২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৭:২৮:০৬ পূর্বাহ্ন


প্রধানমন্ত্রী কেন বলছেন দিয়ে গেলাম?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২২
প্রধানমন্ত্রী কেন বলছেন দিয়ে গেলাম? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


ইদানীং দেখছি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ডেল্টা প্ল্যান দিয়ে গেলাম। এ দিয়ে গেলাম কেন? তিনি কোথায় যাবেন, কেন যাবেন? ২০২৩ না হোক, ২০২৪ শুরুতে পরবর্তী নির্বাচন। কিছু মহলের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও তৃণমূলে এখনো সুসংগঠিত বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ। মূলধারার অনেক কেন্দ্রীয় নেতার তৃণমূল সংযোগ না থাকলেও বেশকিছু মাইলফলক অর্জনকারী অবকাঠামো নির্মিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এখনো অন্য যে কোনো নেতা-নেত্রী থেকে উজ্জ্বল। পদ্মা বহুমুখী সেতুর ব্যাপক সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এ মাসের শেষদিকে খুলে দেয়া হবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের  প্রথম সেগমেন্ট, কর্ণফুলী নদী তলদেশের সুড়ঙ্গ নির্মাণ শেষ পর্যায়ে, এগিয়ে চলেছে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ। ইতিমধ্যে চালু পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পুরোটাই অচিরে গ্রিডে সঞ্চালিত হবে। চালু হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। মাতারবাড়ি বন্দর বিদ্যুৎকেন্দ্র আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণ এখন শেষ পর্যায়ে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। জ্বালানি সংকট থাকলেও সারা দেশ এখন বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায়। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই উন্নয়নের চোরাগলি পথে ব্যাপক দুর্নীতি মেগাপ্রকল্পগুলোর খরচ বহুগুণ বাড়িয়ে দিলেও প্রকল্পসমূহের শুভ প্রভাব অচিরেই অনুভূত হবে। এমনি যখন অবস্থা, কেন প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে বিদায়ী সুর? 

দীর্ঘদিন করোনা এবং তার পরবর্তী সময়ে অনেকটা গৃহে অবস্থানের পর প্রধানমন্ত্রী জনসমক্ষে আসতে শুরু করেছেন। যশোর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে তাকে দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল। বিরোধীদলকে সভা-সমাবেশ করার সীমিত সুযোগ দেয়া হয়েছে। ব্যাংক ,বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যাপক দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমনে অনেকটাই বার্থ আমলাদের দুর্নীতির কারণে। দুর্নীতি দমনে প্রধানমন্ত্রীর আপসহীন ভূমিকা বুমেরাং হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বিরোধী মতকে নিপীড়নের ভাষায় মোকাবিলা করা কতটুকু সঠিক গভীরভাবে বিবেচনার সুযোগ আছে।  

আমি মনে করি, নানা কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও আর্থিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। ভুল কৌশল আর দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট। জ্বালানি সংকটে বিপর্যস্ত শিল্পখাত। রফতানি বাণিজ্য হুমকির মুখে, বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ে টানাপড়েন চলছে। দেশীয় প্রাকৃতিক সম্পদ (কয়লা, তেল) আহরণ উন্নয়ন উপেক্ষা করে মাফিয়া সিন্ডিকেটের স্বার্থে আমদানিকৃত জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়া যে সংকটের মূল কারণ বলাই বাহুল্য। জানি না, সরকারপ্রধান যিনি জ্বালানিমন্ত্রীও বটে, তিনি বুঝতে পারছেন কিনা আমলাদের কারিগরি কাজের দায়িত্ব দেয়া সঠিক হয়নি? 

মাইলফলক স্থাপনকারী অবকাঠামোগুলো প্রধানমন্ত্রীর সাহস আর ব্যক্তিগত মনিটরিংয়ের কারণে সম্ভব হয়েছে বলাবাহুল্য। কিন্তু পাশাপাশি ব্যাপক দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের সুফল সাধারণ জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছেনি। সরকারি মন্ত্রীদের অতিকথন ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্থনীতিকে সচল রাখলেও একশ্রেণির সুবিধাবাদী গোষ্ঠী নানাভাবে মুদ্রাপাচার করে নানা দেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের অগোচরে হয়েছে ভাবার কারণ নেই।  মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না। শঙ্কা হয় সবকিছু সরকারপ্রধানের নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা?

সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না। কিন্তু সেটি কি সব দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য? অনেকে বলছেন, একটি দেশ নাকি সবকিছুতেই প্রভাব বিস্তার করছে।

যাহোক আশা করি, প্রধানমন্ত্রী তৃণমূলের ভাষা বুঝবেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের পেছনের সারি থেকে সামনে এনে দুর্বৃত্তদের অপসারণ করবেন। কারণ তিন-তিনটি জনসভায় প্রমাণিত প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা। মানুষ এখনো বঙ্গবন্ধু কন্যাকেই চান। তাকে পছন্দ করেন। শেখ হাসিনার কথা মান্য করেন বলেই তাদের ওই ছুটে আসার নমুনা। ফলে কেন তিনি এমনটা বলছেন বোধগম্য নয়। কারণ হতে পারে অভিমান। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভালোবাসা তো তার সঙ্গে। যাদের জন্য বাবা-মা, ভাইসহ গোটা ফ্যামিলি হারিয়েও সেই বাংলাদেশে এসেছেন সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। ফলে তাঁর মুখে সংকট সময়ে বিদায়ী সুর কাঙ্ক্ষিত নয়।  

শেয়ার করুন