২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৩৮:৩৭ পূর্বাহ্ন


বাইডেনের ভবিষ্যৎ
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন?
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৫-২০২২
যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন?


জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার দুই বছর পর ভোটাররা আগামী ৮ নভেম্বর এক মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট দেবেন।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চার বছর মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে যেহেতু এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেহেতু একে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলা হয়।

কারা নির্বাচিত হন?

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন ৫৩৫ জন আইন প্রণেতা, যারা কংগ্রেস সদস্য হিসেবে পরিচিত।কংগ্রেসের আছে দুটি কক্ষ- সিনেট এবং হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস। আইন তৈরির জন্য কংগ্রেসের এই দুটি কক্ষ একসঙ্গে কাজ করে।

সিনেট হচ্ছে কংগ্রেসের ১০০ সদস্যের উচ্চ কক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্য, তাদের আকার যাই হোক, দুজন করে সিনেট সদস্য নির্বাচিত করে। সিনেটররা নির্বাচিত হন ছয় বছর মেয়াদের জন্য। প্রতি দুই বছর পর পর সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনের জন্য নির্বাচন হয়।

হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে (যাকে সংক্ষেপে হাউজ বলা হয়) সদস্য আছেন ৪৩৫ জন। প্রত্যেক সদস্য তাদের অঙ্গরাজ্যের একটি নির্দিষ্ট ডিস্ট্রিক্ট বা জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা দুই বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। কাজেই দুই বছর পর পর হাউজের সবগুলো আসনের জন্যই নির্বাচন হয়।

এবারের নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বর্তমানে কংগ্রেসের সব সদস্য হয় ডেমোক্রেটিক পার্টি বা রিপাবলিকান পার্টি থেকে আসা। ডেমোক্রেটরা এখন কংগ্রেসের দুটি কক্ষেরই নিয়ন্ত্রণে, তবে তাদের এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই অল্প ভোটে। সে কারণে এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষে কাজ করতে তেমন কোন অসুবিধা হয়নি।কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচনে যদি রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেসের কোনো একটি কক্ষে বা উভয়কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায়, তখন তারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে কোনো পরিকল্পনা বানচাল করে দিতে পারবেন।

নভেম্বরে যে নির্বাচন হবে, সেখানে রিপাবলিকানরা হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে তাদের পাঁচটি অতিরিক্ত আসন জিততে হবে। সিনেটে এই প্রতিদ্বন্দি¦তা হবে আরও তীব্র। বর্তমানে ১০০ সদস্যের সেনেটে দুই দলেরই ৫০ জন করে সদস্য।কিন্তু ডেমোক্রেটরা সিনেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কারণ কোন ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে সমান সমান ভোট পড়লে তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস হারজিত নির্ধারণের জন্য তার ভোট প্রয়োগ করতে পারেন।নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য রিপাবলিকানদের মাত্র একটি বাড়তি আসন জিততে হবে। সিনেটের যে আসনগুলোতে এবার নির্বাচন হবে, সেখানে কারা প্রার্থী হবেন, তা নির্ধারণের জন্য প্রাইমারি নির্বাচন হবে মে হতে সেপ্টেম্বরের মধ্যে।

যেসব আসনের দিকে নজর থাকবে

১. টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মেহমেত অজ, যিনি ড. অজ নামে পরিচিত, তিনি এবার পেনসিলভানিয়া থেকে রিপাবলিকান সেনেটর নির্বাচিত হবেন বলে আশা করছেন। ২. রিপাবলিকান জে ডি ভ্যান্স, যার লেখা ‘হিলবিলি এলিজি’ নামের আত্মজীবনী বেস্টসেলার হয়েছে, তিনি ওহাইও অঙ্গরাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ডেমোক্রেট টিমোথি রায়ানের বিরুদ্ধে। ৩. সাবেক নাসা মহাকাশচারী এবং নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মার্ক কেলি অ্যারিজোনা থেকে ২০২০ সালে রিপাবলিকান প্রার্থীকে হারিয়েসিনেটে নির্বাচিত হন। এই আসনটি শূন্য হয়েছিলে রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইনের মৃত্যুর পর। এবার এটিতে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে তিনি আবার দাঁড়াচ্ছেন তার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য।

কারা জিততে পারে?

আগের ইতিহাসে দেখা যায়, সাধারণত যে দল হোয়াইট হাউসে থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে খারাপ ফল করে।কাজেই রিপাবলিকানরা তাদের আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে এরকম ইঙ্গিত আছে।তাছাড়া এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জনপ্রিয়তা কম। তার প্রতি সমর্থন গত আগস্ট মাস থেকেই ৫০ শতাংশের নিচে আটকে আছে। এর ফলে ডেমোক্রেট প্রার্থীদের সমর্থনে ভাটা পড়তে পারে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য এসবের মানে কী দাঁড়াবে

কংগ্রেসে এখনই যে কোনো বিল পাস করাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সব ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতার সমর্থন দরকার হয়। অনেক সময় সেটাও যথেষ্ট হয় না।রক্ষণশীল ডেমোক্রেটরা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ঠেকিয়ে দিয়েছে। এর একটি ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ট্রিলিয়ন ডলারের ‘বিল্ড ব্যাকব্যাটার’প্রকল্প, যেটিতে নানারকম সামাজিক কর্মসূচি এবং জলবায়ুর পরিবর্তন প্রতিরোধে কার্যক্রম গ্রহণের কথা ছিল।মধ্যবর্তী নির্বাচনে যদি ডেমোক্রেটরা বিপুল পরাজয়ের মুখে পড়ে, তখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে নতুন আইন পাস করানো আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

কয়েকজন রিপাবলিকান এরই মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের কাজ-কর্ম গভীরভাবে তদন্ত করে দেখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে।এর মানে হচ্ছে, আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে যে বিপর্যয় তৈরি হয়েছিল, সেই ঘটনা থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের নানা কথিত কেলেঙ্কারি নিয়েও তদন্ত শুরু হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে ৬ জানুয়ারি যে হামলা হয়েছিল, তারপর থেকে দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের নাটকীয় অবনতি ঘটে।জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নানা ব্যবস্থা, মাস্ক পরার বিধি- এসব নিয়ে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভেদ আরো বেড়েছে।ওয়াশিংটনে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ যদি ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়, তখন সেখানে আরো শত্রুতা এবং নাটকীয়তা তৈরি হতে পারে।

এরপর কী ঘটবে?

মধ্যবর্তী নির্বাচন যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন সবার নজর ঘুরে যাবে ২০২৪ সালের প্রেেিডন্ট নির্বাচনে দিকে।এটা হয়তো ২০২০ সালের লড়াইয়ের পুনরাবৃত্তি হতে পারে, কারণ প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প- দুইজনেই বলছেন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ভাবছেন।

৮ নভেম্বর কংগ্রেসের আসন ছাড়াও ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৩৬টি গভর্নর পদেও নির্বাচন হবে। এই ৩৬টির মধ্যে এখন ২০টি রিপাবলিকানদের দখলে।


শেয়ার করুন