কোথায় তেতুলতলা ?
অনেকেরই প্রশ্ন, আসলে তেতুল তলাটা কোথায়? কী হচ্ছে সেখানে এসব? কেন পুলিশ জনগনের মুখোমুখী দাড়ানোর চেষ্টা করছে। কেন বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
তেতুলতলা হচ্ছে রাজধানীর পান্থপথের উল্টো দিকের গলির পাশেই খোলা জায়গাটি। যেটাকে অনেক অনেক বছর আগ থেকে তেতুল বাগান বলেই সবাই জানে। স্থানীয়দের এ মাঠ ঘীরে অনেক স্মৃতি। শিশুদের খেলার জায়গা। মাঠটিতে হয় ঈদের জামাত। অনুষ্টিত হয় নামাজে জানাজা। এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান।
ঘটনার সুত্রপাত
এ মাঠটিকে পুলিশের থানা করার জন্য সম্প্রতি একটি বরাদ্ধপত্র দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন। সে থেকেই সুত্রপাত। গত রোববার ওই মাঠে পুলিশ ভবন তৈরী করার জন্য কাজ শুরু করলে, স্থানীয় এক বাসিন্দা সৈয়দা রতœা এ মাঠ রক্ষার দাবীতে আন্দোলন শুরু করেন। উদীচি শিল্পগোষ্টীর এ সদস্যের ডাকে এখন তোলপাড় মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
যেখানে দেশের অনেক স্বনামধন্য ব্যাক্তিত্বরাও আছেন। এর আগে গত ৩১ জানুয়ারী এ মাঠে খেলতে গেলে শিশুদের কান ধরে উঠবস করায় জৈনিক পুলিশ। পরে এলাকায় প্রতিবাদে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেয়।
সে থেকেই এলাকাবাসীর কড়া নজরদারী। যা ভবন তৈরীর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক আন্দোলনে রুপ নেয়। রোববার রতœা তার মোবাইলে নির্মান কাজের ভিডিও করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এবং তাকে ও তার শিশু সন্তানকে থানায় প্রায় ১৩ ঘন্টা আটকে রাখে বিনা অভিযোগে। পরে এলাকার মানুষের চাপের মুখে মুচলেকা দিয়ে ছাড় দেয় পুলিশ।
এ ঘটনায় এখন তোলপাড় যাচ্ছে।
এদিকে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘তেতুলতলা মাঠে থানা না এলাকাবাসীকে হয়রানি ও আটকের তীব্র প্রতিবাদ’ শীর্ষক ১২ টি এনজিও ও সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল। এগুলো হচ্ছে এএলআরডি,বাপা,বেলা, আসক, গ্রীন ভয়েজ, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ,বাংলাদেশ উদীচী শিল্প গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি।
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিক সম্মেলনে অধিকার ও এনজিও কর্মীরা,ছবি সংগৃহীত
সংবাদ সম্মেলনে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে গেলে এমন হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। বসবাসের অযোগ্যর তালিকায় থাকা শহরে একটা খেলার মাঠ নিয়ে নেয়া মানে আত্বহত্যার শামিল। এলাকাবাসী কোথায় খেলবে এ জবাব কী কর্তৃপক্ষ দেবে?
এ ঘটনায় তারা আইনি ব্যাবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন।
নিজেরা করি’র খুশী কবির বলেন, ‘এটা কি মগের মুল্লুক। নাকি যে চেনা মুখ হলেই রেহাই পাওয়া যেত। এ দশে কী সাধারন মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নেই। আইন কী নিজের মত চলে না?
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ধানমন্ডি শেখ জামাল মাঠটি সবার জন্য উম্মুক্ত। কিন্তু সেখানে সাধারন মানুষ ঢুকতে পারে না। সেখানে পুলিশ কোথায়?
সংবাদ সম্মেলনে লিখত বক্তব্য দেন বাপা’র যুগ্ন সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি অবিলম্বে তেতুলতলায় পুলিশের ভবন নির্মান কাজ বন্ধের নির্দেশ দানের দাবী জানান। সাথে মাঠটি রক্ষায় সিটি করপোরেশন ও রাজউকের প্রতিশ্রæতি প্রত্যাশা করেন। ওই ঘটনায় অন্তত ১০টি আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শিশু রক্ষার অধিকার রক্ষার কথা বলায় মাকে জেলে দতে হবে? এর বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী তোলেন তিনি।
সুশীল সমাজের বিবৃতি
সোমবার এ সংক্রান্ত সুশীল সমাজের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই,কলাবাগান থানা কর্তৃপক্ষ সৈয়দা রতœা ও তার নাবালক ছেলেকে কোনো রকম আইনি প্রক্রিয়ায় অনুসরন না করে, কোনো আইনসিদ্ধ অভিযোগ ছাড়া ১৩ ঘন্টা আটকে রাখা দেশের সংবিধান ও আইনের ন্যক্কারজনক লঙ্ঘন ও বেআইনি।’
বিবৃতিদানের মধ্যে রয়েছেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুলতানা কামাল, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ড. হামিদা হোসেন, খুশী কবির, শিরিন হক, অধ্যাপক পারভীন হাসান, ড. ইমরান রহমান,শাহদীন মালিক, রাশেদা কে চৌধুরী, সারা হোসেন, প্রফেসর আনু মুহাম্মদ,অদ্যাপক গীতিআরা নাসরীন,ড.আসিফ নজরুল, সৈয়দা রিজওয়ানা প্রমুখ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল আশ্বাস দিয়েছেন, খুব শীগ্রই এখান থেকে থানার ভবনের নির্মানকাজ সরিয়ে নেয়া হবে।