১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১১:৩৯:০১ পূর্বাহ্ন


প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবু জাফর মাহমুদ
পারস্পারিক সম্পর্কের ধারাই অন্য সবার জন্য অনুপম শিক্ষা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
পারস্পারিক সম্পর্কের ধারাই অন্য সবার জন্য অনুপম শিক্ষা বক্তব্য রাখছেন আবু জাফর মাহমুদ


নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডের নয়নাভিরাম বেলমন্ট লেক স্টেট পার্কে প্রবাসী বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি ইউএসএ ইনক্-এর বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমিতির সদস্যদের পরিবারের প্রায় আটশ’ সদস্যের উপস্থিতিতে ওই বনভোজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব, মানবসেবায় যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের আজীবন সম্মাননা স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত আবু জাফর মাহমুদ। বনভোজনের আনুষ্ঠানিকতা উদ্বোধন করে তিনি বলেন, বনভোজনের এমন আয়োজন নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা বিনিময়ের অনন্য এক সুযোগ। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর স্রোতে ও ঢেউ আমাদের রক্তধারায় যে চেতনা জাগিয়ে দিয়েছে তার ধারাবাহিকতায় আজকের এই মিলন। আমি মনে করি এই বনভোজন আমাদের মধ্যকার সম্পর্কের একটি মোহনা।

প্রবাসী বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি ইউএসএ ইনক্ এর সভাপতি কাজী জামান উদ্দিনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলী খান, বিশিষ্ট আইনজীবী মিয়া জাকির, সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. রফিকুল ইসলাম, বনভোজন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, মেম্বার সেক্রেটারি এমডি জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এম জসিম, সাইদুল ইসলাম বাদল, সরদার মোস্তফা কামাল, কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, আতাউর রহমান, এমডি মনিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিনসহ বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে জন্ম নেয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সবার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাসে বনভোজনের আয়োজন একটি বর্ণাঢ্য মিলনমেলায় পরিণত হয়। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল দেশি রকমারি খাবারের ব্যবস্থা। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সবাই নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করেন। দেশে নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন, সাহায্য-সহযোগিতা ও কল্যাণমুখি কর্মসূচি পরিচালনার ব্যাপারেও আলোচনা হয়।

নিউইয়র্কে বাঙালি সমাজে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের চেয়ারম্যান ও সিইও আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমি সন্দ্বীপের সন্তান। আমার কাছে সন্দ্বীপ আর বরিশালের মধ্যে একটি সুগভীর ঐক্য রয়েছে। আমি সমুদ্রের লোনা পানির সঙ্গে এই সম্পর্কের সূত্র খুঁজে পাই। আমাদের প্রাচীন পূর্ব পুরুষের মধ্যে এই সম্পর্কের ভীত রচিত হয়েছিল।

জনাব মাহমুদ বলেন, আমি ভালোবাসার গান গাই। বাঙালির পারিবারিক ভালোবাসার শক্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মানবিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করাই আমার বড় কাজ। এই সমাজে এখন আমাদের আব্বা আম্মা যেমন আছে আমাদের শশুর শাশুড়ি, সন্তানাদি, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নাতি নাতনি আছে। আমাদের গোটা পরিবার রয়েছে। এখানে আমাদের পারিবারিক দায়িত্ব কর্তব্য ও ভালোবাসার চর্চা হচ্ছে। এখানেই আমাদের সংস্কৃতির শেকড়। কিন্তু আমেরিকান নানান জাতিগোষ্ঠির দিকে আমরা যদি ফিরে তাকাই, দেখবো সন্তান জন্মের পরে বাবার পরিচয় জানে না। ভাই-বোনের পরিচয় জানে না। পারিবারিক সম্পর্কের এই গভীর জায়গাগুলো তাদের অজানাই থেকে যায়। এটি আমাদের বাংলাদেশি পারিবারিক ঐতিহ্যের সঙ্গে মেলে না। তিনি বলেন, আমরা যখন আমেরিকায় এসেছি, এই সমাজে নিজেদের অবস্থান গড়েছি, আমরা এখন আমেরিকান। আমরা ঐতিহ্যসহ আমেরিকান। আমরা এখানে আমেরিকাকে সমৃদ্ধ করছি। আমেরিকার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করছি। আমাদের সংস্কৃতিকে আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ করছি। আমাদের চর্চার মধ্যে নিজেদেরকে ঘনিষ্ঠ করার বিষয় রয়েছে। এই ধারায় আমার সঙ্গে আপনাদের সবার, বাংলাদেশের এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হিমালয় থেকে বরফ গলা পানি যেমন নদীর ধারায় মিশে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম, এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে প্রবাহিত হয়, একইভাবে আমাদের মনের মিলনের ধারায় আমরা একত্রিত হয়েছি।

আবু জাফর মাহমুদ নতুন প্রজন্মকে বাংলা শেখানোর ওপর  বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদেরকে যদি বাংলা না শেখাই, তাহলে আমাদের সঙ্গে দুদিন পর তাদের আর যোগাযোগ থাকবে না। বাবা মাকে যদি সন্তন সম্মান না করে তাহলে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বলতে কিছুই থাকবে না। এক্ষেত্রে আমেরিকার অসাধারণ মানবিক কর্মসূচি হোম কেয়ার প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্ক সুরক্ষার অসাধারণ এক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাটিই আমাদের মধ্যে ভালোবাসা, যত্ন ও দরদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সুযোগ করে দিয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতির বার্ষিক বনভোজনে অংশগ্রহণকারী নারী পুরুষ ও শিশুদের জন্য ছিল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, র‌্যাফেল ড্র। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন ড. কামরুল ইসলাম, মার্শাল টিটো, মেহেজাবিন মেহা, রাহিদুল ইসলাম অয়ন প্রমুখ।

শেয়ার করুন