২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:১১:০৫ পূর্বাহ্ন


দেশের স্বার্থে ঐক্য, সমঝোতা অপরিহার্য
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১১-২০২২
দেশের স্বার্থে ঐক্য, সমঝোতা অপরিহার্য


দুর্ভিক্ষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে এখন চলছে সংঘাত সম্ভবা রাজনীতির ড্রেস রিহার্সেল। একদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ নানা দাবিতে বিরোধীদলগুলো মাঠপর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে। সরকার প্রশাসন যন্ত্রকে সক্রিয় করার পাশাপাশি নিজেদের দল আর ফ্রন্টকে গুছিয়ে রাজপথে বিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা করার হুঙ্কার দিচ্ছে।

ইতিমধ্যে সরকার, বিরোধীদল, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কয়েক স্থানে ত্রিমুখী সংঘাত হয়েছে। সরকারি দল যেমন যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে দৃঢ়সংকল্প। অন্যদিকে বিরোধীদলগুলো যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় ফিরে পেতে পেতে হা-হুতাশ করছে। বর্তমান অবস্থা বজায় থাকলে সংঘাত অনিবার্য। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দিন দিন অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্য আসন্ন দুর্ভিক্ষের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই মুহূর্তে সংঘাত পূর্ণ রাজনীতি কিছুতেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় বহন করে না। প্রয়োজন বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়নে ন্যূনতম ইস্যুর ভিত্তিতে সমঝোতা। অর্থনৈতিক থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক বিষয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি যখন টালমাটাল, তখন বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে রাজপথে সংঘাত অর্থনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত করবে। দেশে অরাজকতা, হানাহানি জনজীবন অতীষ্ঠ করে তুলবে। নানা কারণে সৎ মানুষগুলো বাংলাদেশে কোণঠাসা। সীমিত আয়ে নুন আন্তে পান্তা ফুরানো মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেকেই এখন বাকরুদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি নীরবে অবলোকন করছেন। কীভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিস্থিতি সম্মিলিতভাবে সামাল দেয়া যায় সেটি এখন সবার চেষ্টা করা উচিত।

অথচ বিরোধীদল বর্তমান শাসকদলের অধীনে অনাগত জাতীয় নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠনের আন্দোলন করছে। নানা সরকারি বাধা এড়িয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন ঘোষণার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সরকারি দল ফ্রন্টগুলোও কিন্তু বসে নেই।  ওরাও নানাভাবে পাল্টা হুমকি দিচ্ছে। মাঠের খেলা মাঠেই শেষ করার পাল্টা হুমকি দিয়ে পরিস্থিতি সংকটময় করে তুলেছে। 

দেশে এখন সবচেয়ে আশু প্রয়োজন টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান, উন্নয়নে ঐকমত্য। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় অবিলম্বে কয়লাসম্পদ উন্নয়ন, গ্যাস-তেল আহরণ আর নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের বিষয়গুলো কৌশলগত কাজ বিবেচনায় ঐকমত্য। নিদেনপক্ষে এই বিষয়সমূহে রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট নীতি জনগণের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর মেনে নেয়া উচিত কোন দল এযাবৎ সঠিক জ্বালানি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সঠিক কৌশলে কাজ করেনি। বর্তমান সংকটের জন্য কম-বেশি প্রতিটি দলের ব্যর্থতা আছে। সমন্বিত জ্বালানি নীতি অবিলম্বে প্রণয়ন করে কৌশলগত সেক্টর বিবেচনায় বাস্তবায়ন কৌশল নেয়া না হলে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। ফলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিঘ্নিত হবে। কঠিন সর্বগ্রাসী সংকট জাতীয় জীবনকে বিষাক্ত করে তুলবে। 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীনতার বিষয়েও রাজনৈতিক সমঝোতা আবশ্যক।  হাওয়া ভবন বা বর্তমানে সক্রিয় বিভিন্ন সিন্ডিকেট সংস্কৃতি থেকে বেরোতে না পারলে কোনো উন্নয়ন আপামর জনগোষ্ঠীর কাজে লাগবে না। দেশ চলবে জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন করে নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা। আমলা, কারিগরি, অকারিগরি কর্মকর্তারা নির্বাচিত সরকারের নীতি-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে মেধা নিবেদন করে। রাজনীতিকে পেশিশক্তি আর দুর্নীতিমুক্ত করা না হলে বাংলাদেশের অবস্থা দ্রুত অবনতি হবে।

দেশে বেশকিছু মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, আরো কিছু সমাপ্তির পথে। এগুলোর শুভ প্রভাব জনগণ পাচ্ছে পাবে। কিন্তু কিছু অপরিকল্পিত প্রকল্প অশুভ প্রভাব ফেলছে। বিআরটি প্রকল্পটি গলার কাঁটা হয়ে আছে। দুর্নীতির কারণে প্রকল্পগুলোর খরচ বেড়েছে। জনগণকে এগুলোর বোঝা বইতে হবে বহুদিন।

পরিশেষে যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো- নির্বাচন বিষয়ে সমঝোতা হয় জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর শুভবুদ্ধির উদয় হোক। দেশের স্বার্থে জরুরি অত্যাবশ্যক।

শেয়ার করুন