২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৭:২৯ অপরাহ্ন


নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এয়ারপোর্টে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাচ্ছেন দুই রাষ্ট্রদূত


জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন গত ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। এ অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হয় ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণ করেন। তাকে স্বাগত জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুহিত ও ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাহমুদ ইমরান। প্রধানমন্ত্রীর সাথে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ আরো কয়েকজন মন্ত্রী এবং এমপি। নিউইয়র্ক আসার পূর্বে প্রধানমন্ত্রী ১৫-১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য সফরে ছিলেন। তিনি সেখানে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন এবং এদিনই নিউইয়র্কে আসেন। নিউইয়র্কের সফর শেষে তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘে ভাষন দেবেন আগমিী ২৩ সেপ্টেম্বর। জাতিসংঘে তিনি বাংলায় ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেবেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুটো গ্রুপ দুটো স্থানে সংবর্ধনার আয়োজন করে। নাগরিক সংবর্ধনা শেষে প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনে যাবেন। জানা গেছে, ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী এবারো দুটো এওয়ার্ড গ্রহণ করবেন।


জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের যুক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি সেক্টরে ৪০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে সাধারণ পরিষদের সভাপতি কাসাবা কোরোসি আহূত ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারর্স-এর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংকটে সময় নারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সংকটের কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের যুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। সব ধরনের গতানুগতিকতা ভেঙে এবং অদম্য সাহস এবং নেতৃত্বের দক্ষতা দেখিয়ে নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

এ সময় তিন দফা প্রস্তাব করেন তিনি। তা হলো, লিঙ্গ সমতার বিষয়ক উপদেষ্টা বোর্ডের স্থানীয়করণ, পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিক উপায়ে নারী নেতৃত্বাধীন সুশীল সমাজ-সংস্থাকে লালন ও সমর্থন এবং লিঙ্গ সমতার জন্য সাধারণ এজেন্ডাকে শক্তিশালী করতে নেতৃবৃন্দের একটি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান।

শেখ হাসিনা তার প্রথম দফা প্রস্তাবে লিঙ্গ সমতা বিষয়ে উপদেষ্টা বোর্ড গঠনের সুপারিশ করে বলেন, এটি এখন স্থানীয়করণ করা দরকার। আমাদের সব স্তরে জেন্ডার চ্যাম্পিয়নদের প্রয়োজন, বিশেষ করে তৃণমূল স্তরে। এছাড়াও নারী-নেতৃত্বাধীন সুশীল সমাজ সংস্থাকে পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিক উপায়ে লালন-পালন এবং সমর্থন করা প্রয়োজন। তিনি তার দ্বিতীয় দফায় বলেন, এই ধরনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

সর্বশেষে তিনি লিঙ্গ সমতার জন্য তাদের সাধারণ এজেন্ডাকে শক্তিশালী করতে নেতৃবৃন্দের একটি শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করার লক্ষ্যে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, শুধু আমাদের নয়, সকল নেতাদের লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের অগ্রগতির জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত এবং উপস্থাপন করা উচিত। 

বাংলাদেশের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার নারীদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং তাদের আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নতুন উপায় তৈরি করাসহ নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টের (এমডিজি) তিনটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। আমরা লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতীয় বাজেটের প্রায় ২৭ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক পটভূমিতে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ থেকে সর্বনিম্নস্থর পর্যন্ত সকল স্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে। আমরা আমাদের নারীদের সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এগিয়ে নিয়ে আসছি। 

নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নারী ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের জন্য সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে আমরা ব্যবসার জন্য লিঙ্গ-নিরপেক্ষ আইনি কাঠামো গড়ে তোলায় সুনির্দিষ্ট নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে। পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের ১৫ শতাংশ তহবিল, ১০ শতাংশ শিল্প প্লট এবং ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তহবিল নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ডেডিকেটেড ডেস্ক রয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে ৪০ লাখের বেশি নারী কর্মরত এবং দেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ নারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে নারীর অবদান ৩৪ শতাংশ। 

বর্তমানে বিশ্ব কোভিড মহামারীসহ একটি বহুমাত্রিক সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। বহুমাত্রিক বৈশ্বিকসংকট মোকাবিলায় কার্যকর ও উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করা একান্ত প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে, এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য হিসেবে Watershed moment: Transformative Solutions to interlocking challenges শীর্ষক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

করোনা মহামারী ও বিশ্বে চলমান বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফূতি হয়েছে। নতুন এ সংকটের ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে। এসকল কারণে জাতিসংঘের এই সাধারণ অধিবেশনে করোনা মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, বহুপাক্ষিকতাবাদ, টেকসই আবাসন, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অবকাঠামো গঠনের বিষয়সমূহ আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল গুরুত্বপূর্ণ এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত অগ্রাধিকার বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। 


উচ্চপর্যায়ের সভাসমূহ

প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও সাধারণ বিতর্ক পর্ব চলাকালীন বেশকিছু উচ্চপর্যায়ের সভা (High Level Meeting) অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উচ্চপর্যায়ের সভাসমূহ হলো: ১) Transforming Education Summit (TES) শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সভা। এই উচ্চপর্যায়ের সভাটি ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীকে Transforming Education Summit এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, Digital Transformation শীর্ষক Spotlight Session  এ অংশগ্রহণ এবং Leaders Roundtable এ সভাপতিত্ব করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

২) Meeting of the Champions of the Global Crisis Response Group (GCRG) বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সভাটি ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। উচ্চপর্যায়ের এ গ্রুপে ছয় জন চ্যাম্পিয়নের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। ২২ মার্চ তারিখে জাতিসংঘ মহাসচিব খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক বিষয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ছয়টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণের সমন্বয়ে এ গ্রুপটি গঠন করেন। উচ্চপর্যায়ের এ সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করবেন। উক্ত বৈঠকে এ-৭, এ-২০ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। ৩) ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে Antimicrobial Resistance (AMR) বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধানমন্ত্রী কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ও বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী Antimicrobial Resistance (AMR) বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গঠিত One Health Global Leaders Group on Antimicrobial Resistance (AMR)’- শীর্ষক গ্রুপের সহ-সভাপতি। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা জীবাণুরোধক ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ও উদ্বেগজনক ব্যবহারের কারণে ব্যক্তি, প্রাণি বা উদ্ভিদের দেহ এসকল ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। যার ফলে জনস্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির ওপর সুদূরপ্রসারি বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও এ সমস্যার টেকসই সমাধানই এই উচ্চপর্যায়ের সভার মূল লক্ষ্য। ৪) ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তিখাত বিকাশে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। করোনা মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে সামষ্টিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যে প্রতিকূলতার মুখামুখি হতে হবে সে বিষয়টি এবং সংকট মোকাবিলায় একতরফা জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ কিংবা নিষেধাজ্ঞার মতো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সংকট সমাধানে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান এবং বহুপাক্ষিকতাবাদকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে গুরুত্বারোপ করতে পারেন। করোনার মতো ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে টিকা এবং প্রতিষেধকের ন্যায্য ও আরো ন্যায়সঙ্গত বণ্টনের জন্য আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করতে পারেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উপায় খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাতে পারেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থার বিষয়ে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ অভিবাসন অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জলবায়ুপরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তাঁর বক্তব্যে উঠে আসবে। ৫) এবারের অধিবেশনে The Future of Digital Cooperation: Building resilience through safe, trusted and inclusive digital public infrastructure এবং High-level Roundtable on Multilateralism and Food Security-সহ আরো দুটি পৃথক উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ দুটি উচ্চপর্যায়ের সভায় উপযুক্ত প্রতিনিধি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। 


সাইড ইভেন্টসমূহ: 

৬) কোভিড-১৯ জনিত কারণে এবার কোনো সাইড ইভেন্ট জাতিসংঘ সদর দফতরের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত হবে না। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা এবং টেকসই আবাসন বিষয়ে পৃথক দুটি সাইড ইভেন্ট আয়োজন করবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্ট ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি সেক্রেটারিয়েট, কানাডা, সৌদি আরব, তুর্কি, গাম্বিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা বিষয়ক সাইড ইভেন্ট কো-স্পন্সর করবে। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের মায়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক সাইড ইভেন্টে রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্রিফ করবেন। ৭) টেকসই আবাসন বিষয়ক সাইড ইভেন্টটি ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ আবাসন সংস্থা যৌথভাবে সাইড ইভেন্টটি আয়োজন করছে। প্রধানমন্ত্রী টেকসই আবাসন বিষয়ক সাইড ইভেন্টটিতে অংশগ্রহণ করবেন এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত আশ্রয়ণ প্রকল্পের সফলতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। ৮) সাইড ইভেন্ট দুটি আয়োজনের পাশাপাশি জাতিসংঘ সদর দফতরের ভেতরে পদ্মা বহুমুখী সেতুবিষয়ক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধিকল্পে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু বিশ্বসভায় একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব বিষয়ে বেশ কয়েকটি সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এসব সাইড ইভেন্ট বাংলাদেশের উপযুক্ত প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন।


দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও অন্যান্য সভা

৯) প্রধানমন্ত্রী প্রতিবারের মতো বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। কসোভোর প্রেসিডেন্ট, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট, স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালকের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ১০) প্রতিবারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আয়োজনে একটি গোলটেবিল  বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়সমূহ উপস্থাপনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের নিকট তুলে ধরবেন। এর মাধ্যমে দু’দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি হবে। এছাড়া প্রতি বছরের মতো এবারো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি রিসেপশন আয়োজন করবেন। এটি অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। এছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানকালে তিনি একাধিক বৈঠকে অংশ নিতে পারেন।

এবারের জাতিসংঘের Priority ইস্যুগুলো প্রত্যেকটি বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যুগুলোর ওপর যেসব ইভেন্ট আছে বাংলাদেশ তার সবক’টিতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক কূটনীতিকে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে মনে করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে বাংলাদেশের নিবিড় অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে অক্ষুণ্ণ থাকবে। একটি শান্তিপূর্ণ ও মানবিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সাফল্য আজ সর্বজনবিদিত। এর ধারাবাহিকতায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের দৃপ্ত পদচারণাকে আরো সমুন্নত করবে।

শেয়ার করুন