২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৯:৫০:০৮ অপরাহ্ন


ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন সিটি করপোরেশন
ঢাকায় নগরপিতা কে?
জাডিক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৫-২০২২
ঢাকায় নগরপিতা কে? নগর ভবন/ ফাইল ছবি


অবশেষে জনমতের বিস্ফোরণ ঘটে তেঁতুুলতলা খেলার মাঠ শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত থাকলো। গণভবনে ইদানীং অধিকাংশ সময় কাটানো প্রধানমন্ত্রীর সঠিক সিদ্ধান্তে, সঠিক বিষয়ে আন্দোলনকারী সৈয়দ রত্না, তার কিশোর ছেলে, মিডিয়া এবং পরিবেশ সংগঠনগুলোকে আন্তরিক অভিনন্দন। সেই সঙ্গে ঢাকার অবকাঠামো নির্মাণ এবং সংরক্ষণকারী সংগঠন অ্যান্ড সংস্থাগুলোকে ঘৃণা। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে ঢাকা মহানগরীর পিতা কে? 


আমাদের প্রাণের ঢাকার পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কার? মেয়রদের কার্যালয়, রাজউক, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় করার দায়িত্ব কার? কীভাবে ঢাকার ফুসফুস বলে বিবেচিত খেলার মাঠগুলো একে একে দখল হয়ে যাচ্ছে? আবাহনী ক্রীড়া সংস্থার ক্রীড়া কমপ্লেক্স কেন ধানমন্ডি ১২ নম্বর  সড়ক সংলগ্ন মাঠেই হতে হবে?

কেন ধানমন্ডি খেলার মাঠ নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষিত? মহানগরীর চারপাশের চারনদী এবং মহানগরজুড়ে জালের মতো জড়িয়ে থাকা খালগুলো রাক্ষস-খোক্ষসরা গিলে খেয়েছে অনেক আগেই। একটি নগরে সুস্থ যোগাযোগব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য নিদেনপক্ষে ২০ শতাংশ সড়ক থাকা জরুরি। ঢাকায় এখন সেটা ১০ শতাংশ আছে কি?





কোনো ধরনের বিল্ডিং কোড না মেনে, গায়ে গায়ে লাগানো অসংখ্য বহুতল ভবন স্বাভাবিক বায়ু চলাচল রুদ্ধ করে ঢাকার উষ্ণতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্রমান্বয়ে মাটির নিচের পানি উত্তোলন করে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে ঢাকাকে ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। ড্রেনেজ  সিস্টেম ভেঙেপড়ায় সামান্য বৃষ্টিতে তীব্র জলজটের সৃষ্টি হয়।


যানজটের কারণে ঢাকার সড়কে কোটি কোটি টাকার শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাতাসে ধূলাবালি, মিথেন থাকায় ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে। ওয়াসার পানির লাইনে পয়ঃবর্জ্য ঢুকে পড়ায় নগরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ভয়াবহ ও জীবননাশকারী ডায়রিয়া, কলেরা ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকার গ্যাস সরবরাহ অবস্থা সংকটাপন্ন। এতো কিছুর পরেও এবার রোজার সময়েও বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে খোদ ঢাকায়। কে দিবে এগুলোর জবাব? 


উন্নত দুনিয়ার সব মহানগরে একজন লর্ড মেয়র থাকেন। তাকে কেন্দ্র করেই মহানগরের সকল উন্নয়ন কাজ আবর্তিত হয়। ঢাকা শুধুমাত্র জনশক্তির ঘনত্বে মহানগরীর গুরুত্ব পেয়েছে। বাকি সব কিছুতেই ঢাকাকে নিয়ে গর্ব করার কিছু আর অবশিষ্ট নেই। একসময়ের তিলোত্তমা ঢাকা এখন বসবাসের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে অনুপযোগী মহানগরী, যানজট, শব্দজট, জলজটে দুনিয়ার সেরা।  

এসব কলঙ্ক তিলক নিয়েও সরকারের দায়িত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা যখন তোতাপাখির মতো প্রতিদিন কথা বলেন, তখন দেশপ্রেমিকদের হতাশ না হয়ে উপায় থাকে না।  


সুবিধার কথা বিবেচনা করেই একসময় ঢাকা মহানগরীকে দুটি ভাগে ভাগ করে দু’জন মেয়রের অধীন নেয়া সঠিক ছিল। অন্তত ঢাকা উত্তরের জনসম্পৃক্ত মেয়র সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনেক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছিলেন। কাওরান বাজার থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড সরানো, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড দখলদারমুক্ত করা সহজ কাজ ছিল না। ইউলুপ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল আনিসুল হক। তার অকাল মৃত্যুর পর বর্তমান মেয়র চেষ্টা করছেন,  কিন্তু তার অসহায় কণ্ঠের আর্তনাদ (রাজউকের নকশায় আছে খেলার মাঠ,পার্ক, কিন্তু বাস্তবে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হয়েছে) শুনে কষ্ট হয়।


ঢাকা দক্ষিণের সমস্যা তীব্রতর। জীবনহানিকর রাসায়নিক পদার্থের গুদাম এখনো সরানো গেল না। নিমতলির মতো আরো দুর্যোগ আবারো হতে পারে। মাটির নিচের গ্যাসলাইনগুলো শতছিন্ন, ঝুঁকিপূর্ণ। মাথার ওপর জালের মতো জড়ানো বিদ্যুৎ ও ডিশ,ইন্টারনেট ক্যাবল লাইন। কি করবে অসহায় দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার তাপস? 


বলছিলাম ঢাকার নগর পিতা দু’জনকে কি মেট্রোপলিটন গভর্নর করে সকল উন্নয়ন কাজ, সংরক্ষণ কাজের ফোকাল পয়েন্ট করা যায় না? মালয়েশিয়ার পুত্র জয়ার মতো রাজধানী শহর কি ঢাকার বাইরে বিবেচনা করা যায় না? যদি না হয়, তাহলে পিতৃহীন মহানগরীর কসমেটিক উন্নয়ন করে মৃত্যু পথযাত্রী ঢাকাকে মেট্রো বলুন, পাতাল রেল বলুন- কিছুতেই রক্ষা করা যাবে না।


প্রয়াত মেয়র হানিফ কিন্তু বহুপূর্বে মেট্রোপলিটন গভর্ন্যান্সের কথা বলেছিলেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে কিন্তু উন্নত দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর সঙ্গে টুইন সিটি বানানো যেতে পারে। আশা করি সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো গুরুত্বের  সঙ্গে ভেবে দেখবেন।


শেয়ার করুন