২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:১৯:৪২ পূর্বাহ্ন


সিদ্ধান্তহীনতায় জ্বালানি সংকট আরো ঘনীভূত
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১১-২০২২
সিদ্ধান্তহীনতায় জ্বালানি সংকট আরো ঘনীভূত


গভীর গ্যাস সংকটে শিল্পখাত, জ্বালানিখাত। রফতানি আয় কমছে, অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সবাই জানে গ্যাস সংকট মূল কারণ। বিপন্ন সময়ে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে সংকট তীব্রতর হয়েছে। স্বল্প সময়ে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি বা বিকল্প জ্বালানি সংস্থান করা অসম্ভব। একমাত্র উপায় স্পট মার্কেট থেকে অন্তত আপদকালীন সময়ের জন্য এলএনজি ক্রয়। বিশ্ববাজারে এলএনজি স্পট মূল্য অনেক কমে এখন মার্কিন ডলার ২৫ এমএমবিটিইউ। মূল্য আসলেও বাংলাদেশ কেন ক্রয়ের উদ্যোগ নিচ্ছে না? জ্বালানি সংকট গ্যাস সংকটে শিল্প কারখানাগুলোয় হাহাকার। এমনিতেই ডলার সংকটে ভোগছে শিল্প-বাণিজ্যখাত। 

শিল্পকারখানায় উৎপাদন কমতে থাকলে রফতানি আয় আরো কমে যাবে। বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয় কমে গেলে সার্বিক সংকট ঘনীভূত হবে। চলমান মেগাপ্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সমাপ্ত প্রকল্পগুলোর ঋণের সুদ পরিষদ সংকটের সৃষ্টি করবে। বলছি না খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষ হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পরিস্থিতি বজায় থাকলে সঙ্গীণ হবে দেশের অবস্থা- এ কথাগুলো অনেক আগ থেকেই বলা হচ্ছে। সরকার বিষয়গুলো খুব ভালই জানেন। তবু এ থেকে উত্তরণের কোনো কার্যকর উদ্যোগ আগ থেকেই নেয়া হয়নি। এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। 

শিল্প বণিক সমিতি আয়োজিত সাম্প্রতিক এক সেমিনারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডক্টর ইজাজ হোসেন সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছেন, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির। শিল্পমালিকরা সহনীয় মাত্রায় গ্যাসের বাড়তি মূল্য দিতেও রাজি আছে। এলএনজি আমদানির ওপর শুল্ক রেট দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। শিল্পমালিকরা বলছে এলএনজি আমদানিতে ১ ডলার খরচ হলে শিল্পখাত থেকে ১০ ডলার ফেরত আসে। জানি না দাবির অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ আছে কিনা?  তবে জাতীয় স্বার্থে  সরকার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাহীন কেন? কেনই বা সবাই চুপচাপ বসে। কীসের আশায় বসে থাকা। 

ব্রুনাই থেকে জ্বালানি চাওয়া হয়েছে। সৌদি আরব থেকে চাওয়া হয়েছে বাকিতে জ্বালানি। কিন্তু সেটা সে দেশের সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার রয়েছে। সৌদিদের কাছে যে প্রত্যাশা। সৌদিরাও সুযোগ বুঝে কিছু শর্তাদি দিয়েছে। কিন্তু সেটা তো বাংলাদেশের পক্ষে মানা সম্ভবপর না। কারণ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সৌদির দাবি মানতে যাবে বলে মনে হয় না। তবু যদি তারা এ ব্যাপারে পজিটিভ চিন্তাভাবনা করেও সেটা আমদানি করতে সময় লাগবে। 

জানা গেছে, সরকার রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েও দ্বিধাগ্রস্ত। অথচ মূল্যবান সময় অপচয় হচ্ছে। প্রতিনিয়ত প্রতিটা সেক্টরে চাপ তৈরি হচ্ছে। যা ভীতিকর অবস্থাতে চলে যেতে পারে। কারণ বাংলাদেশ তৈরি পোশাক আর টেক্সটাইল খাতের ক্রেতা হারালে অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। এলসি সংকট রয়েছে। দেশে বিভিন্ন ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক এলসিও দিচ্ছে না অনেকে ডলার সংকটের জন্য। ফলে এটা এখন একটা জাতীয় সংকট হিসেবেই অভিহিত করা সমীচীন। দেশের ঠিক এ সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া অপরিহার্য। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে হলেও অন্তত ৬ মাসের জন্য স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

শেয়ার করুন