২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৯:২৯:২৮ অপরাহ্ন


অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ফের যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১১-২০২২
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ফের যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদ আফরিন আক্তার


বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তারের ঢাকা সফর বেশ তৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত ৫ নভেম্বর ঢাকায় পৌঁছে ৭ নভেম্বর তিনি ছেড়ে গেছেন ঢাকা। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ তিন রাজনৈতিক দলের মনোনীত তিন প্রতিনিধি, সুশীলসমাজ, সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। জানা গেছে, তার ওই বৈঠকে প্রাধান্য পায় গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, বাকস্বাধীনতা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, সীমান্তে মায়ানমারের গোলা হামলা, রোহিঙ্গা পুনর্বাসন ও রোহিঙ্গা অর্থায়ন, রোহিঙ্গাদের শিক্ষাব্যবস্থা, ভাসানচর নিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা, রোহিঙ্গাদের জীবিকা অর্জন, করোনার টিকা, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, সমরাস্ত্র, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে কৌশলসহ (আইপিএস) দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে। 

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার বিশেষ করে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ৭ নভেম্বর সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাইম উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে আফরিন আক্তার বলেন, আমরা রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সকল বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে জোর দিয়েছি। সকল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও মুক্ত নির্বাচনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়টি আমরা বারবার তুলে ধরতে থাকবো। 

এ সময় আফরিন আক্তার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে। আগামী ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়ে নেয়ার আশা রয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, জলবায়ুসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেও বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া শ্রম সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। 

বাংলাদেশের নির্বাচনে মার্কিন সহায়তা নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনকে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় আলাদা করে আসেনি। তবে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এমনিতে এসেছে। তিনি যেহেতু নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের ভূমিকা পালন করবেন, সেই প্রেক্ষাপটেই এ বৈঠক। দু’দেশের সম্পর্কের অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনাটি নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার- যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন। 

এর আগে ৬ নভেম্বর বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলমের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কিন এ প্রতিনিধি  সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এসেছি।’ তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আফরিন আক্তার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয় আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এদেশের নাগরিক সমাজের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রসঙ্গে আফরিন আক্তার বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ১৭ কোটি ডলারের ঘোষণা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে কীভাবে মৎস্য ও খনিজসম্পদের সর্বোচ্চ সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়, সেটাও আলোচনায় এসেছে। 

উল্লেখ্য, আফরিন আক্তার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের হয়ে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভুটান ও মালদ্বীপের বিষয়গুলো পর্যক্ষেণ করার দায়িত্বে। সে সঙ্গে অফিস সিকিউরিটি ও অন্তর্দেশীয় বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করেন। চলতি বছরের এপ্রিলে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। 

শেয়ার করুন