১৬ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৮:৪৮:২৬ অপরাহ্ন


প্রসঙ্গ : যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় উদ্বিগ্ন কেন?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৫-২০২২
মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় উদ্বিগ্ন কেন?


কেন? কোন তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অন্যতম এলিট বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন বাটালিয়ন (র‌্যাব) ও তার কিছু কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই কিছু সাহসী মানুষ বেশ কিছুদিন ধরেই কথা বলছিলো। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিশ্বমোড়লরা বাংলাদেশকে নিজস্ব প্রভাব বলয়ে নিয়ে আসার জন্য পরিস্থিতির সুযোগ নিবে সেটি স্বাভাবিক।


বাংলাদেশের সন্ত্রাস মোকাবিলায় র‌্যাবের মুখ্য ভূমিকা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিন্তু প্রশ্ন আছে। গুলশানে হোলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা ছিল? অনেকে মনে করেন, সেখানে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থারভূমিকা ছিল। তেমনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডেও বাইরের শক্তির ইন্ধন ছিল। র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কি ধরনের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে? কারো কি ওই দেশে পাচার করা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে গেলো? 


বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুক সচেতন বাংলাদেশি হিসেবে তাই চাইবো। বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, সেটিও ঠিক আছে। কিন্তু এখন দেখছি কেন যেন- অজানা এক আশঙ্কায় সরকার বিচলিত হয়ে পড়েছে।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী নিয়মিত কথা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীও বলছেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সর্বশেষ বক্তব্য শুনে হীনমন্যতায় ভুগছি। বাংলাদেশকে কেন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে লবিং করতে ভারতের দ্বারস্থ হতে হবে? বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, সকল নীতি কি ভারত নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে? 


কেন এই ধরনের কথা। কেন জাতিকে বিশ্বসভায় খাটো করা? বাংলাদেশ ভারতের মতোই একটি মর্যাদাসম্পন্ন স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। কেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ভারতীয় প্রবাসীদের সহায়তা নিতে হবে? সরকারের সকল কূটনৈতিক প্রয়াস কি ব্যর্থ হয়েছে? 

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তথাকথিত আওয়ামী সংগঠনগুলো কি করছে?


ওদের কি আদৌ কাজে লাগানো হয়েছে? নাকি ওদের কোনো গুরুত্ব আছে? সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করা ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বিষয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাব কি কারো অপমানজনক মনে হয়নি? বিষয়টির সাথে যেহেতু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জড়িত, তাই জাতি এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইতেই পারে। কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিক কিন্তু একসময় এই বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক সংবাদ প্রচার করে ফেললে দেশের ভাবমূর্তির জন্য শুভ হবে না। 


প্রশ্ন হলো, যদি সরকার নিশ্চিত থাকে বাংলাদেশে মানবাধিকার সংরক্ষিত আছে, র‌্যাবসহ সকল শান্তিরক্ষী বাহিনী আইন অনুযায়ী কাজ করে চলেছেন,তাহলে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কি যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে?

ইদানীং দেখছি বাংলাদেশে থাকা পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা অহরহ বাংলাদেশের রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। মিডিয়ায় সেগুলো অতি গুরুত্বের সঙ্গে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো শুভ লক্ষণ নয়। এগুলো নিঃসন্দেহে কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত। 


ক’জন সচেতন বাংলাদেশি হিসেবে বিশেষত বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি এবং মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক খবর নিয়মিত পাই। বাংলাদেশের প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ফলো করি। সরকারের শীর্ষস্থানীয় কিছু ঘনিষ্ঠ মানুষ (রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী) এবং বিভিন্ন বাহিনীর অনাচার দুর্নীতির নির্ভরযোগ্য খবর আসে।

সঙ্গত কারণে এগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ জানতে পারে ওদের দূতাবাসের মাধ্যমে। হয়তো সরকারের ধারণা সেগুলো পর্যায়ক্রমে পশ্চিমা মাধ্যমে প্রকাশিত হলে নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বেকায়দায় পড়বে। 


অনুমান করছি, সেই কারণেই হয়তো র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরকারের এতো শঙ্কা। আমি বাংলাদেশকে আপাতত সন্ত্রাস মুক্ত রাখার বিষয়ে র‌্যাবের অবদানকে খাটো করে দেখবো না। কিন্তু বিচার-বহির্ভূত অনেক হত্যাকাণ্ড বিযয়েও র‌্যাব এবং অন্যান্য বিশেষায়িত বাহিনী কি দায় এড়াতে পারবে?


পরিশেষে আমি অনুরোধ করবো, বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। নিয়মিত এই বিষয়ে কথা বলার জন্য মন্ত্রীদের সংযত হওয়া  উচিত। 

এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে অবস্থানকারী রাষ্ট্রদূতদের ডেকে  অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা না বলার উপদেশ দেয়া যেতে পারে। 


শেয়ার করুন