২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:২৫:০৩ পূর্বাহ্ন


তদন্ত প্রয়োজন
ভুয়াদের দাপটে আসল মুক্তিযোদ্ধারা বিব্রত
দেশ রিপোর্ট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
ভুয়াদের দাপটে আসল মুক্তিযোদ্ধারা বিব্রত



দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫১ বছর। এই ৫১ বছরে এখনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে সব সময়ই বিতর্ক ছিল। দেশ স্বাধীনের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছেন তারাই তাদের মতো করে দলীয় বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করেছেন। দেশে বাংলাদেশের সূর্য সন্তান বা শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে বিতর্ক সব সময়ই ছিল। এখন সেই বিতর্ক প্রবাসেও দেখা দিয়েছে। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই অনেকেই দলীয় বিবেচনায় বা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সাটির্ফিকেট নিয়েছেন। ইদানীং প্রবাসে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা দাবিদারের সংখ্যাও বেড়েছে। অতীতে অনেককে ভিন্ন দলীয় কর্মকাÐ দেখা গেলেও /১১-এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসায় অনেকেই ভাগ্য খুলে গেছে। তারা মুক্তিযোদ্ধার সাটির্ফিকেট নিয়েছেন, আবার অনেকে বিভিন্ন সংগঠন বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ব্যবসাও শুরু করেছেন। কমিউনিটিতে তাদের পরিচয় এবং নাম ভিন্ন থাকলেও তারা এখন ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন। অথচ তাদের নাম দুটো। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের একটি নাম, আবার তারা কমিউনিটি এবং সমাজে পরিচয় আরেক নামে। অতীতের যাদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করার সাহস পাননি, তারা এখন বিশাল মুক্তিযোদ্ধা। শুধু তাই নয় তারা প্রবাসেও থেকেই মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করছেন এবং রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করছেন। তারাদের সহযোগিতা করেছেন কোনো কোনো মন্ত্রী। আরো মজার বিষয় হচ্ছে তারা ভোল পাল্টিয়ে এখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিশাল নেতা। আবার কমিউনিটির একশ্রেণি তাদের স্বার্থে এদের ব্যবহার করছেন। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে! প্রকৃত অনুসন্ধানে জানা গেছে, এরা কখনো মুক্তিযোদ্ধা ছিল না এবং দেশের জন্য যুদ্ধ করেনি। শুধু খোলস পাল্টিয়েই এরা বড় মুক্তিযোদ্ধা সেজে গিয়েছে।

অনেকেই অনুযোগের সুরে বলেছেন, এরা প্রকৃত নয়, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এদের দাপটই চলছে কমিউনিটিতে। এরা মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্কিত করছেন। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বেশ কয়েকজন বীর মুুক্তিযোদ্ধা বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কখনো নাম পরিবর্তন করে না। অনেকেই এখন নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, ভাতাসহ রাষ্ট্রের সকল সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকার সাথে এদের নামের মিল নেই। তারা বলেন, দেশের স্বার্থে এবং সঠিক তালিকার স্বার্থে এদের বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। ভাতাসহ রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে এরা একধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছেন। এদের বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যেখানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা দুঃখ এবং কষ্টের মধ্যে রয়েছে, সেখানে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবে এটা আমরা কখনো মেনে নিতে পারি না। কিন্তু দলবাজি এবং বিভক্তির কারণেই এদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বলেন, আমরা আশা করবো নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে বর্ণচোরাদের মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন। সেই সাথে এরা ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রের সাথে যে প্রতারণা করছে তার জন্য তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

প্রবাসে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। যে কারণে বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটেরানস ১৯৭১-এর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মেরাজ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা জি এম ফারুক স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা লক্ষ করছি, বিজয়ের মাসে নিউইয়র্কে কর্মরত-অবস্থানরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার স্বীকৃতিস্বরূপ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদানসহ বিভিন্নভাবে সম্মানিত করছেন। আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে ওই সকল মহানুভব সদস্য ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি জানাই আমাদের পরম শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা লক্ষ করছি, সংবর্ধনা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি, এমন ব্যক্তিদেরকে বা অমুক্তিযোদ্ধাদের ভুলবশত সংবর্ধনা প্রদান করছেন। এতে নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটেরানস ১৯৭১ ইউএসএ ইনকের পক্ষে তীব্র ক্ষোভ প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার একটি পরিচিতি নম্বর (যাকে এমআইএস নম্বর বলা হয়) প্রদান করে ওয়েবসাইটে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে এবং এমআইএস নম্বর ব্যতীত কাউকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে বা উক্ত নম্বর ব্যতীত কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করতে পারবে না নির্দেশনা জারি করেছে। অতএব বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ মতে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাউকে সংবর্ধনা-সম্মাননা প্রদানের পূর্বে তাদের এমআইএস নম্বর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা-সম্মাননা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলে প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

এদিকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ড ইনকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যুক্তরাষ্ট্র শাখার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সরকার সকল মুক্তিযোদ্ধা জন্য এমআইএস নম্বর নির্ধারণ করেছে, যা সার্বক্ষণিক দেখা যায়। যদি কেউ নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বা কোনো সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান করে তাতে যেন এমআইএস নম্বর উল্লেখ করে। অন্যথায় তা হবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান। আশা করি সকলে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শন করবেন।

শেয়ার করুন