বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন শান্তি সমাবেশের এবং বিএনপি ও বিএনপির অঙ্গসংগঠন, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপি, নিউইয়র্ক উত্তর ও দক্ষিণ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। জাতিসংঘের সামনে ফার্স্ট অ্যাভিনিউ এবং ৪৭ স্টিটের পাশের পার্কে এই দুটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুই দলের পক্ষ থেকেই অনুষ্ঠান করার অনুমতি নেওয়া হয়। নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ দুই দলকে অনুমতি দেয়। তবে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টির জন্য বিএনপিকে দেওয়া হয় রাস্তার ওপরে এবং আওয়ামী লীগকে দেওয়া হয় মাঝে অন্য দুটির দেশের প্রতিবাদকারীদের পরে। দুই দলের মধ্যে পার্থক্য ছিল বেশ। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি বলে কথা। বিক্ষোভ সমাবেশটি জুমার নামাজের সময় হওয়ার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করেন। যেহেতু সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ সেহেতু বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল কয়েক হাজার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার জন্য আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী জাতিসংঘের ভেতরে চলে যান। আবার একাংশ প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সোজাকথা, বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কাছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। সবচেয়ে বেশি বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশে আসতে থাকে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আস্তে ধীরে আসতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন জুমার নামাজ আদায় করছিলেন, সেই সময় আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে প্রথম পানির বোতল ছোড়া হয়। যদিও এদের সংখ্যা ছিল কম। তারা মাঝের দুটি দেশের প্রতিবাদকারীদের পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে কটূক্তি করতে থাকে। আর যায় কোথায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি যেহেতু বেশি, সেহেতু এখান থেকেই পাল্টা পানির বোতল ছোড়া শুরু হয়। খাওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কয়েক হাজার পানির বোতল। তারা বোতল ছুড়তে থাকেন। এই পর্যায়ে মনে হচ্ছিল যে, জাতিসংঘের সামনে বোতল বা পানি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে খাওয়ার জন্য যেসব বিরিয়ানির বক্স নেওয়া হয়েছিল তা-ও ছোড়া হয়। শুরু হয় বিশৃঙ্খল পরিবেশ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন, বেশ কয়েক জনকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। ওই সময় উত্তেজনা ছিল চরম পর্যায়ে। এক পর্যায়ে কয়েকশ পুলিশ এসে উভয় দলকে বের করে দেয়। একই সঙ্গে প্রতিবাদ করতে আসা অন্য দেশের লোকজন ভয়ে অন্যত্র সরে যান।
এ পরিস্থিতিতে অনেকেই নিন্দা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আর কিছু রইলো না।