২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ১১:৫৩:২৩ পূর্বাহ্ন


সৌরবিদ্যুতে আলোকিত হয়েছিল চর মোন্তাজ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৩
সৌরবিদ্যুতে আলোকিত হয়েছিল চর মোন্তাজ


বাংলাদেশের প্রান্তিক শহর পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চল চর মোন্তাজ। ঢাকা থেকে সড়ক পথে পদ্মা মহাসেতু পেরিয়ে পটুয়াখালী পৌঁছে গলাচিপা হয়ে প্রমত্ত নদ নদী পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় চরটিতে। আবার ঢাকা সদরঘাট থেকে সরাসরি বিলাসবহুল দোতালা লঞ্চ যোগেও পৌছে যাওয়া যায় চর মোন্তাজে। 

হরহামেশা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে জীবন সংগ্রামরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আধুনিকতার ছোঁয়া সবে লাগতে শুরু করেছে। একসময় আঁধারে ডুবে থাকা সেখানেই ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের দুই দুরন্ত প্রকৌশুলি বোন আসমা খান, হাসনা খান শুরু করেন সৌরবিদ্যুতের মত ব্যাতিক্রমী কার্যক্রম। সঙ্গে গ্রামীণ মহিলাদের নিয়ে সমবায় সমিতি। স্বল্প শিক্ষিত মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কঠিন কাজটি ব্রত হিসাবেই নিয়েছিল বুয়েট স্নাতক সাহসী দুই বোন। অনেক বাধা বিঘ্নের অচলায়ন্তন পেরিয়ে আজ ২০২৩ জানুয়ারী মাসেও সৌর বিদ্যুতের শক্তিতে চলছে বরফ কল। হয়তো গ্রিড বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় কিছুটা ভাটা পড়েছে সৌর বিদ্যুৎ ব্যাবহারে। কিন্তু  দুর্গম এলাকায় দুই বোনের উপমধর্মী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বনির্ভর করার দুঃসাহসী উদ্যোগ গ্রহণ সঙ্গত কারণেই ছিল চ্যালেঞ্চিং। ২৪ বছর পরে চর মোন্তাজে ১২০ মিনিট সময় কাটিয়ে অনুভব করলাম এই ধরণের উদ্যোগ নিতে দেশপ্রেম, নিষ্ঠা,একাগ্রতা কতটা অপরিহার্য ছিল। আসমা হাসনার উদ্যোগ সেই সঙ্গে নাসির, রাশেদদের নিবেদনকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়। 

 আমি ইদানিং ঢাকা আসলে বুয়েট সহপাঠীর কোম্পানিতে উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করি। ফেব্রুয়ারী ২ তারিখ হটাৎ করেই সিদ্ধান্ত হলো বাংলাদেশের প্রথম ব্যাক্তি উদ্যোগের সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট, প্রথম সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে চালিত বরফ কল সরেজমিনে পরিদর্শনের। প্রয়াস নিলাম হেলিকপ্টার জোগাড়ের। পাওয়া গেলো না। সদরঘাট থেকে লঞ্চে যাবার প্রয়াস ব্যর্থ হলে অদম্য আমরা ৭ জন সড়ক পথে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। বৃহস্পতিবার অপরাহ্ন শুরু হলো পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল শহর হয়ে পটুয়াখালী যাত্রা। বলাবাহুল্য সাড়ে ছয় ঘন্টার যাত্রা পথে চ্যালেঞ্জ ছিল একটু খেয়ালি গাড়ি চালককে সামলে রাখা। তবে গোধূলি লগ্নে সেতু পেরুনোর অনুভূতি ছিল ব্যাতিক্রমী।

ভাঙা, মাদারীপুর,বরিশাল পেরিয়ে পটুয়াখালী যাত্রা স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের চার প্রবাসীর স্মৃতি বিনিময়ের অলংকারে। ছিমছাম সুন্দর পটুয়াখালী শহরটির প্রেমে পড়লাম প্রথম দর্শনেই। রাতের খাবার ছিল সুস্বাধু আর উপাদেয়। রাতটি সবাই স্মরণ করবে। কাটালাম হিল্টন নামের আরামদায়ক হোটেলে। উত্তেজনা সকাল থেকেই নদী পথে চর মোন্তাজ পৌঁছানোর। দক্ষিণ বাংলার প্রমত্তা তিনটি নদী পেরুনোর সময় দুই পাড়ের মনোরম দৃশ্য , জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য আমাদের হাওয়া ছবিটির কথা মনে করিয়ে ছিল। দুইপাড়ে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট নিয়ে অনেক সম্ভাবনার কথা আলোচিত হলো। রামনা বাদ চ্যানেলে কিছুদিন আগেই পায়েরা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছিল। এবারে আগুনমুখতে তিন নদীর মোহনা পেরিয়ে চর মোন্তাজ পৌঁছাতে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হলো। আমাদের সফরসঙ্গী ছিল বুয়েট থেকে গ্রাজুয়েট স্থাপত্যবিদ,পটুয়া। নদীপথে ছবি আকার অনেক উপকরণ পেলো। 

আমাদের চর মোন্তাজে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করা হলো। সাহসী গ্রামীন মেয়েদের উদ্যোগের কথা ওদের মুখে শুনলাম জানলাম। 

১৯৯৯ ঢাকার অভিজাত পরিবারের দুই সন্তান এই ধরণের উদ্যোগ নিবে ভাবতেই ভালো লাগে। ওদের একজন হয়ে এগুলো দেখে গর্বিত মনে হলো। চর অঞ্চলটি ঘুরে আমি এলাকাটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসাবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা দেখলাম। প্রথম প্রয়োজন অনুভব করলাম অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংস্কার করার। আরো দুই একটি বরফ কল, ক্ষুদ্র শিল্প ,কিছু বিনোদন প্রতিষ্ঠান , কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলে চর মোন্তাজ একসময় আলোকিত হবে। তখন এই অগ্রযাত্রার রূপকার হিসাবে অবশ্যই আসমা হাসনাদের  সবাই স্মরণ করবে।


শেয়ার করুন