২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:০৬:২০ পূর্বাহ্ন


জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন
৫ পদে নির্বাচন : ১৪ পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৫-২০২২
৫ পদে নির্বাচন : ১৪ পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোনয়নপত্র দাখিল নিয়ে উত্সবমুখর পরিবেশ


প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের মাদার সংগঠন হিসাবে পরিচিত। গত কয়েক বছর ধরে এই সংগঠনের নির্বাচন নেই। অনেকটা সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এর পর ছিলো করোনার হানা। করোনা মহামারী শেষ হয়েছে। এবার জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের পালে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে। ইতিমধ্যেই বিশেষ সাধারণ সভা করে নিজেদের পথ পরিষ্কার করে বর্তমান কার্যকরি কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে। সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী আগামী ৫ জুন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন। গত ৮ মে ছিলো প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ। জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজায় দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আতাউর রহমান সেলিম মাগরিবের নামাজের কথা বিবেচনা করে সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যদিও মধ্য অবধি নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড চলে।

দুপুর আড়াইটা থেকে সময় দিলেও নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের দেখা যাচ্ছিলো না। তবে তারা বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসেই উপস্থিত ছিলেন। পাশের একটি অডিটোরিয়ামে তাদের সরব উপস্থিতি ছিলো। বিশেষ করে বদরুল-মইনুল প্যানেলের প্রার্থী এবং সমর্থকদের। বদরুল-মইনুল প্যানেলের সমর্থকরাই যে উত্সবের পরিবেশ সৃষ্টি করেন, নির্বাচনী আমেজ নিয়ে আসেন। নির্দিষ্ট সময়েই তারা বিশাল বহর নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে বাংলাদেশ প্লাজায় প্রবেশ করেন। তাদের স্লোগানে পুরো এলাকায় ভিন্ন রকম উত্সবের আমেজ লক্ষ করা যায়।

যদিও প্রথমে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন সভাপতি পদে মিসবাহ আবেদীন। দীর্ঘদিন ধরেই জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন নিয়ে কমিউনিটি মোটামুটি সরগরম ছিলো। বিভিন্ন প্রার্থীদের নাম শোনা গেলেও তার নাম শোনা যায়নি। হঠাত করেই মনোনয়ন দিয়ে তিনি নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেন। এরপরই মনোনয়নপত্র দাখিল করে ছানু-সাইকুল পরিষদ। তারা মাত্র ৫টি পদে মনোনয়নপত্রি দাখিল করেন। যার মধ্যে ছিলো সভাপতি পদে মাসুদুল হক ছানু, সহ-সভাপতি (সিলেট) মিজানুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক সাইকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ পদে মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শাহীদুল হক।

নামাজের পর বদরুল-মইনুল প্যালেনে প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে মোট ১৯টি পদের সবক’টিতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন বদরুল হোসেন খান, সহ-সভাপতি লুকমান হোসেন (সিলেট), সহ-সভাপতি বশির খান (হবিগঞ্চ), সহ-সভাপতি (সুনামগঞ্চ), সহ-সভাপতি শফি উদ্দিন তালুকদার (মৌলভীবাজার), সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম, সহ সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক রুকন হাকিম, কোষাধ্যক্ষ আলিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইফজাল চৌধুরী, প্রচার ও দফতর সম্পাদক ফয়সাল আলম, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জাহিদ আহমেদ খান, ক্রীড়া সম্পাদক মান্না মুনতাসির, আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হোসেন আহমেদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুতপা চৌধুরী, কার্যকরী সদস্য (সিলেট জেলা) হেলিম উদ্দিন, কার্যকরি সদস্য (মৌলভীবাজার জেলা) মিজানুর রহমান, কার্যকরী সদস্য (হবিগঞ্জ জেলা) এমডি মানিক, কার্যকরি সদস্য (সুনামগঞ্জ জেলা) শামীম আহমেদ।

মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আতাউর রহমান সেলিম, নির্বাচন কমিশনের সদস্য মিনহাজ আহম্মেদ সাম্মু, মোশাররফ হোসেন, আহমেদ এ হাকিম, সাব্বির হোসেন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেপাজ, সংগঠনের উপদেষ্টা নাসির উদ্দিন, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য আজিমুর রহমান বোরহানসহ সংগঠনের কার্যকরি পরিষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ১৯টি পদে মোট ২৫টি মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। বদরুল-মইনুল প্যানেলের ১৯ জন এবং ছানু- সাইকুল পরিষদের পক্ষ থেকে মাত্র ৫ জন। বদরুল-মইনুল প্যানেল যেখানে অধিক প্রার্থীর কারণে প্যানেল করতে হিমসিম খাচ্ছিলেন, সেখানে ছানু-সাইকুল প্যানেলে ছিলো তীব্র প্রার্থী সংকট। যে কারণে তারা মাত্র ৫টি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করে। ভোট জমা দেয়ার সময় বদরুল-মইনুল প্যানেলে যেভাবে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ও তারা পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। মনোনয়নপত্র অনুযায়ী জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে মাত্র ৫টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাকি ১৪টি পদে বদরুল-মইনুল প্যানেলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়লাভ করেন। যে ৫টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হলো সভাপতি, সহ-সভাপতি (সিলেট), সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, মনোনয়নপত্র দাখিলে মোট আয় হয়েছে ৩৭ হাজার ৫শ। এই অর্থ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেই রাতেই হিসাব করে কার্যকরি কমিটির সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ এবং কোষাধ্যক্ষ মইনুল ইসলামের হাতে তুলে দেয়া হয়।

বদরুল-মইনুল প্যানেলের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় পুরো অডিটোরিয়াম ছিলো সরগরম। এই সময় উপস্থিত ছিলেন সভাপতি প্রার্থী বদরুল হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মইনুল ইসলামসহ এই প্যানেলের সকল সদস্য। আরো উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, মইনুজ্জামান চৌধুরী, বিয়ানীবাজার সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন রুহেল, মিসবাহ আহমেদ, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, বিলাল চৌধুরী, এফজাল চৌধুরী, আতিকুল হক জাকির, আতিকুল হক আহাদ, সুতপা চৌধুরী, এবাদ চৌধুরী, নূরে আলম জিকো, মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলু মিয়া, রহিম মিয়া, জায়েদ খান, গৌছ খান, হেলাল উদ্দিন, মাখন মিয়া, হাজী এনাম প্রমুখ।

প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণের পর তাত্ক্ষণিক যাচাই- বাছাই শেষে সবকয়টি মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার আতাউর রহমান সেলিম। তিনি উপস্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের অবহিত করে বলেন ১৯টি পদের বিপরীতে ২৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন, যার মধ্যে পাঁচটি পদ ছাড়া বাকি পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় বেসরকারিভাবে তাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

যে কয়টি পদে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন তাহল সভাপতি পদে বদরুল খান, মাসুদুল হক ছানু ও মিসবা আবদিন, সহ-সভাপতি (সিলেট জেলা) পদে এমডি লুকমান হোসেন ও শাহ মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক পদে মইনুল ইসলাম ও সাইকুল ইসলাম, কোষাধ্য পদে মোহাম্মদ আলিম ও মিসবাহ উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক ও সাদস্যিক সম্পাদক পদে ইফজাল চৌধুরী ও শাহীদুল হক। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১১ মে দুপুর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। 

এছাড়া ১৪টি পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায় এবং তাদের সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়ায় তাদেরকে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। যারা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন সহ-সভাপতি (মৌলভীবাজার জেলা) বশির খান, সহ-সভাপতি (হবিগঞ্জ জেলা) এমডি শফি উদ্দিন তালুকদার, সহ-সভাপতি (সুনামগঞ্জ জেলা) মোহাম্মদ শাহীন কামালী, সহ-সাধারণ সম্পাদক রুকন হাকিম, প্রচার ও দফতর সম্পাদক ফয়সাল আলম, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক জাহিদ আহমেদ খান, ক্রীড়া সম্পাদক মান্না মুনতাসির, আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হোসেন আহমেদ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুতপা চৌধুরী, কার্যকরি সদস্য (সিলেট জেলা) হেলিম উদ্দিন, কার্যকরি সদস্য (মৌলভীবাজার জেলা) মিজানুর রহমান, কার্যকরি সদস্য (হবিগঞ্জ জেলা) এমডি মানিক, কার্যকরি সদস্য (সুনামগঞ্জ জেলা) শামীম আহমেদ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে মনোনয়নপত্র জমা এবং এখন পর্যন্ত সব কাজ সম্পন্ন করার জন্য সকল প্রার্থী ও সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন এরকম সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনটি সুসম্পন্ন হবে সকলের সহযোগিতায়।

এ সময় উপস্থিত দুই সভাপতি পদপ্রার্থী তাদের বক্তব্যে বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপে এবং শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের সহযোগিতা তারা নির্বাচন কমিশনকে করবেন। কমিশনও যেন সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় সর্বোচ্চ নিরপে ভ‚মিকা পালন করেন।

শেয়ার করুন