১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৩:২৯:৪৯ পূর্বাহ্ন


মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা
আমরা যেভাবে রাজাকার-আলবদরের বিরোধিতা করি দুর্নীতিবাজদেরও বিরুদ্ধে বলবো
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৯-২০২২
আমরা যেভাবে রাজাকার-আলবদরের বিরোধিতা করি দুর্নীতিবাজদেরও বিরুদ্ধে বলবো অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা


জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করতে হবে এবং তাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিতে হবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে দেশবিরোধী শক্তি রাজাকার আলবদরদের বিরোধীতা করি, ঠিক তেমনিভাবে চোর এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বলবো। আমনরা একটি বেঈমান এবং মুনাফেক জাতি, আমরা আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ বাংলাদেশের নেতা নয়, তিনি বিশ্বমানের নেতা।

গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি সেন্টারে বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটের‌্যান্স ১৯৭১ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ সব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মেরাজের সভাপতিত্বে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আনোয়ার বাবলুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কন্সাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, নিউইয়র্কে বাংলাদেশি আমেরিকান মুলিম কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, বাঙালি সম্পাদত কৌশিক আহমেদ, সাংবাদিক লাবলু আনসার, সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়াামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক শাখার সভাপতি ফাহিম রেজা নূর, সংগঠনের উপদেষ্টা সুলতানউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট মিয়া জাকির, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ নাসির, গোপালগঞ্জ সোসাইটির সভাপতি মোল্লা এম এ মাসুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল হোসেন খসরু, তুরান প্রমুখ।

জন ল্যু বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার দূরদর্শিতাপূর্ণ নেতৃত্বে স্বাধীন একটি ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা করে শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে বিশেষ একটি স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এই স্বাধীনতার বিশেষ একটি গুরুত্ব রয়েছে, একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র  গঠনের পর তাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব আজ প্রশংসিত এবং তারই ধারাক্রম হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও নিজ নিজ অবস্থানে কৃতিত্ব প্রদর্শনে সক্ষম। আমি সব সময় বাংলাদেশিদের পাশে রয়েছি।’  ডেমক্র্যাটিক পার্টির এই স্টেট সিনেটর আরে বলেন, ‘তিন বছর আগে ঢাকা, সিলেট এবং কক্সবাজার পরিভ্রমণের সময় আমি বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রগতি দেখেছি। শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগুচ্ছে। এটি আমার ভালো লেগেছে। কারণ আমার এলাকার ভোটারগণের জন্মভূমি উন্নতি সাধন করলে তারা ভালো বোধ করেন এবং আমিও এক ধরনের তৃপ্তি লাভে সক্ষম হই।

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ইতিহাসে প্রথম মুসলমান নারী এবং প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন এবং তার বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শাহানা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ‘আপনারা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সঠিক ইতিহাস জানালে কেউই বিকৃত করতে সক্ষম হবে না। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মাইনি তাদেরকে সঠিক ইতিহাস জানাতে এ ধরনের আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মুনিরুল ইসলাম এমন আয়োজনের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না। তাঁর প্রতি আমাদের সকলের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অপপ্রচার চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের চেলাচামুন্ডারা কোনো ফায়দা পাবে না। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার উন্নয়নের সমর্থনে একীভ‚ত। অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্যের জের ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন কোন অস্থিরতা নেই। এবারো শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবে। তবে আমরা যেন এখানে নিজেদের মধ্যে কোন্দল বাধিয়ে ক্ষতি করছেন। মনে রাখবেন আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, এই দিনটি কি আমাদের পালন করার কথা ছিলো? আমরা আসলে নিমকহারাম, বেঈমান এবং মুনাফেক। যারা কিনা নিজের জাতির পিতাকে হত্যা করলো। ঐ সময় আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায় ছিলেন? পুলিশ প্রধান, সেনা প্রধান কোথায় ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নৃশংসতার নেপথ্য কুশিলবদের চিহ্নিত এবং শাস্তি প্রদানে অবিলম্বে একটি কমিশন গঠনের বিকল্প নেই। 

সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু এত বড়মাপের নেতা ছিলেন যে, কিশোর বয়স থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত কোনো ভুল করেননি। ৬৯ সত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে তিনি ছিলেন অবিচল। সত্তরের নির্বাচনে মওলানা ভাসানী অংশগ্রহণে মানা করেছিলেন, কিন্তু তিনি তা শুনেননি। যদি শুনতেন তাহলে হয়তো স্বাধীনতা আসতো না। তিনি আরো বলেন, একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। কোনো সংবাদপত্রই বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাৎকার নেয়নি। সে সময়কার খ্যাতনামা সাংবাদিক-সম্পাদকরা অনেকেই ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ। তবুও একটি সাক্ষাৎকার নেননি কেউই। 

গোলাম মোস্তফা খান মেরাজ বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করতে হবে এবং তাদের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু সেই সাথে দুর্নীতিও। আমরা যেভাবে রাজাহার- আলবদরদের বিরোধী করেছিলাম, ঠিক তেমনিভাবে চোর- দুর্নীতিবাজদেরও বিরোধীতা করবো।

নিনি ওয়াহেদ বলেন, আমি আজো বুঝতে পারিনি জাসদ কেন বঙ্গবন্ধুর বা বাকশালের বিরোধীতা করেছিলো। জাতিকে মূল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। সে জন্য জাসদকে ক্ষমা করা যায় না।

আলোচনার শুরুতে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়।

শেয়ার করুন