২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:৩৩:১৮ অপরাহ্ন


স্ত্রীকে খুনের পর ১০ ভরি গহনা-টাকা নিয়ে কানাডা প্রবাসী স্বামীর পলায়ন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৬-২০২৩
স্ত্রীকে খুনের পর ১০ ভরি গহনা-টাকা নিয়ে কানাডা প্রবাসী স্বামীর পলায়ন


রাজধানীর দক্ষিণখানে কানাডা প্রবাসী মোছা. আফরোজাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় বেরিয়ে আসছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ২৬ মে শুক্রবার রাতে নিজ বাসায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করার পরদিন কানাডায় পালিয়ে যান তার স্বামী আশরাফুল আলম। তবে যাওয়ার আগে স্ত্রীর ১০ ভরি গহনা ও নগদ কয়েক লাখ টাকা নিয়ে গেছেন তিনি।

আফরোজাকে খুঁজে না পেয়ে তার ভাই গত ২৯ মে দক্ষিণখান থানায় জিডি করেন। এর পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। ৩১ মে বুধবার মধ্যরাতে দক্ষিণখানের বাসার ভেতরে একটি গর্তে কাপড়ে প্যাঁচানো অবস্থায় আফরোজার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাথা, কাঁধ ও হাতে পাঁচটি ধারালো কোপের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত শেষে গত ১ জুন মরদেহ গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডোমারে নিয়ে যাওয়া হয়। আফরোজা ও তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে কানাডার বাসিন্দা। তিন মাস আগে দেশে বেড়াতে আসেন তারা।

স্বামীর হাতে স্ত্রীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১ জুন বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কানাডায় পলাতক আশরাফুলসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ আশরাফুলের বাবা শামসুদ্দিন আহমেদ, ভাই সজীব আলম, ভাইয়ের স্ত্রী তাহমিনা বাসার ও খালা আইনজীবী পান্না চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে। আজ তাদের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করবে পুলিশ।

এদিকে অভিযুক্তকে দেশে ফেরাতে কয়েকদিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা-ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই রেজিয়া খাতুন জানান, অভিযুক্ত আশরাফুল অত্যন্ত চালাক। প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি, স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ গুমে বাসার লোকজনের সহায়তা নিয়েছেন তিনি। ভিডিও কলে কানাডা থেকে স্বীকারও করেছেন, ১ কোটি টাকার কাবিন নিয়ে বিরোধের জেরে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। আলামত লুকাতে পুলিশ তাদের ব্যবস্থাপনায় বুড়িগঙ্গায় লাশ ফেলার ব্যবস্থা করলে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। হত্যাকা- এবং পরবর্তী সময়ে লাশ গুমে কার কী ভূমিকা এর তদন্ত চলছে। 

পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, বাসার লোকজন হত্যার ঘটনা শুরু থেকে জানলেও পুলিশের কাছে গোপন করেন। এমনকি আশরাফুলের বাবা এ ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য পান্না চৌধুরী নামে তাদের এক আত্মীয়কে বাসায় ডেকে আনেন। পান্না পেশায় আইনজীবী। তার পরামর্শে আশরাফুলের পরিবারের পক্ষ থেকে ৩০ মে মঙ্গলবার থানায় একটি জিডি করা হয়। সেখানে বলা হয়, আশরাফুলের স্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতেই আইনজীবীর পরামর্শে ওই জিডি করা হয়েছিল। যদিও এক দিন আগেই আফরোজার ভাই দক্ষিণখান থানায় জিডি করেছিলেন। 

পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম জানান, আলামত লুকাতে দক্ষিণখানের বাড়ির ভেতরে একটি বড় জায়গাজুড়ে কয়েক দিন আগে বালু ফেলা হয়েছিল। বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ভেতরে যেখানে গর্ত করে লাশ গুম করা হয়েছিল, সেটি ঢেকে রাখতে পুরো বাড়ির ভেতরে বালু ফেলা হয়।

পুলিশ বলছে, ঘটনার পর বাসার ভেতরে সব আলামত লুকানো হয়। রক্তমাখা পোশাক ও বঁটি পাওয়া যায়নি। তবে আশরাফুলের বাবা ও ভাইসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর তারা স্বীকার করেছেন, ঘটনার পরপরই বঁটিতে থাকা রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। নিজেকে বাঁচাতে ঘটনার পরদিন তড়িঘড়ি করে দেশ ছাড়েন আশরাফুল। যদিও তার কানাডা ফেরার কথা ছিল ৩১ মে।

আফরোজার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি এলাকায়। বছরখানেক আগে আশরাফুলকে বিয়ে করেন তিনি।  আশরাফুল ও আফরোজার উভয়েরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে। আশরাফুলের প্রথম পক্ষের এক সন্তান ও আফরোজার তিন সন্তান রয়েছে। তারাও কানাডায় থাকেন। প্রায় ১৪ বছর পর আশরাফুল তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফেরেন। তাদের সঙ্গে আফরোজার প্রথম পক্ষের এক মেয়েও দেশে এসেছিল। হত্যাকাণ্ডের পরদিন সৎ বাবার সঙ্গে কানাডা ফিরে যায় সে। তাকে জানানো হয়েছে- তার মা রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছে। কয়েকদিন পর কানাডা যাবে। 

পুলিশ জানায়, স্বামী-স্ত্রী দেশে ফেরার পর ১ কোটি টাকার কাবিন হয়েছিল। এর আনুষ্ঠানিকতা হয়েছিল আফরোজার গ্রামের বাড়িতে। কাবিনের টাকার অঙ্ক নিয়ে নাখোশ ছিলেন আশরাফুল। এর পর থেকে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। এছাড়া দেশে ফিরে একটি ব্যাংক থেকে ২৮ লাখ টাকা তুলেছিলেন আফরোজা। ওই অর্থের একটি অংশ স্ত্রীকে না জানিয়ে সরিয়ে ফেলেন আশরাফুল। এটা নিয়েও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কাতর্কি হয়েছে। এমনকি স্বামীর স্বভাব-চরিত্র নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল স্ত্রীর। এবার কানাডা থেকে ফিরে স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন আফরোজা। এসবের জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এমনকি আফরোজার পরিবারের পক্ষ থেকেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধের এসব কারণ পুলিশকে জানানো হয়েছে।

শেয়ার করুন