১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৩৯:১১ পূর্বাহ্ন


নতুন ফরমুলায় নির্বাচন চায় জাতীয় পার্টি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৬-২০২৩
নতুন ফরমুলায় নির্বাচন চায় জাতীয় পার্টি


এখনো জাতীয় পার্টি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেনি। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেদিকটা নজরে রেখে ব্যালেন্সড কথাবার্তা বলেই সময় পার করছে দলের শীর্ষনেতারা। কখন তাদের অবস্থান পরিষ্কার হবে। সাধারণ নেতাকর্মীরা অনুধাবন করতে পারবেন সেটা জানেন না তারা কিছুই।

বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত। এমনি মুহূর্তে জাতীয় পার্টির মতো একটা দলের এমন অবস্থান রাজনীতির মাঠে দলটির ভিত নিয়ে কথা বলছেন। দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অটুট। ওই দাবি থেকে একচুলও নড়েনি। এ আন্দোলনে দলের বেশ ক’জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে বহু। মামলায় জর্জরিত। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিএনপির ওই দাবি অযৌক্তিক, দূরভিসন্ধিমূলক ও বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে চলছে। বিএনপি ওই একই দাবিতে সোচ্চার হয়ে দেশে একটা মত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে প্রায় দেড়যুগ ক্ষমতার বাইরে থেকেও। অথচ জাতীয় পার্টি এ সময়ে ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারাতেই রয়েছে। 

এরপরও এ মুহূর্তে একেবারে আওয়ামী লীগের পক্ষেই তারা কথা বলছে এমনটা নয়। যেমনটা তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারা চাচ্ছে না। আবার দলীয় মানে আওয়ামী লীগের অধীনেও তারা চাচ্ছে না নির্বাচন হোক। তাহলে তাদের কী ফরমুলা সেটাও খোলাসা করছেন না। এতে দলের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসারেই তারা এগোবেন বলে জানাচ্ছেন। 

সম্প্রতি রংপুরের এক সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, যেখানে দলের নিয়ন্ত্রণ থাকে সরকারের ওপর, দলের নিয়ন্ত্রণ থাকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর, দলের নিয়ন্ত্রণ থাকে ইলেকশন কমিশনের ওপর, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানের ওপর। তখন সেটাকে আর বহুদলীয় গণতন্ত্র বলা যায় না। সেটা তখন হয়ে যায় বাকশাল। বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেছে এবং সেটা বাকশাল। আপনাদের বাকশালীয় কথা যাদের স্মরণ আছে, চিন্তা করে দেখেন তারা কী ছিল। রংপুর সদর উপজেলার পাগলা পির কেন্দ্রীয় মসজিদ মাঠে সদর উপজেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জি এম কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সীমাহীন দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দলীয়করণের কারণে দেশের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস বেড়ে গেছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, সার, ডিজেল, কীটনাশক, পেট্রল, ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষজনের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে আকাশছোঁয়া মূল্যে মানুষজন বিশেষ করে নিম্ন আয় থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ শহর থেকে গ্রামমুখী হচ্ছে। দেশে ডলার-সংকট শুরু হয়েছে।

এটা করতে গিয়ে আপনারা শুনেছেন আমেরিকা একটা স্যাংশন দিয়েছে, স্যাংশনটা কি, তাহলো আমেরিকা আমাদের তাদের দেশে ঢুকতে দেবে না। আমেরিকা ঢুকতে না দিলে হয় তো কানাডা ঢুকতে দেবে না, ইউরোপ ঢুকতে দেবে না, ব্রিটিশরাও ঢুকতে দেবে না, বিভিন্ন ধরনের সরকারি কর্মকর্তা, যারা টাকা-পয়সা বিদেশে পাঠায়, তাদের টাকা-পয়সা তো দূরের কথা, তাদের ছেলেমেয়ে, পরিবার-পরিজনদেরও যেতে দেওয়া হবে না, আমেরিকা একটা এমন নিয়ম চালু করেছে। এখন তাদের মধ্যে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। 

জি এম কাদের পরে আরেকটা সভায় বলেছেন, দেশের প্রতিটি সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিল। এ সরকারও করতে চাচ্ছে। ক্ষমতায় থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না, কিন্তু এর বিকল্প পদ্ধতি চাই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। তবে জাতীয় পার্টি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই দুই মাধ্যমের বাইরে এমন একটা পদ্ধতি খুঁজতে হবে-যে পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।

এরপর গত ৪ জুন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে বৈঠক হয় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের। বৈঠকে জি এম কাদের ছাড়াও জাপা চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাসরুর মওলা উপস্থিত ছিলেন।  

রওশন এরশাদ 

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ আবারও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করতে হবে। মতভেদ ভুলে সবাইকে নিয়ে এখনই নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ারও নির্দেশনা দেন। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার মসনদের ভাগিদার হওয়ায় রাজপথে জাতীয় পার্টির কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলেও জাতীয় পার্টি এর ব্যতিক্রম। যদিও তাদের ওপর সরকারের তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই, কারণ সরকারেরই অংশ তারা এবং সংসদে বিরোধীদলের আসনে রয়েছে তারা দীর্ঘদিন থেকে সমঝোতার ভিত্তিতে। এরপরও কোনো ইস্যুতেই মাঠের কর্মসূচি নেই বললেই চলে দলটির।

শেয়ার করুন