২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৭:০৬:২৮ অপরাহ্ন


টরন্টো ফ্লাইটের যাত্রী কারা?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২২
টরন্টো ফ্লাইটের যাত্রী কারা? বাংলাদেশ বিমান


কানাডার কথা এক ধরনের রহস্যের অবতারণা ঘটে। দেশ থেকে অনেকেই অবৈধ সম্পদ অর্জন করে গোপানে পাড়ি জমান দেশটিতে নিরাপদ বাসস্থানের জন্য। এটা ছাড়াও অনেক ব্যাবসায়ীর বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থে ব্যবসা করলেও পরিবার-সন্তানাদি কানাডাতে রেখে আসেন। এ জন্য সেখানে কথিত ‘বেগম পাড়া’ গড়ে উঠেছে। 

সে কানাডাতে এতোদিন সরাসরি ফ্লাইট চালু ছিল না। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ মার্চ ঢাকা থেকে কানাডার টরন্টোতে একটি ‘পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক’ ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। কিন্তু এ নিয়ে রাজ্যের প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। আসলেই কী এটা বাণিজ্যিক ফ্লাইট? আর বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করতে যেসকল প্রস্তুতির প্রয়োজন ঢাকা-টরন্টো ছাড়াও অন্যান্য স্থানে, সেগুলোর কোনো কিছুই করা হয়নি বলে জানা গেছে। একটা রুট চালু করতে তার আনুষঙ্গিক কার্যাদি দ্রুত করলেও অন্তত ২ থেকে আড়াই মাস লেগে যাবার কথা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গেই হঠাত করেই বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হয় কীভাবে? এত দ্রুত কী টিকেট বিক্রি করা সম্ভব? শুধু তো ঢাকা-টরন্টো নয়। টরন্টো-ঢাকা ফ্লাইটেরও তো টিকেট বিক্রির প্রয়োজন হবে। এত দ্রুত তো এসব প্রক্রিয়া শেষ করা যায় না। কিন্তু এখানে টিকেট বিক্রির চিত্র অন্যরকম। 

গত ১৯ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ফ্লাইটের এক বিজ্ঞপ্তিতে টিকেট বিক্রির কথা জানানো হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ৫ মিনিটের মধ্যেই বিমানের ওয়েবসাইটে দেখা যায় টিকেট শেষ। এতো বড় একটা বিমান যেটা ননস্টপ বিশাল পথ অর্থাত ১২৫০০ কিলোমিটার পথ পরিভ্রমণ করবে (ওয়ান ওয়ে) তাতে অন্তত আড়াইশ থেকে তিনশ সিট থাকার কথা। এত বিশাল পরিমান টিকেট পাঁচ মিনিটেই শেষ হয়? অনেকেই বলেছেন, টিকেট নিয়ে বিমান বিশেষ রহস্যের জন্ম দিয়েছে। 

ওই বিজ্ঞপ্তিটি দিয়েছিলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার। এতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে কানাডার টরন্টো রুটে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করছে। ১৯ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে বিমানের ঢাকা-টরন্টো রুটের টিকেট বিক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। যাত্রীরা বিমানের যে কোনো সেলস সেন্টার, বিমান কল সেন্টার ০১৯৯০৯৯৭৯৯৭ ও বিমান অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ঢাকা-টরন্টো গন্তব্যে ২৬ মার্চ ফ্লাইটের টিকেট কিনতে পারবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের ফ্লাইট বিজি ৩০৫ টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে। ফ্লাইটটি ২৭ মার্চ টরন্টোর স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৭টায় গন্তব্যে পৌঁছাবে। টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট বিজি৩০৬ আগামী ২৯ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় যাত্রা করে ৩০ মার্চ ঢাকায় স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টায় পৌঁছাবে। বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে টরন্টো ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

এদিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৫ মিনিটের মধ্যে যাত্রীরা টিকেট কাটার চেষ্টা করলে ‘সোল্ড আউট’ (বিক্রি শেষ) দেখায়। যাত্রীরা কল সেন্টারে যোগযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয়- সাধারণ যাত্রীরা এখনই টিকেট পাবেন না।

সত্যতা যাচাইয়ে বিমান কল সেন্টারের ০১৯৯০৯৯৭৯৯৭ এই নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের কল সেন্টারের প্রতিনিধিরা জানান, এখনই ওই রুটে সাধারণ যাত্রীদের জন্য টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে না। বিমানের নির্ধারিত ব্যক্তিরা এই ফ্লাইটে যাবেন। এখন প্রশ্ন বিমানে নির্ধারিত ওই ব্যক্তিবর্গ কারা? একইসঙ্গে কবে নাগাদ এই রুটে সাধারণ যাত্রীরা যেতে পারবেন বিমান কর্তৃপক্ষ তা জানায়নি। এছাড়া এই ফ্লাইটের ভাড়া কত, কবে নাগাদ নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হবে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি বিমান। প্রশ্ন উঠেছে, বাণিজ্যিক ফ্লাইট, বাণিজ্য করার কোনো প্ল্যাটফর্ম না করেই কীভাবে বিমান পরিবহন শুরু হয়ে যায়। 

নিঃসন্দেহে ঢাকা-টরন্টো-ঢাকা বিমান ফ্লাইট একটা লাভজনক রুট হবে। এখন সাধারণ যাত্রীরা যেভাবে পরিভ্রমণ করেন, সেটা ব্যয়বহুল ও অধিক সময় নষ্ট। সরাসরি বিমান ব্যাবস্থা খুবই উপকারী এ রুটের যাত্রীদের। নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ সন্তোষজনক। কিন্তু প্রথম ফ্লাইটে এমন এলোমেলো কেন? বিমান কী করছে? কারা এ ফ্লাইটের যাত্রী- এটা নিয়েও রহস্য তৈরি হয়েছে। টিকেট বিক্রি শেষ। বা সাধারণ যাত্রীদের জন্য এ ফ্লাইট নয়। তাহলে অসাধারণ ওই যাত্রীরা কারা? তারা কী ভাড়া দিয়ে যাবেন নাকি আনন্দ ফুর্তির জন্য বিনা পয়সায় ভ্রমণ। প্রশ্ন আরো একটা আছে। র‌্যাব ও তার সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিনিদের নিষেধাজ্ঞার পর শোনা গেছে আরো অনেকের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সে ভয়টাও কী এখানে কাজ করছে কিনা কারো কারো ক্ষেত্রে সেটা নিয়েও কানাঘুষা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশে রাজনীতি, ব্যবসা, চাকরি করা অনেকের ফ্যামিলি বিদেশে নিরাপদ স্থানে রাখা। এটা এখন একটা নিরাপদ ব্যবস্থা। অনেকেই এটা করেন। এ গ্রুপে তেমন কেউ নেই এটাই সবাই মনে করেন, আবার সন্দেহও করছেন। 

জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের ফ্যামিলি এ বিমানের যাত্রী। এ বিমান পরিচালনার জন্য আনুমানিক বাংলাদেশি টাকায় ৩.২০ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। এর বাইরে থাকবে টরন্টোতে যে তিনদিন বিমান থাকবে সে বিমানবন্দরের ভাড়া। ওটা যোগ করলে অর্থ খরচ কততে পৌঁছলো? 

বিমান এটাকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট হিসেবে বলে দিলেও এটা বাণিজ্যিক ফ্লাইট না। তাহলে সাধারণ মানুষ টিকেট ক্রয় করতে পারতেন। যদিও বিস্তারিত জানা যায়নি তবে মনে হচ্ছে এটা অনেকটাই চার্টার্ট বিমানের মতোই ব্যাবরিত হবে। কারণ টরন্টোতে টিকেট বিক্রির অফিস নেই। এর জন্য  এজেন্টও নিয়োগ হয়নি। তাহলে বাণিজ্যিক হলো কীভাবে। ওপরন্তু দীর্ঘ পরিভ্রমণ করে যারা যাবেন ওই উদ্বোধনী বিমানে, তারা কী তিন দিন থেকে আবার বিমানে উঠে ফেরত আসবেন? সেটা যদি না-ই হয়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণের কষ্টের অর্থে ক্রয় করা বিমান কী খালি ফিরে আসবে? এ খরচ কার ওপর দিয়ে যাবে? 

সর্বশেষ, খবর ৭০ জন যাত্রি নিয়ে কানাডায় পৌছিয়েছে বিমান। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিমান সংস্থার লোকজনই ছিল। সাধারন যাত্রীদের স্থান হয়নি। আগামী জুনের আগে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ নেই। 


শেয়ার করুন