২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৫:৪৫:২৫ অপরাহ্ন


কঠোর আন্দোলন প্রশ্নে কঠিন পরীক্ষার মুখে বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৩
কঠোর আন্দোলন প্রশ্নে কঠিন পরীক্ষার মুখে বিএনপি


দলের পাশাপাশি জোটকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সরকার বিরোধী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে বিএনপি। একদিকে বিএনপি ও তার শরিকদের ওপর নানানভাবে সরকারের ভেতর থেকে চাপ রয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক চাপও কুট-কৌশলও মোকাবেলা করতে হচ্ছে বিএনপি’কে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

বিশাল জোটের নেতৃত্বে মূলত বিএনপি..

সরকারের বিরুদ্ধে ডান-বামসহ উদার গণতান্ত্রিক দলগুলি এখন বলা চলে এককাতারেই। প্রায় সব দল মতকে নিয়ে আন্দোলনের মাঠে বিএনপি। ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। প্রায় একিই ধরনের কর্মসূচি নিয়েই সাথে যোগ দিয়েছে বলা যায় মাঠের সব বিরোধী দল। বিএনপি’র সাথে বর্তমানে যুগপৎ আন্দোলনে আছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এই জোটভুক্ত দলগুলো হলো জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। গণফোরামের একাংশ গণফোরাম বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মোহসীন মন্টু এবং অ্যডভোকেট সুব্রত চৌধুরীও বিএনপি’র সাথে আন্দোলনে নেমেছে যুগপৎভাবে।

অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ১২ শরিক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন গড়া জোটও একিই দাবিতে আন্দোলন করছে। ‘১২ দলীয় জোট’ গড়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার। নতুন এই জোটে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ছাড়াও রয়েছে কল্যাণ পার্টি, জাতীয় দল, বাংলাদেশ এলডিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল- জাগপা (তাসমিয়া প্রধান), এনডিপি, এলডিপি (সেলিম), মুসলিম লীগ, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি এবং সাম্যবাদী দল। সম্প্রতি লেবার পার্টি বেরিয়ে গেছে এই জোট থেকে।

অন্যদিকে ১১টি দল নিয়ে গড়া জোটও একিই দাবিতে আন্দোলনের মাঠে। এই জোটে আছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, জাগপা (খন্দকার লুৎফুর), ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), বাংলাদেশ ন্যাপ, বিকল্প ধারা (নুরুল আমিন), সাম্যবাদী দল, গণদল, ন্যাপ-ভাসানী, ইসলামী ঐক্যজোট, পিপলস লীগ ও বাংলাদেশ সংখ্যালঘু জনতা পার্টি। 

এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ সরকারকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে এদের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে সংসদ ভেঙ্গে দিতে দাবি জানিয়ে আসছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে । সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নির্মাণে জনগণের আস্থা অর্জন করতে না পারায় প্রহসনের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

বিএনপি’র ওপর সরকারের চাপ..

আন্দোলনের মাঠে এই বিশাল বহরের প্রধান দল বিএনপি’র ব্যাপারে মুখে কিছু না বললেও আওয়ামী লীগ অনেক উদ্বিগ্ন। সরকারের বিরুদ্ধে ডান-বামসহ উদার গণতান্ত্রিক দলগুলি এককাতারে চলে আসায় সরকারে মধ্যে এধরনের অস্থিরতা রয়েছে, আছে দুশ্চিন্তা। দলমত রাজপথে এক হয়ে মাঠে নামায় দেশে বিদেশে সরকার কঠিন ইমেজ সংকটে আছে। সব দল মতকে নিয়ে আন্দোলনে মাঠে নিয়ে আসতে পারায় বিএনপি’র পক্ষ থেকে সফল হয়ে গেলে কি পরিণতি হতে পারে ক্ষমতাসীনদের তা নিয়ে নানান কৌশল নিয়েছে তারা। বিএনপি’র নেতৃত্বে একটি এক্যবদ্ধ আন্দোলন ঠেকাতে এবং ঐক্যে ফাটল ধরাতে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বিষয়টি মাঠে আন্দোলনরত বিএনপি তা টের পাচ্ছে। এদিকে ৫ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়েও বিএনপি আছে বিভিন্ন ধরনের চাপে। একদিকে দলের ভেতরে চাপ অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এসব নির্বাচনে অংশ নেয়াতে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আছে প্রশাসনিক কঠোর নজরদারি ও বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব।

গ্রেফতার ...হয়রানি..

মাঠে জোর গুঞ্জন রযেছে আন্দোলনে বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যেকোনো সময়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নেমে পড়তে পারেন। এই আতঙ্ক থেকে সরকার রযেছে সজাগ। ১ মে তে রাজধানীতে বিএনপি’র ওপর তেমন কিছু না না করলেও অন্য বিভাগেও আওয়ামী লীগ ঠিকই নানান ধরনের কর্মসূচি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। মে দিবসে খুলনা মহানগর ও জেলা শ্রমিক দলের র‌্যালি পুলিশ বাধার মুখে পড়ে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। এ ঘটনায় ১০-১৫ জন শ্রমিক আহত হয় বলেও দাবি করে বিএনপি। পুলিশ দুই জনকে আটক করেছে। ১ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর স্টেশন রোডে এ ঘটনা ঘটে। 

এ সময় খুলনা মহানগর শ্রমিক দলের সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম শফি এবং সদস্য ইসলাম খলিফাকে আটক করা হয়েছে। এর আগেও এপ্রিলে বিভিন্ন জেলায় বিএনপির কর্মসূচিতেও পুলিশের বাধা লক্ষ্যণীয় ছিল। এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মন্ত্রীদের ‘অপপ্রচার’ ফের কারাগারে নেয়ার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের নানারকম বক্তব্যে‘র প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর পরেও যদি তারা এই সমস্ত কথা-বার্তা বলে, অপপ্রচার করে, এই কথা বলার অর্থই হচ্ছে তারা আবারো কোনো গভীর চক্রান্ত করছে। যে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে তারা আবার কারাগারে নিতে পারে কিনা, পরিকল্পনা-চক্রান্ত করছে কিনা সেটা আমাদেরকে চিন্তা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এতে বোঝা যায় যে ক্ষমতাসীন আওেয়ামী লীগ হয়তবা বিএনপি’র আন্দোলন সংগ্রামকে এখন আরো কঠোর নজরদারির মধ্যে রেখেছে যা দলটি (বিএনপি) টের পেয়েছে। 

সরকারের বিদেশ মিশন অনেক সক্রিয়..

রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে বেশি সক্রিয়।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দেশ সফর যে শুধু কূটনৈতিক নয় বরং রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ তা এখন গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। নির্বাচনের আগে এমন সফরের প্রাপ্যতা নিয়ে এখনই দেশের নানান ধরনের হিসাব নিকাশ কষছেন বিশ্লেষকরা। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে রাজনীতির বার্তা কী তা প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ ফিরে না আসার আগে খুব একটা বোঝা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী ফিরে এলেই তার চলনে বলনে বোঝা যাবে তিনি কী কী পেলেন এমন সফরে। ৯ মে সফর শেষে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব সফরের মধ্যে শুধু জাপানেই ছিল দ্বিপক্ষীয় সফর।  তবে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারত্বে উন্নীত হয়েছে তা স্পষ্ট। এদিকে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনার পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশকে ২২৫ কোটি (২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারে বিশ্বব্যাংকের ঋণ দেয়ার খবরে অনেকের মধ্যে চমকই লেগেছে।

 অন্যদিকে এর আগে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতির যে ব্যাপক প্রশংসা করেছেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার তা বেশ ফলাও করে বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে।  আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভাকে উদ্ধৃত করে আব্দুল মোমেন এটাও জানান যে আইএমএফের প্রধান বলেছেন ‘সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। ফলে সরকার বিএনপিসহ মাঠের বিরোধী দলের আন্দোলনকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েই এগুচ্ছে যার ফলাফল দেখা যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। 

বিএনপি’র ওপরও চাপ..ও শেষ কথা

দেশে-বিদেশে ক্ষমতাসীনদেরএমন তৎপরতার ব্যাপারে বিএনপিও মুখ খুলেছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার ক্ষমতায় থাকতে বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অন্যদিকে দেশে নিপীড়ন নির্যাতনের অভিযোগও তুলেছে বিএনপি। তবে বিএনপি’র ওপর আরো অনেক চাপও আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে শতভাগ গ্যারান্টার হতে চেয়েছে আমেরিকা। এব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে বিএনপি’র ওপর একধরনের চাপও রয়েছে বলে শোনা যায়। দেশী-বিদেশী এসব চাপ ও সরকারের কৌশল নিয়ে বিএনপি এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সরকারের নানান ধরনের কৌশল মোকাবেলা করে দলটি কিভাবে সামনের দিকে কৌশলে এগুবে এবং এর পাশাপাশি ঐক্যকে আরো সুদৃঢ রাখবে তা হয়ত সময় বলে দেবে।

শেয়ার করুন