২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:২৬:১৯ অপরাহ্ন


হঠাৎ রাজপথ কেন দেখছে আওয়ামী লীগ?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৮-২০২২
হঠাৎ রাজপথ কেন দেখছে আওয়ামী লীগ?


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ ক’জন নেতৃবৃন্দের হঠাৎ করে রাজপথ দখলের অভিলাষ জনমনে প্রশ্নের অবতারণা করেছে। টানা তিনটার্মে ক্ষমতায় থাকা দলটির এখনও শেষ টার্মের দেড় বছরের সময় বাকি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ২০২৪ সনের শুরুতে অথবা ২০২৩ এর একেবারেই শেষ লগ্নে। ক্ষমতার মসনদে থাকা দলটি করে যাচ্ছে একের পর এক মেগা প্রজেক্ট। ইতিমধ্যে পদ্মা সেতুর সড়ক পথ শেষ করে সেটা এখন জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত। রেল লাইনের কাজও পুরাদমে চলছে। আগামী বছর এর উদ্ধোধন বলে জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে আরো বেশ কিছু প্রজেক্টের কাজও শেষ প্রান্তে। কর্নফুলি টানেল,ঢাকা মেট্রো রেলসহ আরো কিছু প্রজেক্ট। একের পর এক এমন প্রজেক্টের উদ্বোধন দলটিকে আগামী নির্বাচনে মানুষ আরো বেশি গ্রহণ করবে। পরবর্তি আসরের জন্য ভোট দানে উৎসাহী হবেন। এখন সময় মানুষকে এ উন্নতির বিষয়গুলো বলা এবং এর সুফল দ্বারে দ্বারে কিভাবে পৌঁছে গেছে সেগুলো বলার। কিন্তু সেটা না করে হঠাৎ তারা রাজপথের আন্দোলনের দিকেই বেশি মনযোগী হচ্ছে। কিন্তু কেন? 

দলের সিনিয়র নেতারা রাজপথের আন্দোলনের কথাই বা কেন বলে যাচ্ছেন। একজন দুই জন নয়। গত কয়েকদিনে অন্তত তিনজন শীর্ষ নেতা রাজপথে তাদের আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে খোদ আওয়ামী লীগের সমার্থক, সাধারণ কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। 

বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো ক্ষমতা থেকে দেড় যুগের মত সময়ে দূরে। তারা আন্দোলন সংগ্রাম করবে রাজপথে থেকে এটা গণতন্ত্রের  শোভাবর্ধন করে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ কেন এক্ষুনিই এমনটা ভাবছে? 

দেশে বিরাজ করছে একরকম অস্থিরতা। জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও অব্যাহত লোডশেডিং জনজীবনে অস্থিরতা তৈরি করেছে। বিশেষ করে লোডশেডিংয়ে বিভিন্ন শিল্প- কলকারখানা আক্রান্ত। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এটা সাময়িক। চেষ্টা চলছে পরিস্থিতি উত্তরনের। তবুও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে কেমন যেন একটা উৎকণ্ঠা।  

গত ৮ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমরা রাজপথের পুরাতন খেলোয়াড়।  বিএনপি তো এই পথে নতুন। আসুন রাজপথে মোকাবিলা হবে, ফয়সালা হবে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার সকালে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর যে কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি রাজপথে মোকাবিলা করা হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথে ছিল, রাজপথে আছে।’ বিএনপিকে আগুন নিয়ে না খেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলতে এলে পরিণাম হবে ভয়াবহ।’ 

গত ৭ আগস্ট  বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, গত ১৪ বছর বিএনপি নেতার কথা শুনে আসছি।রাজপথ দখল এত সহজ নয়।বরাবর রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকে, বিএনপির নয়। তাই কে রাজপথে থাকবে, তা সময় বলে দেবে। ভোলার স্বাধীনতা জাদুঘর পরিদর্শনের আগ মুহূর্তে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

এ সময় প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ পর পর তিন নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা পর পর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।এই ১৪ বছর বিএনপির মহাসচিব একই কথা বলে গেছেন। দলটির নেতারা একই কথা বলে আসছেন। রাজপথ দখল করা এত সহজ নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন আইয়ুব খানকে বিতাড়িত করেছি। বিএনপিকে বিতাড়িত করেছি। মানুষের অধিকার আদায় করেছি। আন্দোলন বলে তাকে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি ১৫ ফেরুয়ারি বিএনপি নির্বাচন করে ক্ষমতায় ছিল দেড় মাস। ফলে রাজপথে বিএনপি কোনো দিনই থাকতে পারেনি। ’ 

এ সময় জ্বালানি সংকট বিষয়ে তোফায়েল বলেন, ‘এটি বিশ্বব্যাপী সংকট। আমাদের দেশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সংকট থাকতে পারে। তিনি এই সংকট মোকাবিলায় সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।’ 

গত ৬ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফলমূল, শাকসবজি ও সরিষা বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

 প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা গোপালগঞ্জের মাটিতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বিএনপি এখন ব্যাঙের মতো ডাকছে, পুঁটি মাছের মতো লাফাচ্ছে। তারা মূলত ষড়যন্ত্র করছে। তারা যদি জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, অতীতের মতো পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে তাহলে আগামী সেপ্টেম্বরে আমরা মাঠে নামব। তখন বিএনপি পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। কারণ আগস্ট মাস শোকের মাস। তাই আমরা শোক পালন করছি।’  

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। গত ৩ আগস্ট খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে (ষড়যন্ত্র) করেছে। আবার ইলেকশন যতই সামনে আসছে, আবারও... মানে শেখ হাসিনাকে সরাতে হবে। তাদের কী লাভ হবে জানি না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের তো ক্ষতিই হবে। তিনি বলেন, ঘাতকরা একসময় আমাদের বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করত। যে জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাটি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই বাঙালি হয়ে কীভাবে ঘাতকরা জাতির পিতার বুকে গুলি চালিয়েছিল! বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা রেডক্রস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মানবতার কল্যাণে সেবা করার জন্য। ’৭৫-এ জাতির পিতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পর সেই রেডক্রসেরই একটুকরা কাপড় কাফন বানিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল।’

তাঁর বিরুদ্ধে সব সময় একটি ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমনটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,‘ যেখানে রাসেলকে পর্যন্ত খুন করল, সেই পরিবার থেকে আমি বেঁচে এসে সরকারে আসলাম। সাফল্য এনে দিলাম। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম। এটা তো অনেকেই পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি, তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তবে যারা এ তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাদের কার কী সে খবরও আমি রাখি। চিনি তো। আমার তো অচেনা কেউ নেই। তাদের বিষয়ও আমার জানা আছে। তারা তাদের চক্রান্ত করে যাচ্ছে।’


শেয়ার করুন