২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০২:১৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০১-২০২৩
৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালন


২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বাবার সঙ্গে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয় বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন। দেশ-বিদেশে আলোচিত এ নির্মম হত্যাকা-ের পর ভারতের পক্ষ থেকে এ ঘটনার ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তবে গত একযুগ পেরিয়ে গেলেও ফেলানী হত্যাকারীর শান্তি হয়নি। তবে এখনো ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষার দিন গুনছেন ফেলানীর বাবা-মা। ফেলানীর মরদেহ কয়েক ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার কর্মীদের মাঝে সমালোচনার ঝড় তোলে। পরে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ আদালত। বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচার শুরু হলেও সেখানে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) এর মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানির দিন পেছালেও এখনো আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি। এ অবস্থায় অনেকটা হতাশার মধ্যে থাকলেও মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি ন্যায়বিচারের আশা করছেন তার পরিবার।

এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ জানুয়ারি ২০২৩ শনিবার সকাল ১১টায় নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মমদ শামসুদ্দীনের সভাপতিত্বে ফেলানী দিবস পালন উপলক্ষে ৮টি দাবিতে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম ও মা জাহানারা খাতুন, মুক্তিযুদ্ধের  কমান্ডার কাজী শামসুল করিম সেলিম, প্রতিবাদী তারুণ্যের সভাপতি মাসুদুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী মঞ্জুর হোসেন ঈসা, গণঅধিকার পরিষদ তারেক রহমান ও আনিসুর রহমান মুন্না, আধিপত্য প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্য সচিব এয়াকুব শরীফ, জিল্লুর রহমান, জাফর আহমেদ প্রমুখ। 

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, ২০২৩ সালকে সারা পৃথিবী বরণ করেছে রক্তিম আলোর ঝলকানিতে আর প্রতিবেশী ভারত প্রথম প্রহরে বাংলাদেশির রক্তে হোলি খেলে এদেশকে লাশ উপহার দিয়ে নববর্ষবরণ করেছে। যা খুবই নিন্দনীয়।

মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানার অনন্তপুর সীমান্তে নুরুল ইসলামের সামনে তাঁর নিষ্পাপ কুমারী মেয়ে ফেলানীকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে, হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের কোনো বিচার হয়নি। বাংলাদেশ বিচার পায়নি। বিশ্ববাসী এখনো বিচারের প্রতীক্ষায়।

তিনি বলেন, ১২ বছর ধরে বিচার আর ক্ষতিপূরণের জন্য ঘুরছে ফেলানীর পরিবার। মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত রিপোর্ট মতে ২০০০-২০২২ সাল পর্যন্ত বিএসএফ সীমান্তে ২০০০-এর অধিক বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। ২০২২ সালে ২৩ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ তুলে নিয়ে যায় ৮ জনকে খাসিয়ারা ৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে। বারবার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে সাধারণ নাগরিকদের হত্যা-নির্যাতন করে এবং তুলে নিয়ে যায় তারা। আমরা মনে করি ফেলানী হত্যার বিচার না হলে সীমান্তহত্যা বন্ধ হবে না। আমরা নাগরিক পরিষদ জাতিসংঘে স্মারকলিপি দিয়ে ৭ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী নিরাপদ সীমান্ত দিবস ‘ফেলানী দিবস’ পালন করার আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত হত্যা বিরোধী ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনে জাতিসংঘে প্রস্তাব আনার আহ্বান জানাচ্ছি।

ফেলানীর বাবা মা আর কারো সন্তান যেন সীমান্তে হত্য না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের নিকট আকুল আবেদন জানান। তারা ফেলানী হত্যার বিচার চান। অর্থকষ্টে ক্লিষ্ট পরিবারকে সরকার ঘোষিত সাহায্য প্রদান করে সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানান। 

ফেলানী দিবসে সংগঠনটি দাবি করে যেন ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ সারবিশ্বে ফেলানী দিবস পালন করে। ঢাকা বারিধারা কূটনৈতিক এলাকায় পার্ক রোডের নাম ফেলানী সরডু করতে হবে। ফেলানীর পরিবারও সীমান্ত আগ্রাসনের শিকার সকল পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি দিতে হবে। সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত নামকরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ন্যাপ

সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে না পারার পেছনে সরকারের কূটনৈতিক দুর্বলতা অনেককাংশে দায়ী বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ নেতৃদ্বয় বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। এ বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একেবারে গোড়া থেকে কাজ শুরু করতে হবে। ৭ জানুয়ারি শহিদ ফেলানী দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এসব কথা বলেন। তারা বলেন, সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যতে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত দু’দেশই সম্মত হয়েছে কয়েক বছর আগে। তারপরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে বিএসএফ আত্মরক্ষার জন্য হত্যা করে। কিন্তু বাস্তবতা তা প্রমাণ করে না।  ন্যাপ নেতৃদ্বয় আরো বলেন, বছরের পর বছর ধরে সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কোনো অর্থবহ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চাপ বাড়িয়ে বাংলাদেশ সরকারকে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে। এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য এখনই নয়াদিল্লি নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপ নেয়ার সময়।

শেয়ার করুন