২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৭:৪৩:৫৪ পূর্বাহ্ন


রাজপথে সংঘাত কখনই মঙ্গলজনক নয়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৫-২০২৩
রাজপথে সংঘাত কখনই মঙ্গলজনক নয়


বৈশ্বিক কারণে এবং আমলানির্ভর কিছুটা ভ্রান্তনীতির কারণে বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিলগ্নে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্য। ডলার সংকটে প্রাথমিক জ্বালানি আমদানিতে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়ে রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। এরই মাঝে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দল রাজপথে মুখোমুখি। উভয় দল নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। দুই পক্ষ অবস্থান বজায় রাখলে সংঘাত অনিবার্য। অথচ ২০২৬ বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর হওয়ার কথা। ২০৩০ উচ্চ মধ্যআয়ের দেশ এবং ২০৪১ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা আছে। অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর আছে বলা যাবে না।

বিশাল বৈদেশিক ঋণের বোঝা সিন্দাবাদের বুড়োর মতো ঘাড়ে চেপে আছে। দ্রুত কমছে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক সংকটে অরাজকতা সৃষ্টি হলে ২০২৪ থেকে মহাসংকট অনিবার্য। পেশাদার বিশেষজ্ঞরা, অর্থনীতিবিদরা বেশ কিছুদিন থেকেই সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু কেউ শুনছে না কারো কথা। দেশের সংকট বিদেশি কোনো দেশ বা শক্তি সমাধান করে দেবে না। নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। ফলে এই মুহূর্তে সরকার এবং বিরোধী দল গো ধরে থাকলে কারোই মঙ্গল হবে না।  
বিশ্ব এখন দুই বা ততোধিক শক্তি বলয়ে দ্বিধা বা ত্রিধা বিভক্ত। বাংলাদেশে কিন্তু চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ সবার উপস্থিতি আছে। সবাইকেই কূটনৈতিক কৌশলে ভারসাম্য স্থাপন করে চলতে হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে বিশাল প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশের অধিকাংশ সমস্যার সমাধান না হলেও ভারত বাংলাদেশ থেকে অনেক স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়েছে। অনুমেয় বিশাল প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরী অবস্থান কাম্য নয়। তাই বলে দুই স্বাধীন দেশের সম্পর্ক একপক্ষীয় হওয়া উচিত না।
আসুন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংকট বিষয়ে আলোচনা করি, মানলাম কনস্টিটিউশন পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিধান বিলুপ্ত করেছে সরকারি দল। কিন্তু সেটিই যদি সমাধান হয়ে থাকে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আবারো কনস্টিটিউশনে সেই বিধান সংযুক্ত করে অন্তত দুটি নির্বাচন করতে বাধা কোথায়? সরকারি দল যে কোনোভাবেই ২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো নির্বাচন করে পার পাবে নাÑএটি দিনের মতোই পরিষ্কার। আর যেহেতু অনেক সমস্যা এবং ব্যর্থতার পরেও অর্থনীতি এগিয়ে গেছে তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই বিরোধী দল একক বা সম্মিলিতভাবে জয়লাভ করবে তার নিশ্চয়তা কি?
আসল কথা বিশ্ব দেখতে যাচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।  জনগণ সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধী দলের মুখপাত্রদের প্রতিদিনের বাহাস শুনতে শুনতে হতাশ। প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে এগুলো বিশ্ব সমাজে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণœœ করছে।
বিরোধী দল বা ফ্রন্টের রাজপথে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানোর শক্তি নেই। ওদের একটা বিষয়েও প্রশ্ন আছে। বিদেশি কোনো শক্তি এসেও রাতারাতি ওদের ক্ষমতায় বসাবে না। যা হবে রাজপথে সংঘাত, সংঘর্ষ, সম্পদহানি। দেশের সংকটসমূহ মোকাবিলায় বিরোধী দলের কোনো নীতি কৌশল কি জনতার সামনে দেওয়া হয়েছে? কেন জনতা ওদের বেছে নেবে?
সরকারপ্রধান নিজে বিবিসির সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কোনো একটি বিশেষ দেশ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাচ্ছে। তাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।  এর আগে তিনি জাতীয় সংসদে বলেছেন একটি দেশ চাইলেই কোনো দেশের সরকার পরিবর্তন করতে পারে। তাই যদি হয়, তাহলে সেই দেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক করে দেশবাসীকে বিপদে ফেলা শুভ নয়। বরং দেশ শাসকদের নির্বাচনের দায়িত্ব স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশবাসীর ওপর অর্পণ করে শ্রেয়। বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু নানা সমস্যা সংকটে পোড় খাওয়া সংগ্রামী মানুষ। বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবার শাসন দেখেছে। ১৫ বছর বর্তমান শাসক দলকে দেখছে। সুযোগ পেলে দেশবাসী সঠিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। যদি জনতার শক্তিতে বিশ্বাস থাকে তাহলে দেওয়ালের লিখন পরে সরকারপ্রধান সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন আশা করি। ২০২৪-২০৩০ বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে স্থিরতা থাকলে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ হওয়ার সুযোগ রয়েছে যদি দেশপ্রেমিক শক্তি দেশ শাসনে থাকে।

শেয়ার করুন