২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:৫৫:১০ অপরাহ্ন


অর্থমন্ত্রী কী নিষ্ক্রিয়?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
অর্থমন্ত্রী কী নিষ্ক্রিয়? অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল


দেশের রিজার্ভের টাকা নিয়ে তোলপাড়। প্রতিনিয়তই এ সংক্রান্ত হিসাব বের হচ্ছে। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে বলে সরকারবিরোধীরা সরব। সে সপক্ষে যুক্তিও তুলে ধরছেন তারা প্রতিনিয়ত। সরকারের তরফ থেকে সেটাকে অনেকটাই অস্বীকার করা হচ্ছে। এমন তোলপাড়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ ও জ্বালানি সংকটের নেপথ্যের কারণ অর্থের অভাব বলে ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। কিন্তু তার ওই বক্তব্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বিব্রতকর একটা পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ালে মন্ত্রী পর্যায় থেকে এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এরপর রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি বরং সেটা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগছে বলে জানান দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

কিন্তু রিজার্ভ এর বিষয় ও দেশের অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকটের মুহূর্তে যার মুখ থেকে সত্যি ও নির্ভরযোগ্য কথা শোনার অপেক্ষা সাধারণ মানুষের, তিনি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু তাকে তো খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন থেকেই এ সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। অথচ বাস্তবচিত্র হচ্ছে, দেশের অর্থনীতির ওপর এখন নানামুখী চাপ। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনযাত্রাকে একরকম অসহনীয় করে তুলেছে। দেশে বিরাজমান প্রচ- ডলার সংকট। ব্যাংকগুলো প্রায়ই এলসি খুলতে অনীহা জানাচ্ছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায়। কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। জ্বালানি সংকটে দেশে বিদ্যুৎ সংকট শিগগিরই কাটার লক্ষণও নেই। এককথায় অর্থনীতির প্রায় সব সূচকেই সমস্যা। 

আসলে করোনা পরবর্তীতে এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে গোটা বিশ্বের অর্থনীতির অবস্থা সংকটাপন্ন। গোটা বিশ্বের অর্থমন্ত্রী ও ওইসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা পরিস্থিতি তাদের দেশের অর্থনীতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিত্যনতুন কৌশল নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছেন তারা। আসলে গোটা বিশ্বেই এখন সংকটে অর্থনীতি। তাই প্রতিটা দেশেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থনীতি গুরুত্ব পাচ্ছে এবং তাদের ব্যাপক কর্মতৎপরতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২০২৩ সনে একটা দুর্ভিক্ষ আসতে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। এছাড়াও বিশ্বব্যাপীও অন্তর্জাতিক মহল থেকেও অমন আভাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু এমনি মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী সম্পূর্ণ আড়ালে। যাচ্ছেন না বিদেশের কোনো সভায়। দেশেও নেই তার চোখে পড়ার মতো কোনো তৎপরতা। জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তিনি মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত অফিস করেন না, গুরুত্বপূর্ণ অনেক সভায় থাকছেন না, এককথায় তিনি নিষ্ক্রিয়। অথচ এ মুহূর্তে তারই সবচেয়ে সরব থাকার কথা। বাধ্য হয়েই এ প্রসঙ্গগুলো নিয়ে কথা বলছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। রিজার্ভ নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনার মধ্যে তিনি বলেছেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়, যারা এই প্রশ্নটা করেন তাদের বলছি রিজার্ভের টাকা গেল পায়রা বন্দরে, রিজার্ভের টাকা গেছে দেশের জনগণের জন্য খাদ্য কেনায়, সার কেনায়। রিজার্ভের টাকা জনগণের কল্যাণে এবং আমদানিতে ব্যয় হয়েছে। কেউ এই অর্থ আত্মসাৎ বা অপব্যবহার করেনি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘এ টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি। মানুষের কাজেই লাগছে, কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের আমদানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী তার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল নিজস্ব অর্থায়নে এটি করবেন। কারণ বিদেশি অর্থে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা দিয়েই তিনি একটি ফান্ড তৈরি করেন। যার নামও তিনি নিজেই রাখেন ‘বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড’ (বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল) এবং সেই ফান্ডের টাকা দিয়েই বন্দরের ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। যাতে আমাদের রিজার্ভের টাকা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা সম্ভব হয়। সেজন্যই এই পদক্ষেপ বলেও তিনি জানান। 

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পটভূমি রাখার কথা অর্থমন্ত্রীর। কিন্তু তিনি এ প্রসঙ্গে চুপ। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের সব সংকট। সব বিষয় নিয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপনের দায়িত্বটা প্রধানমন্ত্রীর। শতব্যস্ততার মধ্যে কেন তিনি এ সকল প্রশ্নেরও উত্তর দেবেন। এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অর্থমন্ত্রীর তাহলে কাজ কী? তিনি তো পদত্যাগ করেননি। সরকারি সব ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা ঠিকই গ্রহণ করছেন। তাহলে দেশের সংকটে তারই এখন মুখ্য ভূমিকা ও মানুষকে আশ্বস্ত করার দায়িত্বটা অর্থমন্ত্রীর। স্বাভাবিকভাবেই দেশের এমনি মুহূর্তে তার অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন কথাও সে সঙ্গে উঠছে।

শেয়ার করুন