২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


অধিকারের নিবন্ধন বাতিলে জাতিসংঘের উদ্বেগ: এটা ভয়ঙ্কর আগ্রাসন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২২
অধিকারের নিবন্ধন বাতিলে জাতিসংঘের উদ্বেগ: এটা ভয়ঙ্কর আগ্রাসন অধিকারের লোগো


মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর নিবন্ধন নবায়ন না করায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ নিয়ে গত ১০ জুন জেনেভায় একটি বিবৃতি দিয়েছেন সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। এছাড়া অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করায় বাংলাদেশ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছে অধিকারের নিবন্ধন নবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। জেনেভায় রাভিনা বলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অবশ্যই জাতিসংঘকে সহযোগিতা করায় নিরুত্সাহিত করা যাবে না। বাংলাদেশ সরকার অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই যাতে এই সিদ্ধান্ত এখনই পুনরায় বিবেচনায় আনা হয়। তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সাল থেকেই অধিকার ভয়ভীতি এবং প্রতিহিংসার শিকার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এর কার্যক্রমের পেছনে নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘকে সহায়তা করায় অধিকার গত এক দশক ধরে যে প্রতিশোধের শিকার হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ জানান রাভিনা। 

এছাড়া অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন না করা নিয়ে আলাদা আলাদা বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। পাশাপাশি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে স্বার করেছে মোট ১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। অধিকারের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এমন সিদ্ধান্তের অর্থ হচ্ছে, মানবাধিকার রায় যারা কাজ করে তাদের কণ্ঠ রোধ এবং ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা চলছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সম্পর্কে তথ্য রাখা এর বিচারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অ্যামনেস্টি আরো বলেছে, মানবাধিকার রায় বাংলাদেশের রেকর্ড খুব দুর্বল। আর এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। মানবাধিকার নিয়ে তথ্য প্রকাশ করার কারণে ‘অধিকারের’ নিবন্ধন নবায়ন না করার বিষয়টিকে হাস্যকর বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি। অ্যামনেস্টির দাবি, অধিকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে তাই সরকার সংগঠনটির ওপরে ক্ষুব্ধ। অবিলম্বে সংগঠনটির কাজের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। 

সংস্থাটির দণি এশিয়া বিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে অপরাধীদের তাদের অপরাধের জন্য চিহ্নিত করার জন্য অধিকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছে। কিন্তু এই রিপোর্টের কারণে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ায় অধিকারের নিবন্ধন ৮ বছর আটকে রাখার পর বাতিল করে দেয়া অযৌক্তিক। অধিকারের বিরুদ্ধে এমন প্রতিশোধ বাংলাদেশের মানবাধিকারের রকদের স্তব্ধ এবং সাবধান করে দেয়ার এক জঘন্য এবং নির্লজ্জ চেষ্টা। তিনি আরও বলেন, সরকার বা রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে ধরনের তথ্য বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রকাশ করে, সেই অভিযোগগুলোকে যথাযথ এবং নিরপে তদন্তের মাধ্যমে জনসমে তুলে ধরা। অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করার অর্থ হলো মানবাধিকার এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি একটি ভয়ঙ্কর আগ্রাসনের লণ। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে অধিকারসহ অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার আহ্বান জানান। সাদ হাম্মাদি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে রিপোর্ট করা মোটেই সরকারবিরোধী কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়। 

এদিকে ৯ জুন নিজেদের ওয়েবসাইটে একই ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা দাবি করেছে, বাংলাদেশ সরকারকে তাত্ক্ষণিকভাবে অধিকারের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। ওই বিবৃতিতে স্বার করেছে অন্য আরো ১১টি সংগঠন। তারা বলছে, কর্তৃপকে অবশ্যই প্রতিহিংসা, ভয়-ভীতি এবং হেনস্তা ছাড়াই মানবাধিকারকর্মীদের কাজ করতে দিতে হবে। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে জানানো হয়, ১৯৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশে কাজ করছে অধিকার। ২০১৪ সাল থেকেই নিবন্ধন আটকে ছিল সংগঠনটির। মানবাধিকার সংস্থাটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে অধিকারের সদস্য এবং তাদের পরিবারকে নজরদারিতে রেখেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। বাংলাদেশ সরকার এর আগেও অধিকারের সদস্যদের কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করেছে। ২০১৩ সালে অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে স্বেচ্ছাচারী ভাবে যথাক্রমে ৬২ দিন এবং ২৫ দিন আটকে রেখেছিল।

বিবৃতিতে দাবি জানানো হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপকে অবিলম্বে অধিকারের নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে। তাদেরকে প্রতিহিংসার মুখোমুখি হওয়া ছাড়াই কাজ করতে দিতে হবে এবং তাদের রিপোর্টকে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে দেখে স্বাগত জানাতে হবে। ওই বিবৃতিতে স্বার করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো হচ্ছে- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যান্টি-ডেথ পেন্টালি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজেপিয়ারেন্সেস, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট, ইলিয়স জাস্টিস, হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন এগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজেপিয়ারেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার।

শেয়ার করুন