২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৮:০৬:১৫ পূর্বাহ্ন


বিজেপি আসামের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে চায়
কাজী ইবনে শাকুর
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১১-২০২২
বিজেপি আসামের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে চায়


দারিদ্র্যের কষাঘাত আসামকে ভারতের ‘সতীনের ছেলে’ হিসেবে নতুন করে অনেকেই বর্ণনা করছে। কি সমাজ উন্নয়নে, কি সাংস্কৃতিক বিকাশে, কি শিক্ষায় কিংবা দারিদ্র্য বিমোচনে আসামকে আরো পিছু হটিয়ে দিচ্ছে ভারতের বিজেপি প্রশাসন। শিক্ষাকে সেখানে মনে করা হচ্ছে বিজেপির কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ধারালো অস্ত্র। সাম্প্রতিককালে সেখানে শিক্ষার প্রসার বন্ধ করার জন্য শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে শিক্ষকদের সকল সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। 

গত জানুয়ারি মাসে এক জরিপে বলা হয়, ৩ হাজার ৭১৬টি নিম্ন প্রাথমিক স্কুল এই রাজ্যে মাত্র একজন করে শিক্ষক নিয়ে চলছে। তাছাড়া ৩১৪টি স্কুলে কোনো শিক্ষকই নেই।

আসামের বিরোধীদলসমূহ ও ছাত্র সংগঠনসমূহ আসাম সরকারকে এ জন্য দায়ী করে বলেছে, আসাম সরকার নিয়মিত স্কুলের শিক্ষকদের ৮ হাজার শূন্যপদ বাতিল করে দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী রনজ পেগু বলেছেন, আর্থিক বাজেটে ভারসাম্যের জন্য এটা জরুরি। তিনি ১১ হাজার ২০৬ জন শিক্ষকের চাকরি নিয়মিতকরণের বিরুদ্ধেও বলেন। এসব শিক্ষক সর্বশিক্ষক অভিজ্ঞানের অধীনে কাজ করে। কিন্তু সর্বআসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মনে করে এই ধরনের শিক্ষাপ্রসার-বিরোধী কর্মকাণ্ড ভারতীয় জনতা পার্টি শুরু করেছে, যাতে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে বেসরকারিকরণ করা যায় এই আসামে। আসাম স্কুল এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে ৭ নভেম্বর এক বার্তায় বলা হয়, সরকার এই চাকরিগুলো বাতিল করেছে। কারণ সরকার আর্থিক নিউট্রালিটি বজায় রাখতে চায়। সেখানে ৩ হাজার ৭১৫ পোস্ট আছে, আবার প্রাইমারি টিচারের জন্য আর ৪ হাজার ২৬৫ পোস্ট আছে লোয়ার প্রাইমারি টিচারের জন্য। স্কুলশিক্ষকরা বলেন, ২০১৭ সালে তারা চুক্তিভিত্তিক স্কুল টিচার নিয়োগের বিরোধিতা করেছিল, কিন্তু এখনো সরকার তা করে যাচ্ছে। অর্থাৎ সরকার শিক্ষাকে বেসরকারিকরণ করতে চায়। এই শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশন আসামের ৩২ জেলায় ৫১টি মহকুমায় ৩৩ হাজার ৮২৯টি প্রাইমারি স্কুল জরিপ করে দেখে যে, ৩ হাজার ৭১৬ প্রাইমারি স্কুলে মাত্র একজন করে শিক্ষক আর ৩১৪ স্কুলে কোনো শিক্ষকই নাই। 

গোহাটির ১ হাজার ৮০০ সরকারি প্রাইমারি স্কুলে ২২৪টিতে মাত্র একজন করে শিক্ষক আর ৩৭টিতে কোন শিক্ষক নেই। 

আসাম জাতীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট লোরিনজোতি গোসাই বলেন, স্কুল রেশনেলাইজেশন প্রসেসের নাম করে সরকার ১ হাজার ৭১০টি প্রাইমারি স্কুল বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া ৩৪টি হাইস্কুল বন্ধ করে দেয়। তার কারণ বেসরকারি খাতে শিক্ষা ঠেলে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

অলইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের জেনারেল সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম বলেন, যখন নতুন এডুকেশন পলিসি বাস্তবায়নে অধিক শিক্ষক ও স্কুল দরকার, তখন তা বন্ধ করা অবাঞ্ছনীয়।

বস্তুত এখন আসামকে কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি বিমাতাসুলভ চোখে দেখে। আসামের শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে আসামের স্বাধীন হৃৎপিন্ডকে জব্দ করতে চায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। শিক্ষা, আর্থিক ও পুষ্টির ক্ষেত্রে আসাম যেভাবে দিন দিন হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে, ভবিষ্যতে সাধারণ আসামিরা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসতে পারে।

শেয়ার করুন