২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:৪৩:২০ পূর্বাহ্ন


দুর্গম এলাকায় বৈষম্যের প্রতি গভীর মনোযোগ প্রয়োজন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৫-২০২৩
দুর্গম এলাকায় বৈষম্যের প্রতি গভীর মনোযোগ প্রয়োজন পানি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ


ওয়াশ খাতের দুর্গম এলাকা বিশেষ করে চর, উপকূল, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চল এবং আন্তঃনগর বৈষম্যের প্রতি আরও গভীর মনোযোগ প্রয়োজন।পরবর্তী এডিপি বাজেটে আধা-শহর, ক্রমঃবর্ধমান অঞ্চল এবং নগরায়ন প্রক্রিয়ার আওতাধীন গ্রামগুলোতে নতুন করে সৃষ্ট ওয়াশ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় বর্ধিত এফএসএম (ফিকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট) অর্থায়ন প্রয়োজন। মোদ্দা কথা আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতের বরাদ্দে আঞ্চলিক অসমতা হ্রাস ও বৈষম্য নিরসনে অগ্রাধিকার প্রয়োজন। 

জাতীয় প্রেসক্লাবে গত  ২৩ মে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উঠে আসে। আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আঞ্চলিক অসমতা হ্রাস ও বৈষম্য নিরসনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন) খাতে তহবিল বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছেন। ওয়াটারএইড, পিপিআরসি, ইউনিসেফ, ফানসা, বাউইন, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, এন্ড ওয়াটার পোভার্টি, ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল এবং এমএইচএম প্ল্যাটফর্মের যৌথ আয়োজন করে এই সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশ-খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পিপিআরসি চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “আসন্ন অর্থবছরের জন্য ওয়াশ খাতের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন এবং সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি”। তিনি মূলত চর, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলসহ জলবায়ুগত ঝুঁকির আওতাধীন সুবিধাবঞ্চিত এলাকা এবং আন্তঃনগর বৈষম্য - এই দুইটি বিষয়ে আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনের উপর গুরুত্বারোপের ওপর জোর দেন। “নিরাপদভাবে ব্যবস্থাকৃত শতভাগ পানীয় জল এবং স্যানিটেশন সংক্রান্ত্র জাতীয় ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বহুখাত ভিত্তিক (মাল্টি-এজেন্সি) সমন্বয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে আমাদের মাঝারী শহর (সেকেন্ডারি টাউন) এবং নগরায়ন প্রক্রিয়ার আওতাধীন গ্রামগুলোতে (আরবানাইজড ভিলেজ) পয়ঃবর্জ্য  ব্যবস্থাপনার জন্য তহবিল বরাদ্দে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ  যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেরও অন্যতম পূর্বশর্ত,” তিনি বলেন। 

ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় পিপিআরসি পরিচালিত ওয়াশ খাতে বাজেট বরাদ্দ বিষয়ক প্রাপ্ত গবেষণা ফলাফল থেকে দেখা যায়, ওয়াশ খাতে এডিপি বরাদ্দ আপাত ঊর্ধ্বমুখী হলেও আসলে পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় এই আনুপাতিক বৃদ্ধির হার (৫.৪৪%) সামগ্রিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বৃদ্ধির হারের (৭.৪%) তুলনায় কম। পারিবারিক আয় ও ব্যায় জরিপ ২০২২ (এইচআইইএস ২০২২) অনুযায়ী শতকরা ৯২.৩২ ভাগ জনসংখ্যা উন্নত টয়লেট সুবিধার আওতাভুক্ত, অন্যদিকে ওপেন ডেফিকেশন (উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ) এর আওতায় এখনো রয়েছে ০.৬৯ ভাগ জনগোষ্ঠী। সংবাদ সম্মেলনে ডিপিএইচই’র ওয়াশ, ডিআরআর এবং ফিকল স্লাজ অ্যান্ড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট (এফএসডবিউএম) এর আওতাধীন প্রকল্পগুলোকে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় যোগাযোগ এবং সামাজিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে উন্নত সহনশীলতা গঠনের জন্য ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশ বরাদ্দে আন্তঃনগর বৈষম্যের ফলে বিদ্যমান সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরা হয় এবং ২০২৩-২৪ এডিপি বরাদ্দে আরও যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত তহবিল বন্টনের প্রস্তাব করা হয়। আলোচনায় চারটি পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) জন্য এডিপি বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয় এবং এগুলোর মধ্যকার বৈষম্যে নিরসনে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বারোপের আশা ব্যক্ত করা হয়। শহর ও গ্রামাঞ্চলের ওয়াশ খাতের বরাদ্দ বৈষম্য মোকাবিলায় এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ৬-এর সাথে সম্পৃক্ত ওয়াশ খাতের অগ্রাধিকার লক্ষ্যমাত্রা (এনপিটি) অর্জনের ওপর জোর দেওয়া হয়। ওয়াশ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ সম্পর্কিত উদ্যোগ গঠনে উৎসাহদানের ওপরও এ সময় গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়াও, সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত সফল প্রকল্পগুলো পরিবর্ধন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আরও নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে ওয়াশ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং দূর্যোগ ঝুঁকি সংক্রান্ত্র যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির (আরসিসিই) জন্য তহবিল বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর ধরে প্রস্তাবিত বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়লেও এখনও প্রয়োজনের তুলনায় তা নগন্য। এরই ধারাবাহিকতায় হাওর, পার্বত্য এলাকা, উপকূলীয় অঞ্চল ও চরে বসবাসকারী মানুষের জন্য ওয়াশ বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি সময়ের দাবি।


শেয়ার করুন