পারে। সরকারি অফিস অন্তত দুই মাস অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওয়ার্কিং ফ্রম হোম করা যায়। সরকারি কার্যালয় বঙ্গভবন, গণভবন, সচিবালয়, মন্ত্রিপাড়া, সংসদের আবাসস্থলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতার আওতায় আনতে হবে। ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবসহ হাই সোসাইটি নামক ক্লাবসমূহে বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত দুই মাস আবারো দূরশিক্ষণ চালু করা যেতে পারে। পেট্রলপাম্পসমূহ একদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সমর্থন দেয়া উচিত। একইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের দৈনিক জ্বালানি বরাদ্দ সীমিত করতে হবে। 

বিষিয়টি নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। যুদ্ধকালে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কে কোথায় চুরি করেছে এটি দেখার সময় এখন নয়। বাংলাদেশ কিন্তু ২০২৫ থেকে আরো গভীর সংকটে পর্বে নিজেদের জ্বালানি নিয়ে। কীভাবে আসতে পারে সে সংকট। সেই প্রসঙ্গে পরে আসবো।


শেয়ার করুন