২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৯:২১ অপরাহ্ন


বিএনপির প্রচারণায় আওয়ামী লীগ?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
বিএনপির প্রচারণায় আওয়ামী লীগ?


চলতি বছরের ডিসেম্বরেই হতে পারে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে  দলকে আরো সুসংগঠিত ও স্মার্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তুলতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ২ এপ্রিল শনিবার দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে আরও সুসংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এ জন্য সারা দেশে দলের কোন্দল-কলহ দূর করতে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে সূত্র ধরে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সফর করছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু এ সময় দেশের উন্নতির ফিরিস্তির পাশাপাশি বিএনপিকেই হাইলাইটস করছেন তারা বেশি। দীর্ঘদিন থেকেই এ কালচার চলছে। তবে এ ব্যাপারে গত এক দুই সপ্তাহের একটা চিত্র তুলে ধরা গেল। 

বাস্তবিক অর্থে বিএনপি মাঠের রাজনীতি থেকে এখনও ক্ষানিকটা দূরে। কিন্তু বিএনপির প্রচাররা বেশি বেশি করে দিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতারাই, তাদের অজান্তে। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যত বেশি বিএনপির বিরুদ্ধে বলা যাবে - ততই সে দলের কর্মকান্ডে সোচ্চার। এটাও ঠিক, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় তৃনমুলে ব্যাপক কোন্দল। কেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যে এ কোন্দল নিরসনের জন্য কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে। ফলে সেগুলোও দুশ্চিন্তার কারণ। কেননা তৃণমূলে সুবিধাভুগি ও সুবিধা বঞ্চিত গ্রুপ রয়েছে। একই সঙ্গে হাইব্রিডদের দৌরাত্ব্যও ভোগাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের। তাদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকার নির্দেশনা রয়েছে। 

ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ 

গত দুই এপ্রিল শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণ এখন বুঝে গেছে, বিএনপির আন্দোলনের ডাক দুরভিসন্ধিমূলক ফাঁকা আওয়াজ। যা মিথ্যাবাদী রাখাল ও বাঘের শিশুতোষ গল্পের কাহিনি ছাড়া আর কিছু নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন রেখে বলেছেন, তারা যে কথায় কথায় গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন দেখেন তাতে বিএনপির কে নেতৃত্ব দেবে? ওই দিন ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর মাঝে সদস্য সংগ্রহ বই বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যাকে আন্দোলনের নেতা বলছে সে তো দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়েছে। জনগণ সেই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে কেন গণঅভ্যুত্থান করবে? মিথ্যাচার আর বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে জনগণের কাছে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে বিএনপির প্রতি আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন ও নির্বাচনের ব্যর্থতা থেকেও বিএনপি শিক্ষা নিতে পারেনি? 

আনিসুল হক, আইনমন্ত্রী 

গত পহেলা এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কসবা টি আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে আয়োজিত পৌর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে, বিএনপির ‘ষড়যন্ত্রের’ কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমরা যখন আমাদের জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন করার কাজে লিপ্ত ছিলাম, তখন রাতের বেলা আপনারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুন করতে পেরেছিলেন। সেই সুযোগ আর পাবেন না, জনগণ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আপনাদের ষড়যন্ত্রের জবাব জনগণ টোকায় টোকায় দেবে। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ ছিল রাজাকার- আল শামসদের ঘাঁটি। তারা দেশটাকে চালাতো। তারা বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে মন্ত্রীত্ব করেছে। আর বলেছে বাংলাদেশের তো ভিক্ষা না করলে চলবে না। তারা গেছে ইউরোপে ভিক্ষার থলি নিয়ে। সেই থলি যতক্ষণ না ভরতো, ততক্ষণ বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণা দেওয়া হতো না। আর টাকা এনে ওনাদের পকেট আর ভ্যানিটি ব্যাগ ভরতো। শেখ হাসিনা আসার পর বাংলাদেশ উন্নয়ন দেখেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের সব সূচকে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ যে সারাবিশ্বের অনেক দেশ থেকে ভালো আছে, যারা পাকিস্তানপ্রেমী এটা তাদের পছন্দ হয় না। 

আব্দুর রাজ্জাক, কৃষি মন্ত্রী 

দ্রব্যমূল্য নিয়ে বিএনপির আন্দোলন, অনশন শোভা পায় না মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। পত্রপত্রিকা ও রেকর্ড থেকে প্রমাণ দিয়ে বলতে পারি, তাদের শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতিবছর মঙ্গা হয়েছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন মানুষ না খেয়ে থেকেছে।’ গত শনিবার ২ এপ্র্রিল দুপুরে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের নিয়মিত বৈঠকের শুরুতে বিএনপির মোর্চা গঠন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘এবারও তারা মোর্চা করার চেষ্টা করছে, প্রেসিডেন্ট আছে তো সেক্রেটারি নাই, দুজন নিয়ে দল। সেগুলো নিয়ে তারা মোর্চা করার চেষ্টা করছে। তারা চেষ্টার মধ্যে থাকতে পারে, তবে এই চেষ্টায় কোনো লাভ হবে না।’ 

ড: দিপুমনি, শিক্ষা মন্ত্রী 

শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেছেন, আগুন-সন্ত্রাস, নাশকতা করে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করা বিএনপির মুখে গণতন্ত্র মানায় না। বিএনপির এই ঐক্যজোট এখন জটে পরিণত হয়েছে। আর সেই জট থেকে তারা নিজেরাই বের হতে পারছে না। ১লা এপ্রিল শুক্রবার চাঁদপুর চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পালাখাল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, কিছু জনবিচ্ছিন্ন, জনগণ প্রত্যাখ্যাত তথাকথিত নেতা একসঙ্গে হয়ে কিছু চাইলেই সেটি হবে, এটি কখনও হয় না। পৃথিবীতে এমন কিছু হয়েছে তার নজির নেই। কোনো আন্দোলন করতে হলে সেখানে জনগণের দাবি না হলে, সেই দাবি এগোতে পারে না। 

হাসান মাহমুদ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী 

গত চার এপ্রিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মোর্চা করে লাভ নেই, আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে জনগণ। এ ধরনের মোর্চা তারা ২০১৮ সালের আগেও করেছিল। বাম-ডান, অতি বাম-অতি ডান, তালেবান সবাইকে নিয়ে তারা মোর্চা করেছিল, নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিল। সেই মোর্চার মাধ্যমে ফলাফল মাত্র পাঁচটি আসন। 

এর আগে গত ৩১ মার্চ ড. হাছান মাহমুদ অন্য এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপির বক্তব্য হল খালি কলসি বেশি বাজার মতো। তারা কখন কী বলে তারা নিজেই জানে না। যারা জামিন নেওয়ার জন্য পুরুষ হয়েও মহিলাদের বোরকা পরে হাইকোর্টে হাজির হয় তারা নাকি সরকার পতন ঘটাবে। আমরা গত কয়েক বছর আগে দেখেছি বিএনপি নেতারা বোরকা পরে হাইকোর্টের জামিন নিতে গিয়েছিল। এই লজ্জা বিএনপি কোথায় রাখবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন মন্ত্রী। 

শেখ ফজলে শামস্ পরশ, যুবলীগ চেয়ারম্যান 

গত ৩ এপ্রিল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করতে চাচ্ছে এবং করছে। তাদের একটা বড় ইস্যু হচ্ছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে। আপনারা একটু যাচাই বাছাই করে দেখেন, এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পিছনে মূল হোতা কারা। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা তাদের অতীত ইতিহাস কি তাহলে বুঝতে পারবেন এর পিছনে বিএনপির হাত আছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে বিএনপি-জামাতের কারসাজি এবং ষড়যন্ত্র রয়েছে। যুবলীগ নেতা-কর্মীদের জামাত-বিএনপির ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। এদিন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে মাসব্যাপী অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। 

জাহাঙ্গীর কবির নানক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আওয়ামী লীগ 

বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত একই মায়ের পেটের তিন ভাই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত থেকে সবাইকে  সতর্ক থাকতে। জামায়াত এখন গর্তে ঢুকেছে। বিপদ দেখলেই তারা গর্তে ঢুকে। বিপদ কেটে গেলে গর্ত থেকে বের হয়ে আবারো ষড়যন্ত্র শুরু করে। গত বুধবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর মুগদায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলনে জাহাঙ্গীর কবির নানক এসব কথা বলেন। 


শেয়ার করুন