১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৫:৫২:২৫ পূর্বাহ্ন


তৃণমুলে নেতা-কর্মীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে
বিএনপিতে এখন পুরোনো মামলার ডর-উৎকণ্ঠা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৪-২০২২
বিএনপিতে এখন পুরোনো মামলার ডর-উৎকণ্ঠা মতিঝিলে শান্তিপুর্ন কর্মসুচী থেকে বিএনপি তরুন নেতা ইশরাক হোসেনকে আটক ও পরে ছেড়ে দেয় পুলিশ, ফাইল ছবি


করোনা মহামারীর কারণে দুই বছরের মতো কর্মসূচি বা কার্যক্রম তেমন একটা না থাকার পর আবার কর্মসূচিতে ফিরছে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে পুরোনো মামলায়।

সম্প্রতি নয় বছর আগের অগ্নিসংযোগের এক মামলায় রাজধানীর মুগদার সাতজন বিএনপিকর্মীর দুই বছর করে সাজা হয়েছে। পুরোনো মামলাটিতে সাজা হওয়ার পর বিএনপির হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলের যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ স্পর্শকাতর মামলা রয়েছে তারা উৎকণ্ঠায়।

মুগদা থানার মামলায় সাজার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলেছেন। তার দাবি, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার প্রমাণ এই মামলা। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেছেন, পুরোনো মামলা দ্রুত শেষ করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাজা দিতে সেল গঠন করা হয়েছে।

ফখরুল বলেছেন, আমরা শুনেছি যে, তালিকা তৈরি করেছে সরকার। সেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে এই মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এই সেল দিয়ে অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সেই মামলাগুলোতে কী আছে? একটা হচ্ছে- আমি নাকি ময়লার গাড়ি পোড়াচ্ছি, সিটি করপোরেশনের গাড়ি পোড়াচ্ছি। সেক্রেটারিয়েটের ভেতরে মোটরসাইকেলের পেছনে গিয়ে নাকি বোমা মেরেছি। এসব মামলা আমার বিরুদ্ধে।’

বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধ মামলা রয়েছে, তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করেছেন প্রতিবেদক। মুগদার মামলায় সাজার পর তাদের মধ্যে ভর করেছে নতুন আতঙ্ক। যদিও তাদের অভিযোগ মামলাগুলো ‘মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ করা।

দলের নিয়মিত ও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে এখন মাঠে জোর দিচ্ছে বিএনপি। সভা-সমাবেশে কখনো কখনো অনুমতি পেতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচি পালন হচ্ছে। জেলা ও থানা পর্যায়ে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে কোথাও কোথাও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেক জায়গায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

এর মধ্যেই গত রোববার ৯ বছর আগে গাড়িতে আগুন দেয়ায় মুগদার বিএনপির সাত নেতা-কর্মীকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এদের তিনজন কারাগারে আছেন। মামলায় খালাস পেয়েছেন ২৯ জন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ রায় দেন।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, রাজনীতিতে মামলা-মোকদ্দমা নতুন কিছু না। কিন্তু গায়েবি মামলায় সাজা এটা মানা যায়? নির্বাচনের আগে এটা দিয়ে আমাদের ব্যস্ত রাখতে চায় সরকার। তিনি বলেন, মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীদের এখন সাজা দেয়া শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা নিয়ে মাঠের কর্মীদের শঙ্কা কাজ করছে। তবে আমরা ভীত নয়- যোগ করেন আব্দুস সালাম।

এদিকে পুরোনো আরেকটি মামলায় গত বুধবার গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির তরুণ নেতা ইশরাক হোসেন। প্রচারপত্র বিতরণকালে রাজধানীর মতিঝিল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দাবি, সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের আশঙ্কায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিএনপির দাবি, আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে সারা দেশে যত মামলা হয়েছে তাতে দলীয় প্রধান, স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও আসামি। এসব মামলার আসামি তাদের প্রায় ৩৫ লাখ নেতা-কর্মী।

নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতাদের মামলা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ নেতাদের। রায়ে সাজা হলে অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিতে আইনি জটিলতায় পড়বেন বলেও আশঙ্কা তাদের।

বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপিপন্থী আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা, হয়রানি করার জন্যই মামলাগুলো দেয়া। সাজা দেয়ার ঘটনা বলে দেয় সরকার সেই অবস্থানেই আছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যেসব মামলা দেখছি সেগুলো কোনোটা সাক্ষ্যগ্রহণ, কোনো চার্জশিটের পর্যায়ে আছে। আসলে মামলা এতো বেশি যে কোনটা কোন অবস্থায় আছে বলা মুশকিল। তবে যাদের সাজা হবে তাদের জন্য রাজনীতি কঠিন হবে এটাই স্বাভাবিক।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, মুগদার মামলায় সাজা হওয়ার পর করণীয় ঠিক করতে বৈঠকও করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতারা। ওই বৈঠকে সাজা দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

তবে মাঠেই ফয়সালা হবে মন্তব্য করে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, সরকার সরকারের কাজ করতে থাকুক, আমরা আমাদের কাজ করি। ফয়সালা যা হওয়ার মাঠে হবে। টেনশন করার কিছু নেই। সময় করণীয় ঠিক করে দেবে।


শেয়ার করুন