২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:২৫:৪৪ পূর্বাহ্ন


বিএনপি-জাতীয় পার্টি ঐক্য?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৮-২০২২
বিএনপি-জাতীয় পার্টি ঐক্য?


নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করে আসছে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল। সরকার পতনের দাবিতে তারা চাচ্ছে ঐক্য। দলমত নির্বিশেষে ওই ঐক্য এক যোগে আন্দলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা। ও জনগণ যাতে তাদের যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নিতে পারে নিজেদের ভোটের মাধ্যমে সে অধিকার আদায়ে আন্দোলন। দীর্ঘদিন এ দাবি সামনে রেখে করে যাওয়া আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দুতেই বিএনপি। ইতিমধ্যে একটি বৃহৎ ঐক্যের লক্ষ্যে বিএনপি চাইছে প্রতিটা দলই যে যার অবস্থান থেকে আন্দোলন করুক। এবং সেটাতে যেন একই দাবি থাকে। এক জোট করার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন দাবিতে ঐক্য রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া।

বিএনপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যে ঘোষণাও করেছে, তারা এক দলের এক নেতার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনা নয়। যেসব দলগুলো বর্তমান সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্য থেকে আন্দোলন করবে তাদের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করে একটি ঐক্যমতের সরকার পরিচালনা করবে দেশ। সেখানে সহযোগী সব দলেরই থাকবে অংশগ্রহণ।  ওই দাবি সামনে বিএনপি যেমনটা মাঠের আন্দোলন বেগবান করছে। তেমনি সহযোগী দলগুলোর সঙ্গেও একে একে বৈঠক করে যাচ্ছে। ওই বৈঠক প্রায় শেষ পর্যায়েও। 

তবে দলের একটি অংশ বিএনপির ওই ঐক্যে পাশে চায় বর্তমান সরকারের অন্যতম শরীক দল অথবা বর্তমান সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করা ও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে থাকা জাতীয় পার্টিকে। 

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদের পর দলটির কেন্দ্রীয় দায়িত্বে তারই ভাই জিএম কাদের। সরকারে দলটি বিরোধী আসনে থাকতে থাকতে এখন অনেক কিছুই তারা কথা বলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সেক্টারের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশ্যেই কথা বলছে এখন জাতীয় পার্টি। যেমনটা ইভিএম। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল ইসির ডাকে সারা দিয়ে না গেলেও জাতীয় পার্টি কিন্তু ঠিকই গিয়েছে। এবং এই ইসিকে তারা মানছেও। তবে এ ইসির অধীনে নির্বাচনে গেলেও ইভিএম তারা মানবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে এসেছে। এখানে বিএনপির সঙ্গে তাদের কিছুটা মিল মানে ইভিএম প্রসঙ্গে মিল রয়েছে। কিন্তু বিএনপি তো নির্বাচনের দাবি করছে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার অধীন।  

জাতীয় পার্টি সরকারের পার্ট হলেও বেশ কিছু ইস্যুতে বিরোধ করছে। এগুলো বাড়ছে। যেমনটা জিএম কাদের দাবি করছে, ‘বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি লুটপাটের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।’ সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, (ভারতে যেয়ে বলেছি হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য) সেটার দায় সরকার এড়াতে পারে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে থাকা নিয়ে তার মন্তব্য- ‘এমপি, মন্ত্রী আর আওয়ামী লীগ কর্মীরাই বেহেশতে আছে’। বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্নস্থানে ঘটছে সব দুর্ঘটনা। আগুনে পুরছে। ক্রেন থেকে গার্ডার পরে গাড়িতে থাকা মানুষ পিষ্ট। নানা দুর্ঘটনা। এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে জিএম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ যেন অব্যবস্থাপনার স্বর্গরাজ্য। মনে হচ্ছে, জরিপে অব্যবস্থাপনায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশ। প্রতিদিনই অবহেলা আর অব্যবস্থাপনায় অসংখ্য মায়ের কোল খালি হবে এটিই যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনা এখন দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে তা সড়ক পথে হোক, নৌপথে হোক কিংবা শিল্পকারখানায় হোক অথবা যে কোনো জনসমাগম স্থলেই হোক। এভাবে চলতে পারে না, এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।’ 

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতেও তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, ‘৫১ শতাংশেরও বেশি পর্যন্ত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নির্দয় ও নজিরবিহীন।  জ্বালানি তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হবে। প্রমাণ হলো দেশের মানুষের প্রতি সরকারের কোন দরদ নেই।’ 

শুধু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরই নয়। দলটির মহাসচিবও একই রকম বক্তব্য রেখে চলছেন, বুঝানোর চেষ্টা করছেন তারা সরকারের সঙ্গে আর সেই সখ্যতায় নেই। অবশ্য অনেকেই এ ব্যাপারে মন্তব্যও করেছেন। যে জাতীয় পার্টি সবসময় সরকার দলের সঙ্গে সখ্যতা করেই তো চলছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও বিদেশে প্রচন্ড চাপে থাকায় হয়তো সঙ্গ ছাড়ার চিন্তা করছে দলটি।

বিএনপি অবশ্য অতসত ভাবছে না। প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটিকে আগে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। এরপর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে মানুষ সত্যের পথে ভোট দিতে সুযোগ পাবে। কারন মানুষ ক্ষমতাসীনদের শাসনে অতিষ্ট। তাই এ মুহূর্তে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্য হওয়া বাঞ্জনীয়। এখানে আর কোনো মতবিরোধ নয়। বিএনপি এ লক্ষ্যে জাতীয় পার্টিকে পাশে পেলে স্বাগত জানাবে। বিশেষ করে বিএনপির জাময়াত ইসলামী ত্যাগে নতুন কোনো ইঙ্গিত মিলেছে কি-না কে জানে। এটা ঠিক ভারত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে-ই এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে তারা জামায়াতকে চাইবে না। ফলে বিএনপিকে ওই স্থানে যেতে জামায়াত ছাড়তেই হবে। সে ক্ষেত্রে জামায়াতের বিকল্প হিসেবে বিএনপি যদি জাতীয় পার্টিকে চিন্তা করে থাকে সেটা মন্দ কী। তাছাড়া জাতীয় পার্টিকে হাতে আনা মানে আওয়ামী লীগকেও দুর্বল করে দেয়া। কারণ জাতীয় পার্টি মূলত সরকারেরই একটা পার্ট। 

এদিকে সিলেটের গুম হওয়া বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর ছেলের বিয়েতে একই টেবিলে বসেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। সেখান থেকেই গুঞ্জন শুরু। তবে ভেতরে ভেতরে দুইদলই চায় একে অপরের সহযোগিতা এবং কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলে সরকার পতন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নির্বাচনে জয় করলে জাতীয় পার্টি ভাল কোনো পদপদবী দাবি করলে সেটা দিতেও রাজি। 

জাতীয় পার্টিও এ ব্যাপার উদার হলেও তাদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। তাদের এ মুহূর্তে টার্গেট ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়া। ও সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। 

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির শীর্ষ এক নেতা দেশকে বলেন, ‘আসলে বড় দলগুলো সবসময়ই ক্ষমতায় গেলে অন্যদের কথা ভুলে যায়। তখন বড় দল হিসেবে নিজেদের প্রভাব পতিপত্তি বিস্তারে চেষ্টা করে। ফলে জাতীয় পার্টিও এখন এককভাবে ক্ষমতায় যেতে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে ঐক্য বা জোটের কোনো কথা হয়েছে কি-না সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, না। আমি যতদূর জানি বিএনপি থেকে এমন কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। তবে জাতীয় পার্টি নিজেই এখন একটি জোট করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দলটির চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলে এগুচ্ছেন। আশা করা যায় আগামী নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি একটি জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেবে এবং সরকার গঠনে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে ফেলবে।  

তবে সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের অবস্থানের উপর। ক্ষমতাসীন সরকার যদি সব দিক ম্যানেজ করে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে- সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ঠিকই সেখানে বিরোধী দল হতে নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি তো এ প্রক্রিয়ায়ই মানছে না। ফলে জাতীয় পার্টি এ মুহূর্তে বিশেষ করে নানা সমীকরণের মুহূর্তে নিজেদেরকে একটা পরিস্থিতি বোঝার উপর নির্ভর করে এগুচ্ছে। সুযোগ বুঝে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা এগুতে পারবে এতে তো তাদের কোনো বারণ থাকছে না!

শেয়ার করুন