২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ৬:১৪:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


বদিউল আলম মজুমদারের প্রশ্ন
কিন্তু মানুষের উন্নতি হচ্ছে কোথায়?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৯-২০২২
কিন্তু মানুষের উন্নতি হচ্ছে কোথায়?


সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার  বলেছেন  দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, অবকাঠামো হচ্ছে, জিডিপি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চারিদিকে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের উন্নতি হচ্ছে কোথায়? ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষে সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলের রূপরেখা নিয়ে 


নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলের রূপরেখা নিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সঞ্চালনায় সভায় বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখ্বন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মায়ের ডাকের সংগঠক আফরোজা ইসলাম আঁখি, গুম হওয়া ইসমাইল হোসেন বাতেনের স্ত্রী নাসরিন জাহান স্মৃতিসহ অন্যান্য নাগরিক বৃন্দ।


গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি-র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নূরুল হক নূর, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মমিনুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভায় গণতন্ত্র মঞ্চের রাজনৈতিক ঘোষণা ও প্রস্তাব পাঠ করেন ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। 


 ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, অবকাঠামো হচ্ছে, জিডিপি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চারিদিকে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের উন্নতি হচ্ছে কোথায়? তিনি বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের সূচনা পদক্ষেপ হতে পারে। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনের আগপর্যন্ত সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে কিভাবে? অন্যথায় এটা হবে ১ দিনের গণতন্ত্র। তিনি আরো বলেন, সুজনের উদ্যোগে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সনদ নিয়ে তারা সকল রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলতে চায়।

তারা ২১ দফার ভিত্তিতে এ সনদ তৈরি করছেন। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, নির্বাচন সংস্কার, নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী সরকার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশন গঠন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, মানবাধিকার সংরক্ষণ করা, জাতীয় সম্পদের ওপর সাধারণের অধিকার নিশ্চিত করা, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নসহ অন্যান্য ইস্যুর ভিত্তিতে তৈরি হবে এ সনদ। 
 
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের বয়স ৫০ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ৫০ বছরে রাষ্ট্রের পরিণত হওয়ার কথা, দক্ষ ও মানবিক হওয়ার কথা। লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, পেশা নিরপেক্ষভাবে সকল মানুষের অধিকার সুরক্ষা হওয়ার কথা। গণতন্ত্রের অর্থ এর চেয়েও ব্যাপক। কিন্তু এর ন্যূনতম শর্ত হলো নির্বাচন। মানুষ ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জবাবদিহিতার মধ্যে থাকবেন। এই ন্যূনতম জাওয়াগাও অনুপস্থিত। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন ৩য় উন্নয়ন দশক দেখছে। প্রথমটি ছিলো আয়ুব খানের উন্নয়ন দশক, দ্বিতীয়টি এরশাদের এবং তৃতীয়টি শেখ হাসিনার। এই কর্তৃত্ববাদী উন্নয়নের পরিসমাপ্তি ঘটেছে জনগণের বিদ্রোহের ভেতর দিয়ে ৬৯ সালে, ৯০ সালে এবং তৃতীয়টিও আসন্ন। ৯০ এর গণআন্দোলনের ভেতর দিয়ে কথিত গণতান্ত্রিক শাসন শুরু হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু সেটিরও ধারাবাহিকতা থাকেনি। এই নির্বাচিত সরকারের অধীনে কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠি বিপুল সম্পদশালী হয়েছে এবং সম্পদ পাচার হয়েছে। এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম চরিত্র হচ্ছে বিচারহীনতা, গুম, ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা। জনগণের সম্মিলিত উত্থানের ভেতর দিয়েই এর পরিবর্তন ঘটবে। 

ড. আসিফ নজরুল বলেন, পুলিশলীগ, প্রশানলীগ, নির্বাচন কমিশনলীগ ইত্যাদি বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অধিনেই নির্বাচন করতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি সংবিধানে আছে? সংবিধানে অনেক কিছুই থাকেনা, কিন্তু প্রয়োজনে সংযোজন বিয়োজন করতে হয়। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন যদি ১ দিনের গণতন্ত্র হয় তবুও তা দরকার। কেননা এটা অন্তত জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে।


রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ ব্যতিত ও সাচ্চা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য যা প্রয়োজন তা করতে হবে।  অনুষ্ঠানে গুম শিকার ব্যবসায়ী বাতেনের স্ত্রী নাসরীন জাহান স্মৃতি বলেন, সরকার ও প্রশাসন গুম হওয়া পরিবারের লোকজনের সাথে কোনো সহযোগিতা তো করেনা বরং ভয়াবহ নিষ্ঠুর আচরণ করে। তাদের আচরণে থাকে বিদ্রুপ এবং তারা পরিবারগুলোর সাথে হাসি-ঠাট্টা, তামাশা করে। এমনকি ঈদ-উপহার দেয়ার নাম করে সেটার ছবি তুলে সামাজিক গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে চরম অপমান পর্যন্ত করা হয়েছে। আর সরকার গুমের তদন্ত করা তো দূরের কথা, কোনো উদ্যোগও নেয়নি। বরং হয় জানি আর নানা হুমকির মধ্যে ফেলে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই রাষ্ট্রে আমাদের মতো নাগরিকদের জীবনের পরিণতি এইরকম। 

সভায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ আলোচকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ফ্যাসিবাদী দুঃশাসক ভোটডাকাত এই সরকার রাষ্ট্রকে এমনভাবে কুক্ষিগত করেছে যে এখন একটি ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করারও কোনো অবকাশ নেই। ফলে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন মানেই আরেকটি নীল নকশার ও তামাশার নির্বাচন। আর সরকার সেটা করতে সফল হলে দেশ এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাবে।  নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। এবং কাঠামোগত ও সাংবিধানিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে শাসনতন্ত্রের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনে দেশের সকল রাজনৈতিক দল মিলে একটি রাজনৈতিক বন্দেবস্তে পৌঁছাতে হবে। যা কেবল সরকার পরিবর্তনের এক দফা নয় বরং সরকার ও পুরো শাসনব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পরিবর্তন। তা না হলে স্বৈরতন্ত্রই বারবা জেঁকে বসবে। 

তাঁরা আরো বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছে। ইতিমধ্যে অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিভিন্ন দফা হাজির করেছেন। এখন যৌথ চূড়ান্ত আন্দোলন ও রাজপথের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি সময়ের ব্যাপার মাত্র। 

বক্তাগণ বলেন, দেশের অনিবার্য ধ্বংস রুখতে হলে জনগণের আশু দায়িত্ব হলো ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সাথে সাথে এই রাষ্ট্রের গণতান্তিক রূপান্তর। বাংলাদেশের জনগণের সামনে এটিই এখন প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য। নেতৃবৃন্দ দেশের জনগণের প্রতি সকল অত্যাচার দমন-পীড়ন নির্যাতন এবং হত্যা যুগের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে ফ্যাসিবাদী এই সরকার ও শাসনব্যবস্থার পতনের লড়াইকে জোরদার করার আহ্বান জানান।  

শেয়ার করুন