১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ৬:৩৭:৫০ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে নতুন উদ্যোগ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে নতুন উদ্যোগ


বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে পার্শ্ববর্তী ভারত বা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর পর্যন্ত যেয়ে সঠিক চিকিৎসা করান। এ জন্য প্রচুর অর্থও ব্যয় করে থাকেন তারা। রোগ ও অসুস্থতার কোনো সময় নেই। তবু অমন অবস্থাতেও প্রচুর অর্থ খরচ করে প্রয়োজনে প্রাইভেট বিমানযোগেও যেয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন বিত্তশালীরা। কিন্তু বাংলাদেশের চিকিৎসার মান ভালো। এরপরও কেন বাংলাদেশে চিকিৎসকদের ওপর আস্থা নেই এ প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। তবে সাধারণ মানুষের অমন বিদেশ যেয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। তাই তারা দেশেই চিকিৎসা করান। আর সেটা নামীদামি ডাক্তারদের তাদের প্রাইভেট ক্লিনিক বা চেম্বারে গিয়ে। কিন্তু এতেও প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যায়। সরকার এ ব্যাপারে দৃষ্টি রেখেছেন। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা স্বল্প খরচায় সাধারণ রোগীদের যেন তাদের অবসর সময়ে দেখতে পারেন এ ব্যাপারে একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি বলেছেন, ‘সরকারি হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকরা বিনামূল্যে রোগী দেখেন। এতে বিকেলে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে না পেরে বাইরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে দেখান। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের ‘ফি’ বেশি হওয়ায় দেশের মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ৩০ মার্চ ২০২৩ থেকে পাইলটিং প্রক্রিয়ায় দেশের ১০টি জেলা ও ২০টি উপজেলা হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসকদের বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কিছু সম্মানি ফি প্রদানের মাধ্যমে মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবে। এর সঙ্গে একই সময়ে বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষাসমূহও করা যাবে।’

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইনস্টিটিউশনাল প্রাকটিস নীতিমালা-২০২৩ চূড়ান্তকরণ সংক্রান্ত একটি সভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি।

সভায় মন্ত্রী জানান, মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে সেসব বিষয় নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করা হয়েছে। দেশের সব বিভাগে গিয়ে জেলা-উপজেলা হাসপাতালে সেবার মান যাচাই করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দেশের চিকিৎসক নেতাকর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় কথা হয়েছে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। সব বিষয় মিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই বৈকালিক ইনস্টিউশনাল প্রাকটিস আপাতত ছোট আকারে শুরু করা হচ্ছে। এই কাজের সুফলতা দেখে খুব দ্রুতই দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করা হবে।

সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের সম্মানি ফি নির্ধারণ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, অধ্যাপক পর্যায়ে ফি ৪০০ টাকা তার সঙ্গে সহযোগী ২ জন পাবে পঞ্চাশ টাকা করে। সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালটেন্টরা পাবেন ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালটেন্ট বা সমপর্যায়ের চিকিৎসকগণ পাবেন ২০০ টাকা করে যাদের সহযোগী ২ জন পাবেন ৫০ টাকা করে। এর পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীদের সার্জারী, ডায়াগনস্টিক/ ক্লিনিক্যাল/ প্যারা-ক্লিনিক্যাল টেস্টসহ বিভিন্ন রকম পরীক্ষার জন্যও বৈকালিক ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সরকারি চিকিৎসকদের সপ্তাহে কয়দিন করে ডিউটি থাকবে সে প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, একজন চিকিৎসককে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন অতিরিক্ত ৩ ঘণ্টা করে সেবা দিতে হবে। তবে, এই সেবা যাতে মানুষ সপ্তাহে অন্তত ছয় দিন নিশ্চিত করে পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

চিকিৎসকরা অতিরিক্ত ৩ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন কি না সে প্রসঙ্গে সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, চিকিৎসকরাসহ সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি সেবাদানের জন্য সরকারের প্রয়োজন হলে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে হবে। এটিই নিয়ম। সেক্ষেত্রে সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য থাকবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষাসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।

শেয়ার করুন