১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৫৪:১৭ পূর্বাহ্ন


হিরো আলম ও বিএনপির নির্বাচন ফাঁদে আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০২-২০২৩
হিরো আলম ও বিএনপির নির্বাচন ফাঁদে আ.লীগ নির্বাচনে হিরো আলমের প্রতীক ছিল একতারা


মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আর এ ঝড়ের আঘাতে দেশে বিদেশে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকারের ইমেজ। ভবিষ্যতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি এ সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হতে পারে সে ব্যাপারেও নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বলা যায় বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছে সরকার। সার্বিক ঘটনায় সরকার খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা দেখা দিয়েছে যে সরকার কি হিরো আলম ও বিএনপি’র নির্বাচনী ফাঁদে ধরাশায়ী। 

জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্যের শূন্য ঘোষিত আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ১ ফেব্রুয়ারি। গত বছর ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর পরের দিন বিএনপির ৭ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫ জন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগ কারিরা হচ্ছেন বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম ও সংরক্ষিত নারী আসনের রুমিন ফারহানা। এ ছাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ দেশের বাইরে থাকায় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ভূঞা অসুস্থ থাকায় সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেননি। তবে, তারা ইমেলে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩ আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়নি। এ ছাড়া, বাকি ৬টি আসন শূন্য ঘোষণা করে গত ১১ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন দেয় সংসদ সচিবালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদের ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে কমিশন, যার নির্বাচনটি হয়ে গেরো গত ১ ফেব্রুয়ারি।

কেমন হলো উপ-নির্বাচন?

একেক আসনে একেক কায়দায় নির্বাচন হয়ে গেছে। ব্রাাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক নাটকীয়তা নিয়ে গণমাধ্যমে যখন একের পর এক আলোচনা বির্তক দেখা দিচ্ছিল কেননা এখানে অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, একজন বিশেষ প্রার্থীকে এই নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়ার জন্যই নানা ধরনের কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে পুরো উপ-নির্বাচনে আলোচনার ঝড় তুলেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) টানা ভোট গ্রহণ হয়।  এ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে ৬ জন এবং বগুড়া-৬ আসনে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম নির্বাচন করেন। বগুড়া-৪ আসনে মাত্র ৮৩৪ ভোটে আর  হেরে গেলেন হিরো আলম। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান ওরফে রিপু ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ২১ হাজার ৮৬৪ ভোট।  এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৭৪ ভোট। তবে তিনি বগুড়া-৪ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে আট শতাধিক ভোটে হেরেছেন।

তার নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে শুরু করে হেরে যাওয়ার পর থেকেই চলছে গণমাধ্যমে নানান ধরনের রির্পোট। তার বক্তব্য দিয়ে ইউটিউবে লাখ লাখ ভিউ হচ্ছে। আর পাশাপাশি সরস আলোচনায় দেশ কাপছে। 

নির্বাচনের আগে পরে কি কি বললেন এই হিরো আলম...

ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। নির্বাচনের দিনে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হিরো আলম বলেন, ‘সদরের (বগুড়া-৬) কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাচে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ।’ তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট গ্রহণ সুষ্ঠু হচ্ছে জানিয়ে হিরো আলম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকচি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্ছে। মাঠের অবস্থা খুবই ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামের নিশ্চিত এমপি হচ্চি। হিরো আলমের বাড়ি বগুড়া সদরের এরুলিয়া পলিপাড়া গ্রামে। এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এসব অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়। এরপর আরেকটি আসনে হেরে যাওয়ার পর এমপি হওয়া ছলডাক ফেল দেকাচ্চে, এমপি হবার দিচ্চে না বলে আক্ষেপ করেন আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। এর পাশাপাশি বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের পরাজয় মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় হিরো আলম সমর্থকদের সান্ত¦না দেন এবং ফলাফল বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করার কথা বলেন। অন্যদিকে হিরো আলম নিজে বলেন, আমার বিজয় ছিনতাই হয়েছে, আদালতে রিট করব। তার এমন অভিযোগে অবশ্য নির্বাচন কর্মকর্তাকে সিইসির ফোন দেন।  হিরো আলমের অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন বলে খবর বেরোয়। 

এদিকে নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানার উদ্দেশে হিরো আলম বলেন, ‘আপনি মাঠে এসে অভিযোগের তদন্ত না করে ঢাকা থেকেই হুট করে মন্তব্য করলেন। আপনি নন্দীগ্রামে এসে দেখেছিলেন, আমার এজেন্ট ছিল না? এজেন্ট ছিল, কিন্তু ফলাফলের কাগজ দেওয়া হয়নি। ভোট নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ ছিল না, এখনো নেই। ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটে হেরে যাইনি। ফল চুরি করেছেন। এ কারণে ফলাফলে হেরেছি। হিরো আলম আরও বলেন, ‘আমার এমপি হওয়া নিয়ে, সংসদে যাওয়া নিয়ে অনেকের ঘুম হারাম, মাথা কামড়ায়। একজন এমপির কাজ কী? সংসদে কথা বলা। আমি কি কথা বলতে পারি না? আমার চেহারা নিয়ে এত আপত্তি কেন? এত নাটক কেন? সেখানে কেন ভালো চেহারার লোক লাগবে? আমাকে সংসদে নিয়ে গিয়ে কি অভিনয় করাবেন? আমি আপনাদের মতো ভালো কথা বলতে পারি না। বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি, এ জন্য আপনাদের বাঁধে। আপনাদের মা-বাবা আছে জন্য পড়ালেখা করতে পেরেছেন, শিক্ষিত হয়েছেন। স্পিকার হয়েছেন, মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন, কমিশনার, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। আমাদের মতো নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা হলে এটা করতে পারতেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেন। অনেক এমপি তো স্বশিক্ষিত। সংসদে ঠিকমতো “স্পিকার” উচ্চারণ করতে পারেন না। আপনাদের এত যোগ্যতা থাকলে দেশের এই অবস্থা কেন? কেন জনগণ আপনাদের ধিক্কার দিচ্ছে।’

হিরো আলমের সংবাদ হামলার শিকার ২ সাংবাদিক

এদিকে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে হেরে যাওয়া আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবেদন করায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম ওরফে শিপুলের বিরুদ্ধে। গত ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সাতমাথা সংলগ্ন টাউন ক্লাবে এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার সাংবাদিকেরা হলেন বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি জে এম রউফ এবং স্থানীয় দৈনিক বগুড়ার স্টাফ রিপোর্টার জহুরুল ইসলাম। এ ঘটনায় বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্ত শরিফুলকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।

এ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিক কে কি বললেন..

রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন ‘আজ প্রমাণ করেছে সে, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাঁর সঙ্গে জিততে হয়।’ হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে।তারা সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এক শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর পাশাাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, জাতীয় সংসদকে খাটো করতে বিএনপি হিরো আলমকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল। 

পাল্টা জবাব..

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের বিষয়ে পরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হিরো আলম। বিএনপির মহাসচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই প্রসঙ্গ তুলে হিরো আলম বলেন, ‘মির্জা আলমগীর বলেন, এই সরকার এখন অসহায় হয়ে গেছে। এই সরকার অসহায় হয়েছে কি না, আমি জানি না। তবে আমি হিরো আলম যে অসহায় হয়েছি, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?’ অন্যদিকে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘আমি যদি পার্লামেন্টে গেলে পার্লামেন্ট ছোট করা হয়, তবে যখন মনোনয়ন কিনছি, তখন কিন্তু আপনাদের বলা উচিত ছিল, হিরো আলমের কাছে যেন মনোনয়ন বিক্রি করা না হয়। আপনারাই বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশ, সবাই নির্বাচন করতে পারবে। সবার যদি নির্বাচন করার কথা আইনে থাকে, তাহলে আমি ভোটে দাঁড়ালে সংসদ ছোট হবে কেন? তাহলে সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে আইন করতে হবে?’ 

মুখ খুললো টিআইবি’ও..

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)ও মুখ খুলেছে। হিরো আলমকে নিয়ে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল থেকে যেসব বক্তব্য এসেছে তাকে শিষ্টাচার বহির্ভূত ও বৈষম্যমূলক মনে করছে টিআইবি। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিয়ে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থাটি। টিআইবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, একজন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, সর্বোপরি দেশের একজন সাধারণ নাগরিককে নিয়ে দুটি রাজনৈতিক দলের বা কারোরই এমন উপহাস করার কোনো অধিকার নেই। হিরো আলমকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য অনভিপ্রেত উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তারা সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। উল্টোদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তার সঙ্গে জিততে হয়। দুই ক্ষেত্রেই সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলমকে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্যসূচক বিবেচনায় পরস্পরকে আক্রমণ করেছেন দুই নেতা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক রীতি অনুযায়ী পরস্পরকে নিয়ে বিষোদগার নতুন কিছু নয়। কিন্তু সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলমের ব্যক্তি পরিচয় ও অবস্থাকে মানদন্ড হিসেবে দাঁড় করিয়ে দুই দল একে অপরকে আক্রমণ করেছেন। সেই মানদন্ড যে ইতিবাচক কিছু নয়, বরং এর মাধ্যমে আলম এবং সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি দেশের ’সাধারণ’ একজন নাগরিকের প্রতি দুই বর্ষীয়ান রাজনীতিকের এমন আচরণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্থূলতাকেই জনসমক্ষে প্রতিষ্ঠিত করে। ড. জামান আরও বলেন, ’সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হলে এবং তার বয়স পঁচিশ বছর পূর্ণ হলে, কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত না হলে, দেউলিয়া না হলে, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ না করলে বা আনুগত্য স্বীকার না করাসহ কিছু শর্ত পূরণে তিনি সংসদ সদস্য হতে পারবেন। সংবিধানের শর্ত পূরণের পরও আলমকে কেন্দ্র করে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক শিষ্টাচারকেই ভূলুণ্ঠিত করে না, বরং তার সাংবিধানিক অধিকার অবজ্ঞার নামান্তরও বটে। ’হিরো আলম নির্বাচিত হলে সংসদকে ছোট করা হতো’ এমন বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকারন্তরে সংসদকে ছোট করা হয়েছে। কারণ, সংসদীয় গণতন্ত্রের চেতনা ও চর্চায় মানুষে-মানুষে বৈষম্যের প্রকাশ অগ্রহণযোগ্য।'

ভোল পাল্টালো সরকারি দল..

এদিকে আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম নিয়ে সরকারি দলের এমন মন্তব্য নিয়ে যখন দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে তখন বেশি তোপের মুখে পড়ে সরকারি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। কারণ তাদের সরকারের আমলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমকে ধন্যবাদ দেয়ার কথা থাকলেও তা তারা করেননি। পাল্টা তার বিরুদ্ধে নানান মন্তব্যে সারা দেশে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের এমন মন্তব্যকারিরা জানা গেছে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি দলে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। আর এজন্যই তড়িগড়ি ভোল পাল্টালেন তারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হিরো আলমকে নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য ছিল না, মির্জা ফখরুলকে নিয়ে ছিল আমার মন্তব্য। অন্যদিকে বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বগুড়ার নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি হিরো আলমকে অভিনন্দন জানাই। কারণ  সে অনেক ভোট পেয়েছে। তাকে এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ সমর্থন করেছেন।

শেষ কথা...

হিরো আলম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আসলে সরকারের রাষ্ট্রযন্ত্রই এখন প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। তাদের মতে, বিএনপিসহ সমমনা দলগুলি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে এসরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। একটি নির্বাচনকালীন সরকার তারা চায়। হিরো আলম হেরে যাওয়ায় পর তার নানান ধরনের মন্তব্যে এ সত্যটিই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ‘হিরো আলমের সঙ্গে একটা নির্বাচনে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আর আপনি (ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে) দলীয়ভাবে দাঁড়ান। এরপর আপনি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখেন, খেলা হয় কি না। খেলার জন্য নাকি উনি মাঠে প্লেয়ার খুঁজে পান না!’ অন্যদিকে নির্বাচনের পরে তাঁর সমর্থকদের মনে করে হিরো আলম নির্বাচনে হারেননি। ফলাফল পাল্টে তাঁকে হারানো হয়েছে। এ জন্য ফলাফল বাতিলের দাবিও করেন তাঁরা। সমর্থকেরা হিরো আলমের সঙ্গে দেখা করে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে ‘জনতার এমপি’ ঘোষণা দেন। এমন পরিস্তিতিতে একজন সম্পাদক মন্তব্য করেছেন কিছু বক্তব্য ও যুক্তি হাজির করে। এতে তিনি বলেছেন... জাসদের মশাল নিয়ে ভোট করার শখ এবার মিটলেই হয়। তাদের জন্য এ ভোট বিরাট বার্তা দিয়ে গেল। নৌকা না পেলে তাদের কোনো অবস্থানই নেই ভোটের মাঠে। শুধু বড় বড় কথা। ...অন্যদিকে ধানের শীষের কদর বাড়ল। কঠিন বার্তা এলো জোট-মহাজোটের প্রার্থীদের জন্য। সংসদে যাওয়াকে বড্ড বেশি সহজতর বিষয় মনে করছিলেন অনেকে। এসব মন্তব্যে বিশ্লেষকরা মনে করেন সরকার একভাবে হিরো আলমের নির্বাচনী ফাঁদে পড়ে গেছেন এই ভাবে যে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই তা ফুটিয়ে তোলা হলো এ নির্বাচনের মাধ্যমে। অন্যদিকে এসরকার ও আওয়ামী লীগ নামের ঐতিহ্যবাহি দলটি বিএনপি’র নির্বাচনী ফাঁদেও এরকম মারাত্মকভাবে আটকা পড়েছে। তা হলো নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকারের অধীনে নির্বাচনে যে কেনো আগ্রহী নন- তা প্রমাণে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে না। এটা সরকারের শেষ সময়ে বড়ো ধরনের ধাক্কাই মনে করেন অনেকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একারণেই কি এতো আগে অর্থ্যাৎ গত বছর ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তা পালন করেন? সরকারের শেষ সময়ে এতে যেমন ধাক্কা খেয়েছে তার পাশাপাশি হিরো আলমের সাদা মাটা বক্তব্যও দেশে বিদেশে নজর করেছে, যা সরকারকে মারাত্মকভাবে বিব্রত করেছে। 

এর পাশাাশি আরো একটি জিনিস ফুটে উঠেছে তা হলো গত বছর বিএনপি এসব সংসদ সদস্যের পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে সংসদ অচল হবে না। তিনি বলেছিলেন, ’তাদের যারা বুদ্ধি দিয়েছেন, তারা অচিরেই পস্তাবেন। কিন্তু বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে বিশ্লেষকরা এটাই বলবেন ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা আসলে পূর্বপরিকল্পিত। কেননা এমন ঘটনাটি ছিল ঔই সময়েও সরকারের জন্য একধরনের বিব্রতকর অবস্থা। অন্যদিকে বর্তমানেও এসব শুন্য আসনেও নির্বাচনে দিয়ে নানান ধরনের নাটক বির্তক একের পর সরকারকে বিব্রতকর অবস্থাতেই ফেলে দিচ্ছে। তাই কেউ মনে করেন হিরো আলম ও বিএনপি’র নির্বাচনী ফাঁদে আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী? এ প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

শেয়ার করুন