২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫২:৪৩ অপরাহ্ন


চীনা ঋণের বিরোধিতায় বাংলাদেশ!
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৮-২০২২
চীনা ঋণের বিরোধিতায় বাংলাদেশ!


চীনের সাথে কি বাংলাদেশ তার আর্থিক সখ্য ভেঙে দিচ্ছে। একদিকে চীন আর কয়লানির্ভর এনার্জি উৎপাদন কারখানায় ঋণ দেয়া বন্ধ করার কথা বলেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভ বা বিআরআই থেকে উন্নয়নশীল দেশসমূহের আরো ঋণ নেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই দুবার চিন্তা করা আবশ্যক। কারণ বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতি ও ক্রম সঙ্কুুচিত প্রবৃদ্ধি নতুন ঋণগ্রস্ত বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। 

এএইচএম মোস্তফা কামাল আরো বলেন, বেইজিংকে আরো বিশেষভাবে তার ঋণ মূল্যায়ন করা দরকার। কারণ যেনতেন প্রকারে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত দেশকে ঋণ দুর্যোগে পতিত করে। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় চীনের অবকাঠামোগত ঋণ যথেষ্ট পরিমাণ রিটার্ন আনতে পারেনি বিধায়, তা গভীর অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করেছে। 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বিআরই’র প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যে অবস্থাা সৃষ্টি হোক না কেন, প্রত্যেকে চীনকে দোষারোপ করছে। চীন তাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করতে পারে না। এটা তাদের দায়িত্ব।’

তিনি বলেন চীনা কর্তৃপক্ষ কোন প্রকল্পে অর্থায়ন জরুরি তা নিয়ে বিশেষ চিন্তা না করেই ঋণ দিয়ে থাকে। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। বাংলাদেশ গত মাসে আইএমএফের কাছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। তার কারণ বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি যা রাশিয়ায় ইউক্রেন আক্রমণের জন্য ঘটেছে। চীনের কাছে বাংলাদেশের ঋণ ৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের মোট বিদেশি ঋণের ৬ শতাংশ। 

কামাল বলেন, বাংলাদেশ প্রথম কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে ১.৫ বিলিয়ন ডলার চায়। তবে এখনো ঋণের পরিমাণ চূড়ান্ত হয়নি। 

বাংলাদেশ তাছাড়া অন্যান্য বহুমুখী ও দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার চায়। এদিকে সুইজারল্যান্ড সরকার বলেছে, তারা বাংলাদেশ চাইলে কত টাকার অর্থ সুইস ব্যাংকে পাচার করে জমা করা হয়েছে, তার হিসাব দেবে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো তা চায়নি। বাংলাদেশ যদি সে অর্থ চায় ও ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের ঋণ লাগবে না। দেশটা বেঁচে যাবে। কিন্তু সরকারি মহল থেকে তা চাওয়া হচ্ছে না। কামাল এ মন্তব্য করেছেন চীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়া ই’র বাংলাদেশ সফরের পর। এই সময়ে আবার চীন বলেছে উভয় দেশ অবকাঠামো খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। 

পাকিস্তান ইতিমধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলার আইএমএফে ঋণ চূড়ান্ত করেছে। আগামী মাসের মধ্যে আমদানি বিল মেটানোর জন্য ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ইতিমধ্যে পেয়েছে ফান্ড থেকে। 

বাংলাদেশ জ্বালানির দাম মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। এক বছর আগে যেখানে ৪৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল এখন তা ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বর্তমানে এই রিজার্ভ ৫ মাসের জন্য যথেষ্ট। গার্মেন্টস বাণিজ্য অর্থাৎ গরিব নারীদের রক্তঝরা ঘাম সে জন্য একমাত্র পুঁজি।

২০২১ সালে বাংলাদেশের ঋণ ছিল ৬২ বিলিয়ন ডলার। অধিকাংশ ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে। দেশ ৯ বিলিয়ন ডলার বা ১৫ শতাংশ ঋণ নিয়েছে জাপান থেকে, তারপর চীন। নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ পদ্মা সেতু তৈরি করেছে। 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস কামালের কথা হুবহু প্রচার করলেও তাকে এক গোঁজামিলের ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাবলিক রিলেশন অফিসার গাজী তওহীদুল ইসলাম এক প্রতিবাদ দিয়েছেন, যা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের চিঠিপত্র কলামে ছাপা হয়। সেখানে কামালের বক্তব্য যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি বলে মন্তব্য করা হলেও মারপ্যাঁচে বরং ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনই স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এই প্রতিবাদ নাকি চীনের দূতাবাস থেকে পাঠানো হয়েছে। বস্তুত কামালের কোনো বক্তব্যকে বা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্টের কোনো অংশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি এই প্রতিবাদে। 

তাহলে কি চীনবিরোধী বক্তব্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী চীনের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করছেন। কারণ তার অর্থমন্ত্রী হওয়ার অন্যতম সমর্থক ছিল চীন। এখন চীন বাংলাদেশের জন্য শাঁখের করাত হিসেবে যেমন দেখা দিয়েছে। তেমনি ভারতের বা আমেরিকার সাথে সম্পর্ক কিংবা আইএমএফের ঋণ পাওয়ার স্বার্থে চীনের বিরোধিতা বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। ভারতের সাথে ঋণের সম্পর্ক নেই। ভারত ঋণ দেবে বলেও দেয় না। বাংলাদেশ ভারতের রেমিট্যান্সের অন্যতম উৎস। কিন্তু ভারত হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। সে জন্য এখন চীন নয়, ভারতই বাংলাদেশের রক্ষাকর্তা। কামাল সে কাজটাই করছে। 


শেয়ার করুন