২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন


পাঁচ সিটির নির্বাচন দিয়ে সক্ষমতা বুঝা যাবে না
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৫-২০২৩
পাঁচ সিটির নির্বাচন দিয়ে   সক্ষমতা বুঝা যাবে না


সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ভোটাররা এখন ভোট দিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। দলের সমর্থকরাও ভোট দিতে যাচ্ছে না। এই পাঁচ সিটির নির্বাচন দিয়ে সক্ষমতা বুঝা যাবে না। কারণ এক পাক্ষিক নির্বাচন হচ্ছে।সুজন-এর উদ্যোগে ‘আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন: প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৫ মে ২০২৩-এ গাজীপুর, ১২ জুন ২০২৩-এ খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন ২০২৩-এ রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠিতই হয়েছে ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে, ভোট দিয়ে, নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। নির্বাচন কমিশন এখন সেটি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের দেশে সবকিছু অনুকরণ করি। ভারতের অনুরসরণে এখানে ভোটার দিবস করা হচ্ছে। ভোটার দিবস করতে হলে ভোটারদের কাছে যেতে হবে। 

আসন্ন পাঁচ সিটি কপোরর কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকÑসুজন-এর উদ্যোগে ২১ মে ২০২৩ আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন: প্রসঙ্গিক ভাবনা শীর্ষক এই অনলাইন গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের সঞ্চালনা করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  সুজন সহসভাপতি বিচারপতি এম এ মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রমুখ। লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।  

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই পাঁচ নির্বাচনের মাধ্যমে কিছুটা অন্তত ¯পষ্ট হবে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। ২০১৩ অনুষ্ঠিত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়নি। এরপর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গত নির্বাচনে বিরোধীদল অংশ নিয়েছিল। এবার ভোটারদের সামনে কোনো বিকল্প থাকবে না। বিরোধী দল অংশ না নেওয়ায় এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য হবে না। আমাদের সাংবিধানিক বিধান হলো নির্বাচন হলও সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন তা না হলে সাংবিধানিক মানদন্ড পূরণ হবে না। অতীতে দেখা গিয়েছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি হস্তক্ষেপ না করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। 

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা স¤পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি ফিরিয়ে আনার জন্য যে মনোভাব দরকার তা কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। কেউ চায় না সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। ইতিহাস থেকে আমরা দেখেছি, একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। তাই সেই ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।  

আবু আলম শহীদ খান বলেন, কয়েকটি দল অংশ না নেওয়ায় এই নির্বাচন নিয়ে একটি বড় অংশের উৎসাহ থাকবে না। তারপরও যারা অংশ নিছে তারা যাতে সমান সুযোগ পান, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সচেষ্ট হতে হবে। কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও ক্ষমতাসীনরা সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। 

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে এখন নির্বাচন যে অবস্থায় আছে তাতে এই নির্বাচনগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যবেক্ষণের দিক থেকে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। এখন নির্বাচনে যত কম দল অংশ নিচ্ছে, যত কম মানুষ ভোট দিচ্ছে তত বেশি ক্ষমতাসীনদের জন্য সুবিধা হচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এখন নিজেদের মধ্যে ঝুঁকিমুক্ত নির্বাচনের একটি ধারা দাঁড়িয়ে গেছে। 

রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, একের পর এক বিতর্কিত নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় নায়ক ভোটারদেরকে অপমান করা হচ্ছে। ভোটাররা ভোটের দিন ক্ষমতায়িত বোধ করেন, সেটি আবার কবে ফিরে পাব সেটিই আমাদের এখন মূল প্রশ্ন।

লিখিত প্রবন্ধে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠেয় এ পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে সব দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের যে প্রত্যাশা, তা পূরণ হচ্ছে না। তারপরেও মানুষের আকাক্সক্ষা এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হোক।


শেয়ার করুন