১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৫৯:৪৫ পূর্বাহ্ন


এন্টিগায় দ্বায়িত্বশীল ব্যাটসম্যানে নাজেহাল টেষ্ট
এ কেমন ব্যাটিং?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৬-২০২২
এ কেমন ব্যাটিং? বল ছেড়ে দিয়েও অসহায়ভাবে তাকিয়ে আম্পায়ারের দিকে। সোহানের শেষ রক্ষা হয়নি শেষ পর্যন্ত/ছবি সংগৃহীত


টেস্ট সিরিজের নাম দেয়া হয়েছে বাংলাদেশী জাতির অহংকারের প্রতীক পদ্মা সেতু। আশা ছিল, গর্জে উঠবে টিম টাইগার্স। কিন্তু এন্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস করে ব্যাট করতে নেমে রোচ, জোসেফ, সিল্স আর মায়ারের গতির ঝড়ে বিপর্যস্ত হলো বাংলাদেশ। ৩২.৫ ওভারেই ১০৩ রানে প্রথম ইনিংস সঙ্গে হলো।  ৬ জন ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারেনি।

৮ জন ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত সংগ্রহ ১১ রান. নতুন দফায় অধিনায়কত্ব পেয়ে সাকিব প্রতিআক্রমণ করে ৫১ রান করে তবুও মুখ রক্ষা করেছে। তামিম ২৯ ইনিংস বড় করতে পারে নি।

দিন শেষে মুস্তাফিজ ,এবাদত ,খালেদদের ভালো বোলিং সত্ত্বেও মাটি কামড়ে উইকেটে থেকে ৯৫/২ শেষ করেছে স্বাগতিকরা। ম্যাচটি অনেকটাই ওদের নিয়ন্ত্রণে এখন। প্রথম ইনিংসে বড় ব্যাবধানে এগিয়ে গেলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পর্বে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই এখণ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ দলের এ কেমন ব্যাটিং।

এ বছরেই দক্ষিন আফ্রিকায় দুইম্যাচের দুই ইনিংসে ১০০ এর নীচে অলআউট হওয়া দল আবারও দেশের বাইরের এক সফরে যেয়েই এমন অবস্থা?বিস্ময়ের ঘোর তো কাটছে না, এটা কী বাংলাদেশ দল? প্রায় দুই যুগ ধরে যারা খেলছে টেষ্টম্যাচ? 


উইকেটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে সবুজ ঘাসের আস্তরণ ছিল। ময়েশ্চার থাকায় এবং এমন উইকেটে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের আনাড়িপনার কথা মাথায় রেখে টস জিতেও বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ক্রেগ ব্রাফেট।  জানিনা খেমার রোচকে দেখেই ঘাবড়ালো কিনা। ২০১৮ সফরে এই উইকেটে রোচ একই বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিয়েছিলো। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪৩ রানে অল আউট হয়েছিল। প্রথম বলে শরীর থেকে বহুদূরে বেরিয়ে যাওয়া বল খেলতে চেষ্টা করে গোল্ডেন ডাক পেলো জয়। সংক্ষিপ্ত টেস্ট ক্যারিয়ারে কয়েকটি ভালো ইনিংস আর বেশ কিছু শুন্য রানের ইনিংস।  টেকনিকে বেশ গলদ আছে। শান্তকে কেন বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট এতো সুযোগ দেয় জানিনা। তবে কাল রোচের যে বালতি ওর ব্যাট পদের দুয়ার গলে স্ট্যাম্পে গত করে সেটি ছিল চমৎকার একটি বল। রোচের ভূমিকা দেখে আবারো শঙ্কা জাগছিল বাংলাদেশের স্বল্প রানে গুটিয়ে যাবার। অন্যপ্রান্তে ভালো বাট করছিলো তামিম। অনেকে আশা করেছিল, দলনায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে মুমিনুল নিজেকে ফিরে পাবে।  হলো সেটি?


 জেইডেন সিল্স ওকে ফেরালো শুন্য রানে। প্রথম ঘন্টায় ১৫/৩ অবস্থায় বাংলাদেশের বিপদ ঘন্টা বেজে গেলো। লিটনকে প্রমোশন দিয়ে  ৫ নাম্বরে হয়েছিল মুশফিকের শুন্য স্থানে। কিন্তু ভালো খেলতে থাকা তামিম ছটফট করতে করতে জোসেফের করা লেগ স্ট্যাম্পের নিশানার বলে আউট হয়ে দলের ভরাডুবি ত্বরান্বিত করলো। জোসেফ আর সিল্স সবে পাকিস্তান থেকে ফিরেছে।  হয়তো ব্যাডলাক ছিল। তাই ওদের বিশ্রাম দিতে যেই না মায়ার্সকে আক্রমনে আনতেই উড়ে গেলো লিটন আর নুরুল হাসান। ৪৫/৬ উইকেট হারিয়ে দেয়ালে পিঠ রেখে সাকিব মেরাজ যা কিছু যুদ্ধ করেছে। ওদের জুটিতে সংগ্রহীত ৩২ রান ইনিংসের সর্বোচ্চ। প্রতি আক্রমণ করে সাকিব বিপদ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ওর ৫৭ বলে ৫১ রান শুধু দলের সংগ্রহ ১০৩ রানে পৌঁছে যেতেই সাহায্য করেছে। সিল্স , জোসেফের যৌথ যোগাযোগে লেজের ব্যাটসম্যানরা রুখে দাঁড়াতে পারে নি। টেস্ট ক্রিকেটে একটি দল যদি বার বার ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে তাহলে ব্যাটসম্যানদের মৌলিক কৌশল এবং কমিমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন জাগবেই। ৩২.৫ ওভার ব্যাটিং করে ১০৩ করা কোনো দল কত ব্যাবধানে টেস্ট হারবে সেটিই তখন আলোচি হতে পারে।


যাহোক বাংলাদেশ বোলাররা কিন্তু ভালো বোলিং করে স্বাগতিক দলকে রান তুলতে কষ্ট দিয়েছে। মুস্তাফিজ শুরুতেই ব্রাফেটকে ফিরিয়ে দিতে পারতো যদি লেগ স্লিপে মোমিনুল সহজ ক্যাচ ফেলে না দিতো। এবাদত, খালেদ, মিরাজ,সাকিব সবাই ভালো বোলিং করেছে। লিটন দুই বার একটু কঠিন ক্যাচ নিতে চেষ্টা করেও পারেনি। দিন শেষে ৯৫/২ অবস্থানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ রানে পিছিয়ে। দ্বিতীয় দিনে ওদের ইনিংস যত শীঘ্র সম্ভব শেষ করতে হবে। ১৫০ বা তার বেশি লিড নিলে এই টেস্টে বাংলাদেশের কি পরিণতি হবে ভেবে লাভ নেই। তবে আশার কথা উইকেটে ব্যাট করা সহজ হয়ে আসছে। বাংলাদেশের অবশ্য ব্যাটিং বিভ্রাটের জন্য উইকেট আর পরিবেশের প্রয়োজন হয় না। এমনিতেই তাসের ঘরের মতো ঝরে পরে। রাত জেগে কষ্ট করে তবুও দেখি বাংলাদেশের খেলা আহত পাখির বেদনা নিয়ে।


শেয়ার করুন