১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ১১:৬:২০ অপরাহ্ন


সংবর্ধনায় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন
যারা আমাকে পাগল বলতো তারা এখন আমার দলে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৩-২০২৩
যারা আমাকে পাগল বলতো তারা এখন আমার দলে ইলিয়াস কাঞ্চনকে ফুলেল শুভেচ্ছা


‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আগমন উপলক্ষে নিসচা যুক্তরাষ্ট্র শাখার আয়োজনে ৫ মার্চ জ্যামাইকার জেসন পার্টি হলে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু। নিসচা যুক্তরাষ্ট্র শাখার শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন স্বপনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান লিটনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)র লাইফ মেম্বার, রাজবাড়ী ডিস্ট্রিক্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউএসএর সিনিয়ার সহ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র’র জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ আবদুস সালাম, কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এ্যাট লার্জ এটর্নি মঈন চৌধুরী, এনওয়াই ইনস্যুরেন্স ও গোল্ডেন এইজ হোমকেয়ারের সিইও শাহ নেওয়াজ, খলিল বিরানী হাউসের কর্ণধার মো. খলিলুর রহমান, বিশিষ্ট অভিনেতা আহমেদ শরীফ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম, ডা. বর্ণালী হাসান, ডা. আব্দুল লতিফ, মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, এবিএম ওসমান গনি, রেজাউল করিম চৌধুরী, গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লিটন, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, সেবুল মিয়া, মেকআপ আর্টিস্ট মির্ধা জসীম, কবি সালেহা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নিসচা যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্যরা। এসময় তাকে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের শুরু করা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন এখন বিশ্বব্যাপি বিস্তার রাভ করেছে। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। পঙ্গুত্ব বরণ করে বোঝা হচ্ছে পরিবারের। নিরাপদ সড়কের দাবি সকলের। নিরাপদ রাষ্ট্র গড়তে নিরাপদ সড়কের বিকল্প নেই। তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা সমস্যা বাংলাদেশে প্রকট। সড়কে ফিরছে না শৃঙ্খলা, সচেতন হচ্ছে না মানুষ। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে লাইসেন্স বিহীন চালকের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা জোরদার সহ ফিটন্যাস বিহীন গাড়ী নিষিদ্ধ করতে হবে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, যার পরিবারে দুর্ঘটনা ঘটে, তারা ছাড়া আর কেউ তা বুঝতে পারে না। চালক, গাড়ি, পথচারী, আচরণ, আইনের প্রয়াগের অভাব ও সচেতনতার অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের এটি প্রতিরোধ করতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে সড়ক ব্যবস্থা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। তিনি এ অনুষ্ঠানে আসার সময় একজন বাঙালীকে রেড লাইটে রাস্তা পারাপারের উদাহরণ টেনে বলেন, অনেক বাঙালী উন্নত দেশে এসেও স্বভাব চেঞ্জ করতে পারেন না। আচরণগত পরিবর্তন হয়নি। এটা দু:খজনক। বিদেশের মাটিতেও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন বহু বাংলাদেশী। তিনি এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কমিটির কার্যক্রম আরো বেগবান করতে পরামর্শ প্রদান করেন। অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে শৃঙ্খলা ও সচেতনতার পাশাপাশি মানুষের আচরণ পরিবর্তন জরুরি। নিরাপদ সড়কের জন্য আমাদের সবাইকে নিজ থেকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন যারা করেন, তাদের কোনো স্বার্থ নেই। তারা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসে এটি করেন। সবাই দেশকে ভালোবাসার কথা বলেন। দেশকে ভালোবাসতে হলে, নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সারা বাংলাদেশে দুর্ঘটনার হার ২৯ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্রেও দুর্ঘটনার হার কম নয়।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্স কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা, লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগই সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। এছাড়াও সকল ধরনের যানবাহনে অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে তার সংগঠন মনে করে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠি এই ক্ষেত্রটি দখল করে রেখেছে। তারা অত্যন্ত শক্তিশালী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমি যখন আন্দোলন শুরু করি তখন অনেকেই আমাকে পাগল বলে সম্বোধন করতো, এখন তাদের অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে, আমার সাথে সহমত পোষণ করছেন। তারা বুঝতে পারছে এটা আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে যাওয়া নয়, এটা হত্যা।

শেয়ার করুন