২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:০৩:১৩ অপরাহ্ন


আবারও দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ
শওকত মাহমুদরা কী চায়?
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৪-২০২২
শওকত মাহমুদরা কী চায়?


প্রবীণ সাংবাদিক ও বিএনপির শীর্ষনেতা শওকত মাহমুদ ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২৭ মার্চ প্রেসক্লাবের সামনে ‘পেশাজীবী সমাজের’ ব্যানারে যে সমাবেশ করেছেন, এটা কী খারাপ কিছু ছিল? কেন এ সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। কেনইবা এ সমাবেশের পর শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করলো বিএনপি? সাধারণ মানুষের এতোসব ঘোরপ্যাঁচ বোঝার কথাও না। তবে এ বিষয় যে রহস্যজনক। সেটা নিয়েই চলছে দলের ও দলের বাইরেও ব্যাপক গুঞ্জন। 

কারণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। উত্তরটাও হয়তো দিয়ে দিবেন। যেমনটা ২০২০ সনেও একবার করেছিলেন। তাকে ক্ষমাও করে দেয়া হয়েছিল। সে ক্ষমা পেয়ে সম্ভবত আরেকটু বেপরোয়া হয়ে এবার আবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কাজ করেছেন তিনি। 

গত ২৭ মার্চের এ জনসভায় আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীও ছিলেন। তবে সভায় তার একটা বক্তব্য বেশ বিভ্রান্তিমূলক। সেটা হলো, ‘রাজনীতিবিদরা যদি ব্যর্থ হন, তাহলে পেশাজীবীরা গণঅভ্যুত্থানের দায়িত্ব নেবেন। শিগগিরই পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন জানিয়ে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান শওকত মাহমুদ।’

জানা গেছে, এই নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ১ এপ্রিল বিএনপি সমর্থক সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এক বৈঠকে তাকে বহিষ্কার করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সুপারিশ করা হয়।

সাধারণ নেতাকর্মীদের বলতে শোনা গেছে, শওকত মাহমুদরা কত বড় নেতা হয়ে গেছেন বিএনপির? যিনি সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেবেন? রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হবেন এটাইবা কীভাবে ভাবলে? সে রাজনীতিবিরা কারা? কারা ব্যর্থ হলে তিনি নিজেই এতো বড় দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন? কিংবা তার কথা শোনার মতো মানুষ কী আদৌ আছে? বিএনপির নেতাকর্মীরা শওকত মাহমুদের কথায়ই বিএনপির রাজনীতিবিদের পরিহার করে পেশাজীবী তথা, আমলা ও অন্যান্য পেশার অবসরপ্রাপ্ত বা যারা পার্টটাইম রাজনীতি করে সময় নষ্ট করতে এসেছেন তাদের নিয়ে এতো বড় একটা কাজ করার দায়িত্ব নেবেন? 

এটা যে তিনি এমনিতেই বলেননি সেটা তার বক্তব্যেই বোঝা গেছে। এর পেছনে রয়েছে বড় কোনো রহস্য। শওকত মাহমুদদের এতো বড় কলিজা হয়ে যায়নি, যারা দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন? বিএনপি দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একদফা আন্দোলনের সামনে যখন ঐকমত্যে- সেখানে শওকত মাহমুদরা সেগুলো বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আলাদা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে ব্যস্ত? উদ্দেশ্যটা কী তার?




এমন শওকত মাহমুদদের সংখ্যা বিএনপিতে কম নেই। ভেতরে এ সংখ্যা বহু রয়েছে। যারা অতীতেও রহস্যজনক আচরণ করে বিএনপির আন্দোলন নস্যাৎ ভ-ুল করার কাজ করে এসেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা উপহাস করে বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন তো বিএনপি করেইনি। আন্দোলন করে নেত্রীকে ছাড়ায়নি বিএনপি। এগুলো কিছু স্বার্থপর নেতাদের কারণে হয়েছে। এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে এখনো তারা বিএনপির রাজনীতিতে যথারীতি বহাল তবিয়তে ও ভালোই আছেন। বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা তাদেরকে চিহ্নিত করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। শুধু বৃহত্তর স্বার্থে এদেরকে তারা কিছু

শওকত মাহমুদ


বলছেন না। 

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে সবচে ক্ষতিগ্রস্ত যেসব নেতাকর্মী তাদের অনেক কষ্ট। মামলায় জর্জরিত। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি হারিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর কিছু অতীতের বড় বড় নেতা এখনো বেশ ভালো অবস্থানেই। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুই যথাযথ পরিচালিত হচ্ছে। কীভাবে


কী এটা বুঝতে বাকি নেই, যা প্রায়ই বলেন তৃণমূলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা। 

তবে বিএনপির জন্য সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একান্তভাবে যখন বিএনপিকে চাচ্ছে, নির্বাচনের মাঠে। সেখানে বিএনপি চায় তাদের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। কোনোভাবেই বিএনপিকে বুঝাতে পারছে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি মানছেই না। ফলে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মোমেনের সহায়তা চাওয়া মার্কিনিদের কাছে। বিএনপি যেন নির্বাচনে আসে সে ব্যাপারে। 

কারণ সব দলের অংশগ্রহণে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রচ- রকম তাগিদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের, যা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এমনি মুহূর্তে বিএনপি নামক দলটি বা তার মধ্যে কোনো অংশকেও লোভ-লালসায় বর্শবর্তি করে যদি নির্বাচনে নিয়ে আসা যায় এটা আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক জয় বা আশীর্বাদও। শওকত মাহমুদ টাইপের লোকজন এমন কিছু করে ফেললে সেটা অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। 

সম্ভবত এ কারণেই দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে যেয়ে কেন্দ্রের অনুমোদন ব্যতিরেকে শওকত মাহমুদের আলাদা প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর ফন্দি-ফিকির। তাছাড়া বিএনপি তৃণমূল থেকে দল গোছানোর কাজ করছে। সেখানে দ্বন্দ্ব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এগুলো একসময় কেটেও যায়। কিন্তু কিছু কুচক্রীমহল যদি ওই সব ক্ষুব্ধ নেতৃত্বকে এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করিয়ে বিকল্প কিছু করার চেষ্টা করে সেটা তো ক্রাইম। অথচ এ কাজটাই দীর্ঘদিন ধরেই করছেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। দেশ ও দেশের বাইরে এরা বিভিন্নজনের সঙ্গে মিটিংও করছে এমন কথাও রাজনীতির মাঠে ভাসছে।   

তবে এটা ঠিক, সামনে শওকত মাহমুদরা থাকলেও পেছনেও আরো অনেকেই রয়েছে। নতুবা একা শওকত মাহমুদরা এতো বড় সাহস রাখে না। খোদ সাংবাদিক সমাজেও যার নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। সাংবাদিকদের জন্য এমন কিছু করার নজির নেই, যে তাকে সাংবাদিকরা মনে রাখবে। বরং বিএনপিপন্থী সাংবাদিকদের অনেকেই যেখানে তার নেতৃত্ব পাত্তাই দেন না। সেখানে বাইরে যেয়ে পেশাজীবীদের একত্র করে প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর চেষ্টা তাও আবার রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে। অবশ্যই সাহসের তারিফ করতে হয়। তবে সাহসের সূচনা ’২০ সনে এক ক্ষমা থেকে। কেউ যদি নিজেকে অপরিহার্য ভেবে অপকর্ম করে সাকসেস না হতে পারলে ক্ষমাপ্রাপ্তির গ্যারান্টারের শরণাপন্ন হয়ে সাকসেস হয়, তারা এক রকম কাজ করতে মুহূর্তেই উৎসাহী হবেন। 

দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এটা অনুধাবন সম্ভবত ভালোই করেছে কে নিজের স্বার্থে আর কে দলের স্বার্থে কাজ করছে। এটা তো বাস্তব, আওয়ামী লীগ কেন, বিএনপি ওই স্থানে থাকলেও এ কাজটা করতো। তবে নিবেদিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের যেমন শীর্ষ নেতৃত্বের অবাধ্য করা যাবে না বা অতীতেও যায়নি। তেমনি নিবেদিত বিএনপি নেতা-কর্মীদেরও সেটা করা সম্ভবপর নয়। কারণ দেশের স্বার্থটাই নিবেদিতরা আগে দেখে। নিজের স্বার্থটা তারা তো বরাবরই উপেক্ষা করে আসছে, আসবেও।   


শেয়ার করুন