২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:৩২:২৯ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিলো যুক্তরাষ্ট্র?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২২
বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিলো যুক্তরাষ্ট্র? ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানালেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন:ফাইল ছবি


দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে রেখে গেলেন ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড! এমনিতেই র‌্যাব ও তার সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন স্যাঙ্কশনে অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের এ কর্মকর্তা আরো কিছু ইস্যু যোগ করে দুশ্চিন্তার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন। র‌্যাব ও তার কর্মকর্তা প্রসঙ্গে শুনিয়েছেন তিনি জটিলতার গল্প। এর সঙ্গে যে দুশ্চিন্তা যোগ করে দিয়ে গেছেন সেটা হলো ইউক্রেন-রাশিয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। র‌্যাব প্রসঙ্গ থেকেও এটা গুরুত্বপূর্ণ ও খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাবে বাংলাদেশ যখন নীরব ছিল বা ভোটদানে বিরত ছিল তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশ বাংলাদেশকে অন্য একটা গ্রুপে ফেলে দেয়। সে গ্রুপে চীনসহ অন্যরা রয়েছে। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ লিথুনিয়া ৪৪ হাজার ৬০০ টিকা দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেটা বাতিল করে দেয়। এতোদিন আর কোনো কিছু শোনা না গেলেও ভেতরে ভেতরে এটা নিয়ে কম ঘোলা হয়নি পানি। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক কিছুর বিষয় লেনদেন রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের। অপরদিকে চীন রাশিয়ার সঙ্গেও রয়েছে অনেক বিষয়ের সম্পর্ক। 

এমন একটা অবস্থায় সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মত আর্থিক একটা দুর্বল ও অনুন্নত দেশ কোন পক্ষে যেয়ে কার শত্রু হয়ে দাঁড়াবে। এসব চিন্তা করেই নীরবতা পালন করা। কিন্তু এ নীরবতা সম্ভবত আর থাকা সম্ভব হবে না। কারণ ইতিমধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন বিষয়টি অনেক দূর গড়িয়েছে। এ নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বেশ শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা রাশিয়ার। এতে দুশ্চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের। ক্রমশ দেখা দিচ্ছে তেল, গ্যাস সংকট। যা সরাসরি প্রভাব পড়ছে যেয়ে ওইসব দেশের সাধারণ জনগণের ওপর। এটা স্ব স্ব দেশের সরকারের ওপরও বেশ চাপ বাড়ছে। বিষয়টি আচ করেই ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত যুদ্ধটা দীর্ঘায়িত করে পাশ্চিমাদের একটা শাস্তি দেবেন বলে আভাস দিয়েছিলেন, সেটাই করছেন। এটা দীর্ঘ আলোচনা। 

প্রসঙ্গ বাংলাদেশ। ওই রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পক্ষে, সে পক্ষেই বাংলাদেশকে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সে কথা সরাসরি প্রস্তাব আকারে রেখে গেছেন। ফলে এখন কী করবে বাংলাদেশ। র‌্যাব ইস্যুসহ স্যাঙ্কশনের বিষয়ে মার্কিনিদের সন্তুষ্ট করতে পারলে ওই স্যাঙ্কশনটা হয়তো তুলে নেবে। তবে এটা সময়ের ব্যাপার এবং জটিল বলে জানিয়েছেন তিনি। স্যাঙ্কশন উঠে গেলে এটা বাংলাদেশের জন্য বিশাল বড় একটা স্বস্তি। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে গণতান্ত্রিক সম্মেলন করছে সেখানেও বাংলাদেশকে বাদ রেখেছে। মার্কিনিদের সঙ্গে গেলে সে বিষয়টাও অনুক‚লে চলে আসার  সম্ভাব না। 

আর মার্কিনিদের প্রস্তাবনা অবজ্ঞা করার অর্থ রাশিয়ার পক্ষে যাওয়া। এতে করে বিরাজমান ওইসব ঝামেলা বরং বাড়বে বৈকি। একই সঙ্গে রাশিয়া-চীনের পক্ষে না থাকলেও জটিলতা রয়েছে। রাশিয়া বাংলাদেশের বিদ্যুতখাতে বড় ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছে। এছাড়াও আরো কিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আর্থিক বিষয় জড়িত। ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়া কষ্টকর। একইভাবে চীনও রাশিয়ার সঙ্গে। চীনের সঙ্গেও বাংলাদেশের রয়েছে অনেক বিষয়ের সংযোগ। 

সর্বোপরি বাংলাদেশ এখন কোন পক্ষে যাবে? ভয়ানক এক পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রশাসন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সংলাপ শেষে যা বলেছেন তাতে আশার কিছু নেই।    

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি র‌্যাব ও সংস্থাটির ৭ কর্মকর্তার ওপর আরোপ করা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বেশ জটিল বলে জানিয়েছেন নুল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘আমরা গত ৩ মাসে র‌্যাবের কার্যক্রমে উন্নতি দেখতে পেয়েছি।’ (এ তিন মাসে কোনো গুম বা ক্রসফায়ার বা বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।) 


ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সাথে বৈঠক

ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মার্কিন অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপের পর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তিনি আরো বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার একটি জটিল বিষয়। তবে, বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়টি উত্থাপন করেছে। তারা এ বিষয়ে কী কী উদ্যোগ নিয়েছে তা জানিয়েছে এবং র‌্যাবের কার্যক্রমের আরো উন্নয়নের জন্য কী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তা আমাদেরকে দেখিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখব’, বলে যোগ করেন তিনি।

সংলাপ চলাকালীন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড দ্বিপাকি সম্পর্কের খুঁটিনাটি আলোচনা করেন, যার মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সংলাপের সূচনা বক্তব্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড জানান, ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়ে ‘একযোগে’ কাজ করতে চায়। ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তার েেত্র, বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে যখন গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক আইন হুমকির মুখে, তখন বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা একসাথে কাজ করতে চাই।’

ফলে এখন সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ তারা কোন পথে যেতে চায়। তবে এটাও ঠিক, মার্কিনিরা যেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তেমনি তাদের চাহিদারও শেষ নেই। মুখে না বললেও চীনের প্রভাব কমাতে গঠিত কোয়াডেও বাংলাদেশের যোগ দেয়া চায় তারা। এটাও বাংলাদেশের সামনে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ক্ষুদ্র ও দরিদ্রদেশ বলে বাংলাদেশ ওই ইস্যু থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছে। চোখ রাঙানি আছে চীনেরও। কিন্তু বাংলাদেশ যে ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটা অবস্থানে। চাইলেও যে এটা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভবপর নয়, এটা তো বাস্তব।

শেয়ার করুন