২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৩:৬ পূর্বাহ্ন


কারা মন্ত্রণালয়গুলোকে লুটপাটের অভয়ারণ্য করেছে?
বাংলাদেশের জন্য অশনিসঙ্কেত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
বাংলাদেশের জন্য অশনিসঙ্কেত


অশনি নামের প্রাকৃতিক দুর্যোগটি বাংলাদেশকে হাতছানি দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু ক্রমাগত ঘনীভূত হতে থাকা অর্থনৈতিক এবং জ্বালানি সংকট আরেক অশনিসঙ্কেত দিচ্ছে। দেখলাম, অনেক দেরিতে হলেও বোধোদয় হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। করোনা অতিমারীর অভিঘাতের পর,ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা, জ্বালানি সংকট সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা দৃশ্যমান হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। সরকারি অর্থ খরচে সরকারি কর্মকর্তাদেরযথেচ্ছ বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করা হয়েছে।

শাসকদলের অন্যতম প্রধান নেতা সেতু ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতা বা তাদের স্বজনদের বিদেশে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার পরেই ভারতে গ্রেফতার হয়েছে লুটেরা অর্থপাচারকারী পিকে হালদার। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সকল মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করা হয়েছে যেন প্রধানমন্ত্রী বা তার স্বজনদের নাম ভাঙিয়ে কেউ যেন কোনো ধরনের বাড়তি সুবিধা নিতে না পারে।

বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের, বিভাগ,সাংসদরা অকারণে,অপ্রয়োজনে যথেচ্ছ বিদেশ ভ্রমণ করে জনগণের কষ্টার্জিত  বিদেশি মুদ্রা অপচয় করেছেন। মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখেছি হাস্যষ্কর কাজেও বিদেশে এসেছে আমলা, সরকার-ঘনিষ্ঠ জন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এদের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত বোধোদয় হলোযখন বৈষয়িক কারণে বৈদেশিক মুদ্রা তহবিলে ভাটির টান লেগেছে। আমি নিজে অস্ট্রেলিয়ায় কিছু ট্রেনিং প্রোগ্রামে সংযুক্ত থেকে দেখেছি গ্যাস সেক্টর থেকে এবং অন্যান্য সেক্টর থেকে কীভাবে প্রশিক্ষণ সুবিধা অপচয় হয়েছে। আমি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের অনুরোধ করবো ২০০১০-২০২১ পর্যন্ত কতজন সরকারি কর্মকর্তা কি কারণে জ্বালানি সেক্টর থেকে প্রশিক্ষণ, সেমিনার বা নিতান্ত প্রমোদ ভ্রমণে এসেছে। এক্সেস টু ইনফরমেশনের আওতায় একটি চাওয়া যেতেই পারে। আমি জ্বালানি বিটের সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করবো জ্বালানি সেক্টরের তথ্য সংগ্রহ করে জনগণকে জানাতে। না বলে পারছি না এই কাজে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আমলা একসময় পেট্রোবাংলায় চেয়ারম্যান হয়েছিল।বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতৃতীয় টার্মের শেষ সময় এসে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কতটুকু সাশ্রয় করবে? এইতো সেদিন যারা নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে এসেছিল, তাদের সবার কি দায়িত্ব ছিল?

সড়ক পরিবহনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুঁশিয়ারি দিলেন ফরিদপুরে দলীয় সম্মেলনে সংযুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অর্থপাচার চলবে না।এর অর্থ হচ্ছে- তিনি জানেন। কারা এরা? কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এগুলো এতোদিন চলেছে? আরো শুনলাম, প্রধানমন্ত্রীর স্বজনদের কথা বলে চাঁদাবাজি বা অনৈতিক সুবিধা নেয়া হয়েছে। ফরিদপুরের আওয়ামী লীগ সম্মেলনে সংযুক্ত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারিদলের নেতার কথা আমলে নিতেই হচ্ছে।কারণ ফরিদপুরের একজন প্রাক্তন মন্ত্রী, তার পরিবার এখন কোণঠাসা।দেশ-বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন আইনের আওতায় এসেছে। 

আমি জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবনমরণ চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে। কিন্তু কিছু বিশেষ সুবিধাভোগী মানুষব্যাংক, বীমা, ব্যবসা লুটপাট করছে। কারা মন্ত্রণালয়গুলোকে লুটপাটের অভয়ারণ্য করেছে? প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভাবমূর্তিতে করা কালিমা লেপনের চেষ্টারত।কিছু মানুষ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, দুবাই, কানাডা, আমেরিকা,লন্ডন,অস্ট্রেলিয়ায় মুদ্রাপাচার করে সম্পদের পাহাড় করেছে। আমি দেশে প্রবাসে স্বাধীনতার সপক্ষেরসবাইকে দল-মতনির্বিশেষে চোরদের মুখোশ উন্মোচনের আহ্বান জানাচ্ছি। আজ ভারতের মিডিয়ায় পিকে হাওলাদারের দুর্নীতির যে ফিরিস্তি দেখছি এটি সম্ভব হয়েছে দেশের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতার কারণে। এমন আরো অনেকেই এমন দুর্নীতি করেছে যার বিস্তারিত তথ্যাবলি বিদেশি মিডিয়ার কাছেও আছে। সরকার সক্রিয় হয়ে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

পরিশেষে বলি খোদ অর্থমন্ত্রীর মন্ত্রণালয় বা আওতাধীন বিভাগগুলো থেকে গত ৫ বছরে কত মানুষ বিদেশ সফর করেছে এবং কেন, তার তালিকা জনগণ জানার অধিকার আছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সকল মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত উপদেশ পত্রে তাঁর বা তাঁর পরিবারের দোহাই দিয়ে বিশেষ সুবিধা নেয়ার অপপ্রয়াস বিষয়ক কানাঘুষার বিষয়টিও স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন। ফরিদপুরের প্রভাবশালী পরিবারটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান আছে।

আরেকটি বিষয় জ্বালানি বিদ্যুৎ সাশ্রয়। বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে তরলজ্বালানি, ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, এলপিজি, এলএনজি,কয়লার মূল্য আকাশের সীমানায় থাকবে অনির্দিষ্টকাল। বাংলাদেশকে সকল প্রকারে সাশ্রয় করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল যানবাহনে যাতায়াত সীমিত করতে হবে। নতুবা যানবাহন ক্রয় বন্ধ করতে হবে। সিস্টেম লসের নাম যথেচ্ছাচুরি,অপচয় রোধ করতে হবে।

সার্বিকভাবে সর্বস্তরে কৃচ্ছ্রতাসাধন এবং দুর্নীতি নির্মূল করে সাশ্রয় করে বাংলাদেশকে ঘনায়মান আর্থিক সংকট মোকাবিলা করতে হবে। এমনিতেই নানা কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় কমছে। বাণিজ্যিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।২০২৫ থেকে মেগা প্রকল্পসমূহের ঋণ পরিশোধ শুরু হলে কিছুটা হলেও সংকট সৃষ্টি হবে। এমতাবস্থায় সরকারের বোধোদয় শুভলক্ষণ।


শেয়ার করুন