১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:০১:৫৩ পূর্বাহ্ন


ভয়ঙ্কর সংকটের পথে বাংলাদেশ?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২২
ভয়ঙ্কর সংকটের পথে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের চলছে স্মরণকালের ভয়াবহ জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট।


দেশে অনুশীলনী গণতন্ত্রের অভাবে অবাধ দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা বাংলাদেশকে কোন পথে নিয়ে চলেছে কেউ জানে না। এমনিতেই করোনার অভিঘাত আর ইউক্রেন যুদ্ধের আড়ালে দুই পরাশক্তির ছায়াযুদ্ধে বিশ্বজোড়া দুর্ভিক্ষের আওয়াজ। তদুপরি নানা কারণে বাংলাদেশের চলছে স্মরণকালের ভয়াবহ জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট। বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ শিল্পখাতে (বিশেষ করে রফতানিমুখী শিল্প) সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজার পাগলা ঘোড়া।

ডলার সংকটে আমদানি খাতেও অশুভ প্রভাব। সরকারপ্রধান বারবার আসন্ন দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন। কিন্তু এতোকিছুর মাঝেও কারণে-অকারণে চলছে সরকারবিরোধী দলের বাহাস। দেশ-জাতির ক্রান্তিলগ্নে সরকারি দলের যেমন সহিষ্ণুতার প্রয়োজন, ঠিক তেমনি বিরোধীদলকেও দায়িত্বশীল আচরণ করার প্রয়োজন আছে। রাজনৈতিক সংঘাতে অরাজকতা সৃষ্টি হলে কারো জন্যই মঙ্গল হবে না। আমার মনে হয় সরকারি দলের যেমন সংযত আচরণ করা উচিত, তেমনি বিরোধীদলগুলোর উচিত জনঘনিষ্ঠ বিষয়সমূহ নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে নিজেদের অবস্থান আর পরিকল্পনা জনগণের কাছে তুলে ধরা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ জনগণের কাছে সরকারি আর বিরোধীদল কারো আচরণই এখন গ্রহণযোগ্য নয়।

গ্যাস-বিদ্যুৎ বর্তমান সংকটের জন্য সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধীদল উভয় সমানভাবে দায়ী। বিএনপি-জাময়াত সরকার ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত সময়কালে না করতে পেরেছে গ্যাস-তেল অনুসন্ধান, না স্থাপন করেছে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। বরং সারা দেশে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করে খাম্বা বদনাম অর্জন করেছে। বর্তমান সরকার তীব্র বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট মাথায় নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে নানাভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে, রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সমগ্র দেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় এনেছে। কিন্তু নিজস্ব জ্বালানিসম্পদ উন্নয়নে বিএনপি-জামায়াত সরকারের মতোই উদাসীন থেকেছে। নতুন নতুন গ্যাস উৎপাদনের যথাযথ উদ্যোগ না নিয়ে গ্যাস সঞ্চালন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করে সঞ্চালন কোম্পানিকে দেউলিয়া করেছে। 

দুই সরকারের সমান ব্যর্থতা আছে কয়লাসম্পদ উন্নয়ন না করায়। নিজস্ব জ্বালানিসম্পদ উন্নয়ন না করে আমদানিকৃত জ্বালানির দিকে ঝুঁকে সরকার সংকট ডেকে এনেছে। বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই বলেছে কয়লা-গ্যাস উত্তোলনে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেয়ার। কিন্তু সরকার আমলাদের সুপারিশে কিছু চিহ্নিত ব্যবসায়ীকে সুযোগ দেয়ায় বর্তমান সংকটময় জ্বালানি বাজার থেকে উচ্চমূল্যে জ্বালানি কিনতে না পারায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কাগজ-কলমে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে ব্যর্থ হয়ে দেশকে ৪-৫ঘণ্টা বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের দিকে নিয়ে গেছে।

বর্তমানে গ্যাসখাতে বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি আর অবৈধ ব্যবহার আছে। গ্যাস চুরি বন্ধ আর অপচয় রোধে সরকার আর বিরোধীদলের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এখন বিকল্প আছে বলে মনে হয় না। একইসঙ্গে কয়লা উত্তোলন বিষয়েও জাতীয় সহমত প্রয়োজন। বাংলাদেশ সহসা বিশ্ব জ্বালানি বাজার থেকে উচ্চমূল্য দিয়ে জ্বালানি কিনতে পারবে না। জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদনে সংকট বজায় থাকলে রফতানি বাডুজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। অর্থনৈতিক সংকট হলে কারো জন্যই মঙ্গল হবে না।

সবাই জানে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের কারণে সর্বত্র অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতি হওয়ায় দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ নানাভাবে বিদেশে পাচার হয়েছে। কারো কাছে অর্থপাচারকারী  অমানুষগুলোর বিষয়ে  সঠিক তথ্য থাকলে তা জনগণকে জানানো উচিত। তাহলে দেশ প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা ওদের ঘৃণা করবে। সরকার তখন ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। 

২০২৩ শেষে বা ২০১৪ শুরুতে জাতীয় নির্বাচন। দেশের সচেতন মানুষ আর সচেতন বিশ্ব মহলের কারণে এবারে ২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো অস্বচ্ছ, বিতর্কিত নির্বাচন সম্ভব হবে না। সরকারি দল স্বপ্নের সংস্কৃতি পরিহার করে বাস্তব অবস্থা মেনে না নিলে সংকটে পড়বে। চারদিকে সংকট ঘনিয়ে আসছে। উন্মুক্ত বিশ্ব মিডিয়ার কারণে সচেতন দেশবাসী অনেক সজাগ। মানুষকে বোকা ভাবা সমীচীন হবে না। 

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সরকারি দলে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। দলের সকল পর্যায়ে সংস্কার করে তৃণমূলের নিবেদিত নেতাদের মূল ভূমিকায় স্থাপন করলে, সঠিক পেশাদারদের যথাস্থানে কাজ করতে দিলে সরকার উতরে যাবে, না হলে বিপদ। সরকারি কর্মকর্তাদের অকাল অবসর দেয়া হচ্ছে। এটি শুভ লক্ষণ নয়। সবাই জানে সরকারের ভুল কৌশলের কারণে অনেক সরকারবিরোধী কর্মকর্তা ভোল পাল্টে সরকারের তোষামোদ করে আখের গুছিয়েছে। বিপুল সংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তা বঞ্চিত থেকেছে। 

সরকারের কৌশল শেষ মুহূর্তে বুমেরাং হবার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকের মতে, সচিব পর্যায়েও অনেক সরকারবিরোধী মনোভাবের বর্ণচোরা কর্মকর্তা আছে। বিদেশে দূতাবাসেও অনেক কর্মকর্তা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। 

সারকথা, আসন্ন এবং অনিবার্য বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট সামনে রেখে এখন প্রয়োজন ন্যূনতম পর্যায়ে সরকার আর বিরোধী মতের সমঝোতা। না হলে অরাজকতা সৃষ্টি হয়ে দেশের অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হবে। আশা করি সংকটের পটভূমিতে দেশপ্রেমিক জনগণ জেগে উঠবে। 

শেয়ার করুন