২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৯:৪৬:৪৬ অপরাহ্ন


ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে আতঙ্ক কেন?
খন্দকার সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৩-২০২৩
ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে আতঙ্ক কেন? ড. ইউনূস


বাংলাদেশের গর্ব নোবেল লরিয়েট বিজয়ী ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বাংলাদেশে একশ্রেণির মানুষের অহেতুক আতঙ্ক আছে। ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস সারা বিশ্বে পরিচিত, সমাদৃত একজন ব্যক্তিত্ব। সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪০ জন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের বরাতে তার বিষয়ে বিজ্ঞাপন আকারে একটি চিঠি সনামধন্য মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে। 

চিঠি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লেখা। বিষয়বস্তু, নানাভাবে বাংলাদেশে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্তা করা নিয়ে। যেই না বিষয়টি প্রকাশিত হওয়া অমনি বাংলাদেশে একশ্রেণির মানুষ নানা মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে মাতম করছে। 

কেন তাকে এবং কীভাবে কি করা হয়েছে বা হচ্ছে সেই বিষয়ে কিছু বলার নেই। বাংলাদেশ সহ সবাই জানে কি হয়েছে, কি হচ্ছে। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের সময় তাকে নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা হয়। বলা জয় ইউনূস জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, উনি পদ্মা সেতুর নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থসহায়তা বাতিল করার জন্য দায়ী। এমনি আরো কত কিছু, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগের পেছনে ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কেন তার মতো সারা বিশ্বে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নিয়ে বাংলাদেশে এতো আতঙ্ক?

আমি নিজে উপস্থিত থেকে দেখেছি বিশ্ব সমাজ কীভাবে নোবেল বিজয়ীকে সম্মান, শ্রদ্ধা করেন। দুই একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত মনে হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত মত ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্বের জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে বাংলাদেশ উপকৃত হওয়ার সুযোগ হারিয়েছে। তার বিষয়ে এমন কিছু মানুষ বিষোদগার করে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে বিস্তর। কাচের ঘরে বসে তারা নিরন্তর ঢিল ছোড়ে। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত কিছু বিষয় এখন আদালতে বিচারাধীন। সেগুলো নিয়ে কিছু বলবো না। 

বাংলাদেশের কনস্টিটিউশন সব সক্ষম ব্যক্তির রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণ করে। সেই সূত্রে রাজনীতির টালমাটাল অবস্থায় ২০০৬-০৮ সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে (মাইনাস টু) রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন ইউনূস।  জনভিত্তি না থাকায় অচিরেই তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন। যে দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, লুটেরা ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আমলারা রাজনীতির মূল ধারায়, সেখানে একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তির রাজনীতির আগ্রহ থাকাকে আমি অন্যায় কিছু দেখি না। আমার মনে হয়, সেই থেকে একশ্রেণির মানুষ অধ্যাপক ইউনূস বিষয়ে আতংকিত।

আমি তার পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলছি না। একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি বিষয়ে যখন বিশ্বের ৪০ জন বিশেষ ব্যক্তিত্ব একটি বিশ্বসেরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে কিছু প্রকাশ করেছেন, তার একটি বিশেষ প্রেক্ষাপট আছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন অনিশ্চয়তা দানা বাঁধছে। ২০১৪, ২০১৮ দুইটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের পর সবাই চাইছে এবারের নির্বাচন যেন সবার অংশগ্রহণে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ হয়।

বাংলাদেশে সরকারবিরোধী শক্তিগুলো বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যদিও বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের দূতাবাসগুলোসহ বিভিন্ন প্রভাশালী দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসছেন একের পর এক। তারা আহ্বান জানাচ্ছেন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের। সরকার বারবার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে। বলছে, অতীতের মত নয় এবার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। কিন্তু অতীতের মতো এ কথায় আস্থা নেই সরকারবিরোধী দলসমূহের। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করেছে যে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপক্ষে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ যাতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেন সে পদক্ষেপ গ্রহণের। 

কিন্তু সব দলের অংশগ্রহণের বিষয়টা এখনো অনিশ্চিত। কারণ বিরোধী পক্ষ বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া তারা আর কারো অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। দেশের রাজনৈতিক বিভেদের মুহূর্তে কী হবে সেটা নিয়ে দেখা দিয়েছে এক অনিশ্চয়তা। কারণ সরকারি দল ও বিরোধীদলের মধ্যে যে একটা সংলাপ বা সমঝোতার প্রয়োজন সে থেকে দুই পক্ষই অনেক দূরে। দুই দলের যে চাওয়া তাতেও কোনো যোগসূত্র নেই। এতে করে দেশের রাজনীতিতে বিদেশি প্রভাব এখন সুস্পষ্ট। সেই মুহূর্তে অধ্যাপক ইউনূসের বিষয়ে ৪০ জন ব্যক্তিত্বের বিশেষ ভূমিকা বিশেষভাবেই বিবেচ্য।

শেয়ার করুন