২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১০:২১:৩৬ অপরাহ্ন


ভারতে দেওবন্দী জমিয়তপন্থীরা মোদি ও আদিত্যের পক্ষে
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১০-২০২২
ভারতে দেওবন্দী জমিয়তপন্থীরা মোদি ও আদিত্যের পক্ষে নরেন্দ্র মোদি


ভারতের সবচেয়ে পুরোনো মুসলিম সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ তাদের সরকারের পক্ষে দালালিকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে ভারতে। তারা ভারতীয় জনতা পার্টি অর্থাৎ  নরেন্দ্র মোদির হাতকে শক্তিশালী করে পথ চলছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিশে মুশাওয়ারাত সভাপতি নাবায়েদ হামিদ এই তেলেসমাতির বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন, ভয় ও মুসলমানিত্ব একসাথে চলতে পারে না। যারা ভয় করে তারা কি নিজেদেরকে, নিজেদের সন্তানকে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কোরবানি করতে পারতো? তারপরও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ, যারা পাকিস্তান আন্দোলনের সময় পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিল, বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তাদের পাকিস্তানি সাগরেদরা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন নরেন্দ্র মোদির দালালিতে নেমেছে। 

ভাতের সবচেয়ে পুরোনো মুসলিম সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার সদস্যদের কেন্দ্র কর্তৃক গ্রেফতারের বিরুদ্ধে নীরব থেকেছে। শুধু তাই নয়, এই সংগঠন সাম্প্রতিককালে সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে অনেকে প্রতিবাদ করলেও তারা এই আইনের বিরুদ্ধেও নীরব থেকেছে, বরং বিবৃতি দিয়ে একে সমর্থন জানিয়েছে। 

নীরবে অনেকটা খোলাখুলিভাবে ভারতের এই সবচেয়ে পুরোনো মুসলিম সংগঠন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দু ভারতীয় জনতা পার্টিকে লাগোয়া উৎসাহিত করছে।

যদিও জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ বিজেপিকে সমর্থন করার জন্য কোনো খোলাখুলি বিবৃতি দেয়নি। তারপরও দেখা যায়, তারা বিজেপিকে সমর্থন করে খুশি। ১২টি মুসলিম সংগঠনের ফেডারেশনের অন্য সংগঠনগুলো জমিয়তের মতো এ কাজ করেনি। 

দেশে যখন শতাধিক নেতা গ্রেফতার হয়েছে, জমিয়ত তখন নীরব থেকেছে। যেমন অনেকটা মুঘল আমলের শেষদিকের মোহাম্মদ শাহ রঙ্গীলার মতো তাদের নীরবতা। এমনকি তাদের অন্যতম মিত্র সংগঠন জামায়াতে ইসলামীও তাদেরকে কেয়ারনেস ও স্বচ্ছতার প্রমাণ রাখতে বলেছে। কিন্তু জমিয়ত তাতে কর্ণপাত না করে তার হাত ধুয়ে মুছে বসে আছে। সংগঠনটির মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা তাদের সাথেও নেই, পাছেও নেই। আইনকে নিজের গতিতে চলতে দিন।’

জামায়াত যখন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়াকে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে, তখন জমিয়ত নীরব থেকেছে এই নিষেধাজ্ঞার ওপর। সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্য নাথের সরকার কর্তৃক মাদরাসা জরিপের প্রতি জমিয়তের সমর্থন। জমিয়তের প্রেসিডেন্ট আরশাদ মাদানীর শেকড় হচ্ছে দেওবন্দ মাদরাসা। উত্তর প্রদেশের এই মাদরাসার বিরাট ইতিহাস থাকলেও তারা এখন তালেবানদের আদর্শ হিসেবে দাঁড় হয়েছে। আরশাদ মাদানী সম্প্রতি ডিগবাজি খেয়ে বলেছেন, যারা ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে তারাই দারুল উলুম, দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হতে পারবে। মাদানী সাহেব বলেছেন, সার্ভে বা জরিপের যে চালচিত্র প্রকাশ হয়েছে ইতিমধ্যে তাতে ভয়ের কিছু নেই। মাদানীর জরিপের পক্ষে এই বিবৃতি প্রকাশ হয়েছে নয়াদিল্লিতে উত্তর প্রদেশের প্রায় ২০০ মাদরাসার রেক্টরদের সমাবেশে তার অংশগ্রহণের পর। এই সভায় জমিয়ত প্রতিশ্রুতি দেয় যে কোনো মূল্যে মাদরাসা রক্ষা করার এবং জরিপকে দূরভিসন্ধির ওপর কষাঘাত বলে বর্ণনা করেন। 

জমিয়তের এই দ্রুত বর্ণচোরা নীতি ডিসেম্বর ২০১৯ সালে সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট বিল পাস হওয়ার পর সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ মাদানীর গৃহীত পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সে সময় মাহমুদ বিলটিকে সমর্থন করে এবং বিজেপির অমিত শাহের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলে বিলটিতে ভারতীয় মুসলমানদের সম্পর্কে করার কিছুই নেই। এজন্য তাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

যা হোক, এই বিল পাস হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে শাহীনবাগ প্রতিবাদ শুরু হয়। তাতে যোগ দেয় জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। এতে পুরো সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং মাহমুদ মাদানী দ্রুত দেয়ালের প্রচারিত লেখা পড়ে নেয় এবং তাড়াতাড়ি আরেকদফা ডিগবাজি খেলে। তারপর বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যারা সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের বিরোধিতা করেন, তাদের সাথে মিলে আওয়াজ তোলেন। তাদের মধ্যে দু’জন অবশ্য সাম্প্রতিককালে আরএসএম (রাষ্ট্রীয় শ্যাম সেবক) প্রধান সিং মোহন ভগবতের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

তার পূর্বে জমিয়ত প্রধান সিং আরশাদ মাদানী আরএসএস অফিসে ভগবতের সাথে দেখা করতে নয়াদিল্লি আসেন। এই সভা হয় ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) নিয়ে আসামে সৃষ্ট হট্টগোলের মধ্যে। আরশাদ মাদানী এরপর বলেন, ‘যারা এনআরসি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয়ই আছে। জমিয়ত এনআরসির কারণে রেজিস্ট্রেশনের বাইরে পড়ে যাওয়া সবার জন্য ব্যথিত। হিন্দু-মুসলিম বা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী যেই হোক না কেন?’

জমিয়তের এই নতুন রাজনৈতিক ভাষা সবাইকে স্তম্ভিত করেছে। এই জমিয়তে সবসময় কংগ্রেসের সাথে যুক্ত ছিল স্বাধীনতা থেকে। আগেই বলেছি, তারা পাকিস্তানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। উত্তর প্রদেশে সাম্প্রতিক সময়ে তারা সমাজবাদী পার্টিকে গোপনে সমর্থন দিতো। জমিয়ত সদস্যরা বলেন, ‘এটা সত্য যে, জমিয়ত কংগ্রেসের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিল; কিন্তু আজ কংগ্রেস কোথায়? এটা একটা অস্তিত্বের সমঝোতা, ‘যদি মাছকে জলে থাকতে হয়, তাহলে মাছ কুমিরের সাথে যুদ্ধ করতে পারে না।’

শেয়ার করুন