১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৭:২৫:৫২ পূর্বাহ্ন


টি ২০ বিশ্ব কাপ, দ্বিতীয় সেমিফাইনাল প্রিভিউ
ভারত থেকে কিসে পিছিয়ে ইংল্যান্ড?
সালেক সুফী, অস্ট্রেলিয়া থেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১১-২০২২
ভারত থেকে কিসে পিছিয়ে ইংল্যান্ড?


অনেক নাটকীয়তার পর টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমী ফাইনালে উন্নীত হয়েছে চারটি ফেভরিট দল ভারত,পাকিস্তান , নিউজিল্যাণ্ড ,ইংল্যান্ড। অনেকে হয়তো শিরোপাধারী স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া এবং ওপর শক্তিধর দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে এখানে দেখতে চেয়েছিলেন। বৃষ্টি আইন বেশ কয়েকটি ম্যাচে প্রভাব ফেলে সমীকরণ পাল্টে গেছে। সুপার টুয়েলভে গ্রুপ পর্যায়ের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে সেমিফাইনালিস্টস নির্ধারণে। 



আজ প্রথম সেমীফাইনালে এসসিজিতে খেলবে মোক্ষম সময়ে মোমেন্টাম ফায়ার পাওয়ার দুরন্ত পাকিস্তান আর সব টুর্নামেন্টে ভালো খেলা কিউই পাখির দেশ নিউজিল্যাণ্ড। ওপর সেমী ফাইনাল হবে এ্যাডিলেড ওভালে কাল (বৃহস্পতিবার)। প্রতিদ্বন্দি আইসিসির বিত্তশালী দল শক্তিধর ভারত আর ক্রিকেট জননী ইংল্যান্ড। দুই সেমিফাইনালের বিজয়ীরা আইকনিক এমসিজিতে রোববার খেলবে ফাইনাল। এটি মধ্যে অনেকেই ভারত পাকিস্তানের আরো একটি দ্বৈরথের পূর্বাভাস দিয়েছেন। আইসিসিও হয়তো মনে প্রাণে চাইছে আরো একটি ব্লকবাস্টার ম্যাচ। কারন পাকিস্তান ভারত ম্যাচ মানেই আইসিসি’র রমরমা ব্যাবসাও। গুরুত্ব বেড়ে যায় সবকিছুর। স্বার্থক মনে করে তারা তাদের আয়োজন। কারন এমন ম্যাচের প্রত্যাশা ও দৃষ্টি রাখার সংখ্যা বহুগুন।  



পাকিস্তান নিউজিল্যান্ড ম্যাচ মুলত, ইতিহাস, খেলোয়াড়ের তুলমূলক শক্তিমত্তা ,পারস্পরিক মোকাবিলার পরিসংখ্যান নিয়ে পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখছেন বেশিরভাগ ক্রিকেট এনালিস্ট। ইমরান খান কর্নার্ড টাইগার্সদের মতো বাবর আযমের এই দলটিও কিন্তু খাদের কিনারা থেকে নাটকীয় ভাবে ফিরে এসেছে। অন্যদিকে নিউজিল্যাণ্ড কিন্তু বেশ কিছু বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলছে। তারা কিন্তু গত আসরের রানার্স আপ দল।  এই ম্যাচ নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনায় যাবো না।  নিউ সাউথ ওলসের রাজধানী সিডনির ঐতিহাসিক এসসিজিতে আজ মহারণ উপভোগ্য হবে বলে মনে করি। আমার বাজির ঘোড়া থাকবে পাকিস্তানের উপর যদিও আমি ব্ল্যাক ক্যাপ পরিবারেরও সদস্য। 



মুলত মেইন ফোকাস এখন ভারত ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেমিফাইনাল নিয়ে। দুটি দল কিন্তু আইসিসির মোড়ল।  আম্পায়ারিং সিদ্ধান্তের ভুল ভ্রান্তি কোনো একটি বিশেষ দলের অনূকুলে যাওয়ার সম্ভাবনা সীমিত। দুটি দলেই আছে তুখোড় টি২০ খেলোয়াড়ের সমাহার। ইংল্যান্ড দলের অধিকাংশ সদস্য নিয়মিত ভারতীয় টি২০ ফ্রাঞ্চাইজি আইপিএল নিয়মিত খেলায় একে ওপরের সামর্থ নিয়ে বিশেষ ভাবে অবহিত। খেলোয়াড়দের তুলনামূলক বিবেচনায় বলা যায় হবে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।  


যদিও বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে খেলা হলেও ভারত দল অগণিত সমর্থক জমা হয়ে খেলার মাঠ ভারতের নিজস্ব অঙ্গন করে ফেলে। তা সত্ত্বেও বার্মি আর্মি কিন্তু কম সক্রিয় নয়।  

এবারের টুর্নামেন্টের কথায় যদি আসি, ভারত কিন্তু অজেয় মনে হচ্ছে না। গ্রুপ পর্যায়ে কিছুটা ৫০:৫০ আম্পয়ারিং সিদ্ধান্ত অনুকূলে থাকায় জয় পেয়েছে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। হেরে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে। একমাত্র দাপুটে জয় পেয়েছে শেষ খেয়ালী জিম্বাবুয়ের সাথে।ওপর দিকে ইংল্যান্ডকে ভালো খেলে হারিয়েছে প্রতিবেশী আয়ারল্যান্ডকে। ওরা দারুন জয় পেয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়র সঙ্গে এমসিজিতে অনুষ্ঠিত খেলাটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত না হলে ফলাফল হয়তো সেমী ফাইনালের ভাগ্য পাল্টে দিতেও পারতো। কিন্তু সাধরন ভাবে ইংল্যান্ডের বর্তমান দলটিকে অনেক ব্যালেন্ডস মনে হয়েছে।



যদি ওপেনারদের তুলনা করা হয়, তাহলে জশ বাটলার - আলেক্স হেলস জুটিকে রোহিত- রাহুল থেকে এগিয়ে রাখবো। রোহিতকে এ আসরে নড়বড়ে মনে হচ্ছে। লোকেশ রাহুল রান পেলেও স্বচ্ছন্দে খেলছে নাভ কিন্তু পার্থক্য গড়ে দিতে পারে ক্রিকেট বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বিরাট কোহলি। দীর্ঘদিন পর নিজের ছন্দ ফিরে পাওয়া বিরাট একাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রায় হারতে থাকা ম্যাচ জয় করেছে। খেলেছে আরো দুটি ভালো ইনিংস। ডেভিড মালান বা অন্য কোনো ইংরেজ  ব্যাটসম্যান ভিরাটের সঙ্গে তুলনীয় নয়। কালকের সেমী ফাইনাল বিরাট নিজের ছন্দে খেললে ভারত নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে।



বিরাট -উড , বিরাট - কুরান যুদ্ধ দেখার মতো হবে। তরুণ সূর্য কুমার যাদবকে বলা হচ্ছে ভারতের এবি ডি ভিলিয়ার্স ( ৩৬০ ডিগ্রি )। ওর সাথে অবশ্য তুলনায় পিছিয়ে থাকবে না ইংল্যান্ডের তুখোড় অল রাউন্ডার বেন স্টোকস। ধুম ধারাক্কা ব্যাটিং বলেন , কাযকরী আঁটোসাঁটো বা আক্রমণাত্মক বোলিং বা হরিণ ক্ষিপ্রতায় ফিলিং স্টোকস কিন্তু এগিয়ে থাকবে। রাহুল, কোহলি আর যাদব ছাড়া ভারতের ব্যাটিং কিন্তু টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত আহামরি কিছু করে নি। হার্দিক পান্ডিয়া , কার্তিক একেবারে চোখে দেখার মত এখনো কিছু করে নি।



এখানেই কিন্তু ইংল্যান্ড এগিয়ে। ওদের ডেভিড মালান , মঈন আলী, লিয়াম লিভিংস্টোন , স্যাম কুরান কিন্তু সবাই চৌকষ খেলোয়াড়। এমনকি প্রয়োজনে আদিল রাশিদ আর ক্রিস ওয়েক্স কিন্তু ব্যাটিং করতে পারেন। ইংল্যান্ডের যেমন ১-১০ টি ২০ ব্যাটিং অভ্যস্থ। সেখানে ভারতের ব্যাটিং কিন্তু দুই তিন জনের উপর নির্ভরশীল।  

জাসপ্রেত ভুমরা না থাকায় অবশ্যই ভারতের বোলিং শক্তি খর্ব অনেকটাই। তবুও নবীন আর্শদ্বীপ অনেক প্রতিশ্রুতিশীল। ভুমরা -অর্শদ্বীপ-সামি সমন্বয়ে গড়া ভারত পেস আক্রমমনের সঙ্গে আমি উড-ওকস -স্টোকস -কুরানদের তুলনায় সমতা খুঁজে পাই। এ্যাডিলেড ওভালে, মঈন আলী-আদিল রাশিদ ভারতের রবি অশ্বিন -আকসার প্যাটেল থেকে কম সফল হবে হবে না। মোট কথা, খেলোয়াড় তুলনায় ভারত ইংল্যান্ড সেয়ানে সেয়ানে বলবো। বরং ইংল্যান্ডই কিছুটা এগিয়ে। 


এ্যাডিলেডে ওভাল সোজা বাউন্ডারি সীমানা প্রশস্থ কিন্তু আড়াআড়ি অপেক্ষাকৃত ছোট। টস জয়ী দল ব্যাটিং করে বড় টার্গেট স্থাপন করতে চাইবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টস জয়ী দল কিন্তু নিয়মিত হেরেছে। 

অনেকেই চাইছে ভারত পাকিস্তান নিজেদের খেলায় জিতে এমসিজিতে আবারো মুখোমুখি হোক। তাহলে এক লক্ষ বর্ণাঢ্য দর্শক এমসিজি মাতাবে। কয়েক বিলিয়ন ক্রিকেট পূজারী বিশ্বজুড়ে নানাভাবে ক্রিকেট উপভোগ করবে। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে খেলা হবে ইংল্যান্ড -পাকিস্তান। ১৯৯২ ইমরানের কর্নার্ড টাইগাসদের মতো নতুন ইতিহাস গড়তে পারে বাবর আজমের পাকিস্তান। যাদের এতদূর আসার কথাই ছিল না একপর্যায়ে। কিন্তু কিভাবে যেন উঠে এসেছে!  


শেয়ার করুন