২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৭:৩৮ অপরাহ্ন


সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপিকে গ্যারান্টি আমেরিকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৪-২০২৩
সুষ্ঠু নির্বাচনে বিএনপিকে গ্যারান্টি আমেরিকার


বর্তমান সরকারের অধীনেই বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে শতভাগ গ্যারান্টার হতে চায় আমেরিকা। দেশটি এমন নিশ্চয়তা দিয়ে তার রাখতেও পারে। এবং এর পাশাপাশি এধরনের প্রতিজ্ঞা রাখার শতভাগ নিশ্চয়তা বিধানের ক্ষমতা আছে বলে জানিয়েছে প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। অন্যদিকে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন-যা এবছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরতে হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে চলমান সঙ্কটকেও খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করে ফেলতে চায় আামেরিকা। তবে এব্যাপারে বিএনপি কী করবে বা করতে যাচ্ছে তা খুব সহসা বোঝা না গেলেও আমেরিকার প্রস্তাবটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ দৌড়ঝাড় চলছে। খবর বিভিন্ন সুত্রের। 

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে পর্দার আড়ালে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এসব বিষয় খুব চোখে না পড়লেও সম্প্রতি পিটার হাসের বাসায় বিএনপি যাওয়া আর সেখান থেকে এক দৌড়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে বিএনপি’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুলের ছুটোছুটি ঠিকই রাজনীতি সচেতন বাঙালীর দৃষ্টি এড়ায়নি। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে তার বাসায় গিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। ১৬ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে তারা বারিধারায় রাষ্ট্রদূতের বাসায় যান। সেখানে অন্তত ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন তারা। তবে সবচেয়ে অবাক কান্ড হলো দুপুরে আয়োজিত এই বৈঠক নিশ্চয় ইফতার পার্টি ছিলো না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে কেনো এমন গরম দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে দেখা করতে যাওয়া। বিশ্লেষকদের মতে, এতেও কোনো আপত্তি থাকতো না যদি না এই বৈঠক নিয়ে কেউ কিছু বলতেন। রহসজন্যক হলেও সত্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বিএনপির নেতারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিন্তু কোনো কিছু না বলায়, তা নিয়ে রহস্যের ডাল-পালা মেলছে চারিদিকে। 

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ মির্জা ফখরুলের

এদিকে পিটার হাসের সাথে বৈঠকের কিছুই গণমাধ্যমে না জানানো যেমন রহস্যহজনক ছিল, তেমনি এইদিন রাতেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সূত্র থেকে গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, প্রতি মাসেই নাকি খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিয়মিত দুই-তিনবার সাক্ষাৎ করেন মির্জা ফখরুল। তারই অংশ হিসেবে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন মহাসচিব। সাক্ষাতে মহাসচিব তার শারীরিক অবস্থায় খোঁজ-খবর নেন। আর দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকলেও সেটি তাকে জানান হয়। 

প্রশ্ন হচ্ছে কি সে সিদ্ধান্ত?

প্রশ্ন হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখনো দলের চেয়ারপাসন। তার বিচার বুদ্ধি বা রাজনৈতিক দক্ষতা এখনো বিদ্যমান। বয়স বা রোগের ভাড়ে তিনি যে একেবারে কাহিল তা কিন্ত না-এমনটাই দলের বিচক্ষণ নেতাকর্মীরা জানেন বলেই জানা গেছে। তাদের কয়েকজন তাদেরই নিজস্ব ধারণা থেকে সেদিনে দলের কয়েকজনের রাজনৈতিক নেতার মুভমেনট বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদক জানিয়েছেন অন্যকথা। তাদের মতে’ বাংলাদেশে এখনো বিএনপি’র পরিচালনার সব্বোর্চ ক্ষমতা রাখেন এই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। দেশে বিদেশে বিএনপি’র সাথে যারাই যোগাযোগ রাখেন বা রাজনৈতিক তৎপরতা চালান তারা বিএনপি এই চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথেই বোঝাপড়া করে নেন সংশ্লিস্ট বিষয়ে অধিকতর স্বচ্ছতার জন্য। এবং তাকে ঘিরে রাখা দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়ন নেতাও রয়েছেন এই প্রক্রিয়ায়। এর অন্যতম কারণ খালেদা জিয়া বাংলাদেশেই শ্ব-শরীরেই অবস্থান করছেন, দেশেই আছেন। সে হিসাবে ধরে নেয়া হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে বিএনপি’র কয়েকজন নেতার সাথে বৈঠকে উস্থাপিত প্রস্তাবটি দেশে অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়ার কাছেই হস্তান্তর হবে সব-পক্ষের কাছে নিরাপদ ও গ্রহণযোগ্য। 

অনেক সময় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয় বিএনপি’র নেতা কে? ধারণা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে বিএনপি’র কয়েকজন নেতার বৈঠকের পর তার বিষয়বস্তু নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে যাওয়ার মধ্য দিয়েই একটি বিষয় পরিস্কার হয়েছে। বোঝা গেছে, দেশে কেউ বিএনপি’র নেতৃত্বকে খুঁজে না পেলেও আসলে যে বিদেশীরা প্রকৃত সত্যটা জানে তা চলমান প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কি এমন সিদ্ধান্ত যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে গেলেন? নাম না-প্রকাশ করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ নিশ্চিতে আমেরিকা অনেক আন্তরিক ও তৎপর। এর পাশাপাশি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে মার্কিন আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বড় বিষয়টি হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি। আর এব্যাপারে নিশ্চয়তার বিষয়টিই দেশে অবস্থানরত বিএনপি’র প্রকৃতই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি মূল নেতৃত্ব খালেদা জিয়ার কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। বোঝানো হয়েছে, এর আগে ড. কামাল হোসনের নেতৃত্বে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে যেমন সেসময়ে বিএনপি সমঝোতার নির্বাচনে যোগ দিয়েছিল বর্তমানে আমেরকিার এই তৎপরতা তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং যথেষ্ট নির্বরযোগ্য।

 বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি’র চেয়ারপারসনকে আমেরিকার এই ম্যাসেজটি দিতে গেছেন যে তারা (আমেরিকা) এইবার শতভাগ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে চায়। এবং আমেরিকার প্রস্তারে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে বলে বেগম জিয়াকে জানানো হয়। খালেদা জিয়াকে বোঝানো হয় বিএনপি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে বা তাদের একটা তদারকি চেয়ে সম্প্রতি যে দৌড়ঝাপ শুরু করেছিলো সেব্যাপারে আমেরিকা নেতিবাচক মত পোষণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নাকি বিএনপি’র শীর্ষদের পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের কাছে দৌড়-ঝাপে রাষ্ট্র হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে নেমে আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এমনটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়েও এমন মেসেজ দিয়েছেন যে বিএনপি এমনটা করে ফেলত পারে। এজন্য পিটার হাস ক্ষমতাসীনদের বলেছেন এটা (আওয়ামী লীগ সরকারের) জন্য খুবই নেতিবাচকই হবে। তবে একটি সূত্র জানায়, আমেরিকা মনে করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে বিএনপি জাতিসংঘে দিকে ছুটোছুটি করলে তাদের (আমেরিকার) জন্য এই সময়ে বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে বেশ বিব্রতকর ও অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে। তাই বাংলাদেশে বিএনপি-আওয়ামী লীগ এই উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে চলমান সঙ্কটের একটি সম্মানজনক সমাধান করা হলে তার দেশের বাইডেনের প্রশাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও মঙ্গল হবে। কেননা ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে এখনো আমেরিকা বাংলাদেশকে গ্রহণযোগ্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনি চীনের নানান ধরনের বাগড়া দেয়ার কারণে। আর এরই মধ্যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট দীর্ঘায়িত হলে বা বিএনপি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে জাতিসংঘের দারস্থ হলে তা হবে আমেরিকার বাড়তি ঝামেলা। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকা মনে করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের পুরো পররাষ্ট্র নীতি অন্যদিকে টার্ন নিয়ে নিতে পারে। ফলে বিশ্ব রাজনৈতিক মাঠে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে  চীন-রাশিয়া এমনকি ভারতও দাঁড়িয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরকিার লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সৃস্টি হবে নতুন বিপত্তি-ঝক্কি-ঝামেলা। 

এদিকে সম্প্রতি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে জাতিসংঘের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। সেক্ষেত্রে আমেরিকার পাশাপাশি ইইউরও পড়বে বিপত্তিতে। কেননা ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশ ও ইইউর অবস্থান প্রায় একই রকম। ফলে আমেরিকা এখন বাংলাদেশকে নিয়ে তড়িগড়ি কিছু করে ফেলতে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানটি হবে বাইডেন প্রশাসনের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বড়ো পাওয়া। তবে আগামীতে আসলে কি হবে তা ঈদের পরে কিছুটা আচ করা যাবে বলে কেউ কেউ মনে করলেও তা যে আরো সময় নেবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ বিএনপি আগের চেয়ে এখন বেশি শক্তি অর্জন করেছে রাজনৈতিক ময়দানে। তারা কতটা আমেরিকার বা অন্য দেশের কথায় গিয়ে দল ধরে রাখতে পারবে তা বিবেচ্য বিষয়।

শেয়ার করুন